উত্তরঃ ‘বিপ্লব’ বলতে বোঝায় কোনো প্রচলিত ব্যবস্থা বা অবস্থার
অতি দ্রুত ও কার্যকরী পরিবর্তন।
২. ‘আমিই রাষ্ট্র’ –কথাটি কে বলেছেন ?
উত্তরঃ ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই ।
৩. কাকে ‘প্রজাপতির রাজা’ বলা হয় ?
উত্তরঃ পঞ্চদশ লুই-কে ।
৪. কে ফ্রান্সকে ‘রাজনৈতিক কারাগার’ বলেছেন ?
উত্তরঃ দার্শনিক ভলতেয়ার ।
৫. ‘পুরাতনতন্ত্র’ বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে সারা ইউরোপে যে রাজনৈতিক, সামাজিক
ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, সাধারণভাবে তা ‘পুরাতনতন্ত্র’ নামে পরিচিত ছিল।
৬. প্রত্যক্ষ করগুলি কী কী ছিল ?
উত্তরঃ প্রত্যক্ষ করের মধ্যে ছিল- টেইলি বা ভূমিকর, ক্যাপিটেশন
বা উৎপাদনভিত্তিক আয়কর, ভ্যাঁতিয়েম বা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ওপর আয়কর।
৭. ‘করভি’ কী ?
উত্তরঃ রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য তাদের বাধ্যতামূলকভাবে
বেগার খাটতে হতো। এই বাধ্যতামূলক শ্রমিকদের নাম ছিল ‘করভি’।
৮. কে ফ্রান্সকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির যাদুঘর’ বলেছেন ?
উত্তরঃ অ্যাডাম স্মিথ।
৯. ফ্রান্সের জনসাধারণ ক’টি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল ?
উত্তরঃ ফ্রান্সের জনসাধারণ তিনটি সম্প্রদায় বা ‘এস্টেট’-এ
বিভক্ত ছিল । (১) যাজকরা –প্রথম সম্প্রদায় (২) অভিজাতরা – দ্বিতীয় সম্প্রদায় (৩) মধ্যবিত্ত,
ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষকসহ দেশের সব সাধারণ মানুষ – তৃতীয় সম্প্রদায়।
১০. যাজকরা ক’টি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল ও কী কী ?
উত্তরঃ দুটি শ্রেণীতে – (১) উচ্চতর যাজক – বিশপ, ক্যানন ও
মঠাধ্যক্ষরা (২) নিম্নতর যাজক – সাধারণ গ্রামীণ পাদরিরা।
১১. ‘বুর্জোয়া’ কথাটির অর্থ কী ?
উত্তরঃ ‘বুর্জোয়া’ বলতে সাধারণভাবে পুঁজিপতি বা ধনতান্ত্রিক
শ্রেণি বোঝায় ।
১২. ‘বার্গার’ কাদের বলা হত ?
উত্তরঃ মধ্যযুগে যারা বার্গ বা শহরের উপকন্ঠে বসবাস করে ব্যবসা-বাণিজ্য
ও শিল্প-কারিগরি কাজকর্ম দ্বারা জীবিকা অর্জন করত, তাদের বলা হত ‘বার্গার’ বা ‘বার্জেস’।
১৩. ‘বুর্জোয়া’ কথাটির উৎপত্তি কোন্ কথাটি থেকে ?
উত্তরঃ বার্জেস কথাটি থেকে।
১৪. ‘দি স্পিরিট অব লজ’ (The Sprit of Laws) গ্রন্থটি কার রচিত ও কত খ্রিস্টাব্দে
প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ মন্তেস্কু রচিত । ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
১৫. ‘কাঁডিড’ ও ‘ফিলেজফিক্যাল লেটার্স’ গ্রন্থটি কার লেখা ?
উত্তরঃ ভলতেয়ার –এর ।
১৬. ‘বিশ্বকোষ’ ক’টি খন্ডে প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ ৩৫ টি খন্ডে।
১৭. কে গির্জাকে ‘বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত উৎপাত’ বলেছেন ?
উত্তরঃ ভলতেয়ার।
১৮. ‘দ্য সিটিজেন’ গ্রন্থটি কার লেখা ?
উত্তরঃ সাইমন স্যামা।
১৯. ‘আইনের মর্ম’ গ্রন্থটি কার লেখা ?
উত্তরঃ মন্তেস্কু।
২০. ‘হেলোয়েজ’ ও ‘এমিল’ গ্রন্থটি কার লেখা ?
উত্তরঃ রুশো –র।
২১. কোন্ করকে ‘গাবেল’ বলা হত ?
উত্তরঃ লবণকর –কে ।
২২. অভিজাত বিদ্রোহ বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ অর্থনৈতিক সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে
ফরাসি রাজা যযাড়শ লুই ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে দেশের সমস্ত প্রাদেশিক পার্লামেন্ট মুলতুবি
করেন এবং সকল সম্প্রদায়ের থেকে কর আদায়ের উদ্যোগ নেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুবিধাভোগী
অভিজাতশ্রেণি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই ঘটনা অভিজাত বিদ্রোহ’ বা অভিজাত
বিপ্লব’ নামে পরিচিত।
২৩. টীকা লেখো :
অভিজাত বিদ্রোহ ।
অথবা, অভিজাতরা কেন বিদ্রোহ করেছিল ?
উত্তরঃ
ষোড়শ লুই ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা হওয়ার পর লক্ষ করেন যে, ফ্রান্সের
রাজকোশ একেবারে শূন্য হয়ে পড়েছে। তিনি তুর্গো, নেকার, ক্যালোন, ব্রিয়া প্রমুখ
অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করে এই আর্থিক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করলে অভিজাতরা রাজার
বিরোধিতা করেন।
প্রেক্ষাপট : অভিজাতদের
বিরোধিতার ফলে রাজা বাধ্য হয়ে তাদের হাত থেকে আইন এবং কর সংক্রান্ত অধিকার কেড়ে
নেন। এর ফলে ফ্রান্সের নানা স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়।
(ক) অভিজাতরা
অর্থমন্ত্রী ব্রিয়ার কর আদায় সংক্রান্ত কয়েকটি প্রস্তাব মেনে নিলেও স্ট্যাম্পকর
ও ভূমিকরের প্রস্তাব বাতিল করে দেন। তারা দাবি করেন যে, একমাত্র স্টেট জেনারেলের
কর আরোপের অধিকার আছে।
(খ) ষোড়শ
লুই পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যের আচরণে উত্যক্ত হয়ে নিজের ভাই ডিউক অফ
অর্লিয়েন্স-সহ তিনজন সদস্যকে নির্বাসিত করেন। এতে পার্লামেন্ট ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে
এবং অভিজাতরা রাজার বিরুদ্ধে কয়েকটি আইন পাস করে ইচ্ছামতো নাগরিকদের গ্রেফতার,
বিচারকদের অপসারণ প্রভৃতি বিষয়ে রাজার ক্ষমতা কেড়ে নেয়।
(গ) পার্লামেন্টের
আইনে ক্ষু বন্ধ হয়ে রাজা সমস্ত প্রদেশের পার্লামেন্টগুলি মুলতুবি করেন এবং ৫৭টি
নতুন বিচারালয় স্থাপন করে নিজের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলিকে আইনে পরিণত করেন।
বিদ্রোহের
সূচনা : রাজা পার্লামেন্ট মুলতুবি করলে তার বিরুদ্ধে
অভিজাতরা বিদ্রোহ শুরু করে দেন। রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহে শীঘ্রই যাজক ও
বুর্জোয়ারাও শামিল হন। ফলে অভিজাত বিদ্রোহ গণবিদ্রোহের আকার ধারণ করে।
পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক সভা এই বিদ্রোহকে সমর্থন জানায়। এই অভিজাত বিদ্রোহ থেকেই
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের সূচনা হয়।
গরত্ব :
বুরবোঁ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি
ঘটনা। রাজা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের কাছে -
(ক) এই
অভ্যুত্থানে সুবিধাভোগী শ্রেণি রাজার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। বুর্জোয়াদের সমর্থনে
অভিজাত বিদ্রোহ রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
(খ) অভিজাত
বিদ্রোহের চাপে রাজা স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হন। ফলে রাজার
স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের মর্যাদায় আঘাত লাগে।
(গ) রাজার
ঐশ্বরিক ক্ষমতা ও স্বৈরতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক লেফেভর
(Lefebvre) অভিজাত বিদ্রোহকে অভিজাত বিপ্লব’ বলেছেন। এ কথা সত্য যে, বিদ্রোহের
প্রথম পর্যায়ে অভিজাতরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের হাত থেকে বিদ্রোহের
নেতৃত্ব প্রথমে বুর্জোয়াদের হাতে এবং পরে সাকুলোৎ ও কৃষক শ্রেণির হাতে চলে যায়।
২৪. ফরাসি
বিপ্লব কবে সংঘটিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই।
২৫. কার আমলে ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল ?
উত্তরঃ
ষোড়শ লুইয়ের আমলে ।
২৬. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ
মন্তেস্কু।
২৭. টেনিস কোর্টের শপথ কবে অনুষ্ঠিত হয় ?
উত্তরঃ ১৭৮৯
খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন।
২৮. "আমি যা ইচ্ছা করি তা-ই আইন"- কথাটি কে বলেছিল ?
উত্তরঃ পঞ্চদশ লুই।
২৯. টাইথ কী ?
উত্তরঃ
প্রাক-বিপ্লব ফ্রান্সে টাইথ ছিল ধর্মকর।
৩০. বাস্তিল দুর্গের পতন কবে হয় ?
উত্তরঃ
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই।
৩১. মন্তেস্কুর
লেখা দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ
"স্পিরিট অফ দি লজ" এবং "দ্য পার্সিয়ান লেটার্স"।
৩২. 'এস্টেট' বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজব্যবস্থায় তিনটি পৃথক
সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল। এক-একটি সম্প্রদায়কে 'এস্টেট' বলা হত।
৩৩. ফ্রান্সকে
'রাজনৈতিক কারাগার' বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সে ‘লেতর দ্য
ক্যাশে' নামক এক ধরনের রাজকীয় গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রচলিত ছিল। এর মাধ্যমে যে-
কোনো ব্যক্তিকে বন্দি করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন কারাগারে অথবা বাস্তিল দুর্গে আটকে
রাখা যেত। এই কারণেই দার্শনিক ভলতেয়ার ফ্রান্সকে ‘রাজনৈতিক কারাগার’ বলে অভিহিত
করেছিলেন। তাঁকেও বন্দিরূপে বাস্তিল দুর্গে আটকে রাখা হয়েছিল।
৩৪. কারা
‘প্যাট্রিয়টিক পার্টি' গঠন করেন ?
উত্তরঃ মিরাবো, লাফায়েৎ, আবে সিয়েস প্রমুখ উদারপন্থী অভিজাতরা
তৃতীয় সম্প্রদায়ে যোগ দিয়ে ‘প্যাট্রিয়টিক পার্টি’ গঠন করেন ।
৩৫. ফ্রান্সকে
ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ
ফ্রান্সের আর্থিক অবস্থা ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। ফ্রান্সের
রাজস্বব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তা ছাড়া সরকার অমিতব্যয়িতা, বিলাসিতা,
ব্যয়সংকোচে অনিচ্ছা, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি। ফ্রান্সের পরিস্থিতিকে ভয়ংকর করে
তুলেছিল। এইসব কারণে বিশ্ব অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith) তৎকালীন
ফ্রান্সকে ভ্রান্ত। অর্থনীতির জাদুঘর’ (Museum of Economic Errors) বলেছেন।
ত্রুটিপূর্ণ
করব্যবস্থা : (ক) ফ্রান্সে কর আদায়ের
ক্ষেত্রে কোন ন্যায়সংগত নীতি ছিল না। অভিজাত ও যাজকরা ছিলেন ফ্রান্সের বেশিরভাগ
জমির মালিক। অথচ তারা কর দিতেন সরকারের আয়ের মাত্র ৪%। আর মাত্র রাজস্বের ৯৬%
দিতে হত দরিদ্র কৃষকদের।
(খ) সরকারের
বাইসাৰি অন্যাফ্রান্সের রাজাদের বেহিসাবি অর্থব্যয়ের ফলে ফ্রান্সের অবথা শোচনীয়
হয়ে পড়েছিল।
(গ) যুণনীতির
অযৌক্তিকতা। চতুর্দশ লুই ও পদশ লুইয়ের 'আমল বিভিন্ন যুদ্ধে যােগদানের ফলে
ফ্রান্সের প্রচুর অর্থব্যয় হয়েছিল, যা ফরাসি অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়।
বাজকোশে সংকট । উপরোক্ত কারণে বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সের রাজকোশে সংকট দেখা যায়। ষোড়শ
লুইয়ের সময়ে তুর্গো, নেকার প্রমুখ অর্থমন্ত্রী অভিজাতদের বিরোধিতায় আর্থিক
সমস্যা সমাধানের কাজটি সঠিকভাবে করতে না পারায় রাজকোশ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে।
অর্থনৈতিক
সংকটঃ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদির ফলে।
প্রাক্-বিপ্লব
পর্বে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে
শস্যহানি ঘটলে এই সংকট আরও প্রবল হয় ফ্রান্সের এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় কালক্রমে
ফরাসি বিপ্লব সংগঠনে ইন্ধন জুগিয়েছিল।
৩৬. টীকা
লেখো বুর্জোয়া। (liotir Jaalala)।
উত্তরঃ বুর্জোয়া বা বুর্জোয়াসি
(Bourgao|s|8) কথার অর্থ হল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে মেগা
বুর্জোয়াদের উদ্ভব সম্পর্কে বলেন যে, গ্রামের উদ্যমী ভাগ্যবান কৃষককুল শহরে গিয়ে
শ্রমিক,
কারিগর ও শিল্পদ্রব্য নির্মাতা হিসেবে বিত্তশালী হয়ে বুর্জোয় নামে পরিচিত হয়।
শ্রেণিবিভাগ : বুর্জোয়া
শ্রেণি তিন ভাগে বিভক্ত— (১) উচ্চ বুর্জোয়া, (২) মধ্য বুর্জোয়া ও (৩) নিম্ন
বুর্জোয়া ।
(১) উচ্চ বুর্জোয়াঃ ধনবান
এই শ্রেণির মধ্যে ছিল পুঁজিপতি, ব্যাংকার, ঠিকাদার, পরোক্ষ কর আদায়কারী, বড়ো
ব্যবসায়ী প্রমুখ।
(২) মধ্য বুর্জোয়া :
বুর্জোয়া শ্রেণির দ্বিতীয় স্তরে ছিল মধ্য বুর্জোয়া বা পেটি বুর্জোয়া। এদের
মধ্যে ছিল মূলত বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী। মানুষ। যেমন--- শিক্ষক, অধ্যাপক, ডাক্তার,
লেখক, সাংবাদিক, দার্শনিক, আইনজীবী, শিল্পী প্রমুখ।
(৩) নিম্ন বুর্জোয়া :
বুর্জোয়া শ্রেণির তৃতীয় স্তরে ছিল নিম্ন বুর্জোয়। এদের মধ্যে ছিল দোকানদার,
কারিগর, শ্রমিক, ছােটো ব্যাবসাদার। বুর্জোয়া শ্রেণি বিদ্যা, বুদ্ধি ও ধনবলে
অভিজাতদের চেয়ে বলীয়ান ছিল, কিন্তু বংশকৌলীন্যের অভাবে সমাজে তাদের মর্যাদা ছিল
কম। এই বুর্জোয়া শ্রেণি ফরাসি বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
৩৭. টীকা
লেখো : টেনিস কোর্টের শপথ (Tennis court Oath)। অথবা, টেনিস কোর্ট শপথ’ বলতে কী
বোঝ ?
উত্তরঃ ফরাসি বিপ্লবের সূচনাপর্বের
অন্যতম প্রধান ঘটনা ছিল টেনিস কোর্টের শপথ। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন ফ্রান্সের
জাতীয় সভার (স্টেট জেনারেল) প্রতিনিধিরা টেনিস কোর্টের মাঠে সমবেত হয়ে যে
শপথগ্রহণ করেছিলেন, তা টেনিস কোর্টের শপথ’ নামে পরিচিত।
পটভূমি :
ফরাসি সম্রাট ষােড়শ লুই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কুয়েসনে (Quesnay) ছিলেন ফরাসি
সম্রাট পঞ্চদশ লুই (Louis XV)-এর চিকিৎসক। তিনি ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত
ট্যাবলো ইকনমিক' (Tableau économique)
গ্রন্থে তার অর্থনৈতিক চিন্তাধারা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রীয়
নিয়ন্ত্রণমূক্ত অবাধ বাণিজ্য নীতির অপর নাম লেসে ফেয়ার (Laissez- Faire)। এই
কথাটি জনপ্রিয় করে তোলেন গুর্নে (Gournay)। সভার অধিবেশন আহ্বান করেন। এই
অধিবেশনে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা শ্রেণিভিত্তিক ভোটদানের পরিবর্তে মাথাপিছু ভোটদানের
অধিকার দাবি করেন। সম্রাট ষোড়শ
তৃতীয় শ্রেণির দাবি নাকচ করে দেন। তখন তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা মিরাব্যুৎ,
লাফায়েৎ ও আবে সিয়েসের নেতৃত্বে পাশের টেনিস কোর্টের মাঠে সমবেত হয়ে শপথগ্রহণ
করেন
শপথ :
তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা টেনিস কোর্টের মাঠে শপথ নিয়েছিলেন যে- ফ্রান্সের জন্য
একটি নতুন সংবিধান রচনা করা পর্যন্ত তারা এই স্থান ত্যাগ করবে না। তাদের দাবি ছিল—
তৃতীয়
শ্রেণির সদস্যদের মাথাপিছু ভােটের দাবি মেনে নিতে হবে তাদের একটি নতুন সংবিধান
রচনার অধিকার দিতে হবে।
টেনিস
কোর্টের শপথঃ
ফলাফল : টেনিস
কোর্টের শপথের ফলে প্রথম দুই এস্টেট গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এবং ফরাসি জাতির নেতৃত্ব
গ্রহণ করে তৃতীয় এস্টেটের প্রতিনিধিরা। তৃতীয় শ্রেণির সদস্যদের মাথাপিছু ভোট ও
নতুন সংবিধান রচনার দাবি সম্রাট ষোড়শ লুই শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে বাধ্য হন এবং ২৭
জুন পুনরায় জাতীয় সভার অধিবেশন আহ্বান করেন। ফলে ফরাসি বিপ্লবের পথ সুগম হয়।
অনেক ঐতিহাসিক টেনিস কোর্টের শপথকে ফরাসি বিপ্লবের সূচনাপর্ব বলে অভিহিত করেছেন।
৩৮. ফরাসি
জনতা কেন বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে ?
অথবা,
টিকা লেখো : বাস্তিল দুর্গের পতন (Fall of Bastille)
উত্তরঃ বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি
রাজতন্ত্রের অত্যাচারের অন্যতম কেন্দ্র এই দুর্গে রাজতন্ত্রের বিরােধী ব্যক্তিদের
বন্দি করে রাখা হত ও অত্যাচার করা হত। তাই জনগণের কাছে বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি
রাজতন্ত্রের অত্যাচারের প্রতীক। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিদ্রোহী জনগণ বাস্তিল
দুর্গ আক্রমণ করে ধ্বংস করেছিল।
বাস্তিল
দুর্গের পতনের কারণ : খাদ্যদ্রব্যের মূল্য হ্রাস ও মজুরি বৃদ্ধির
দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষ তাদের
উপর আক্রমণ চালায়। সেইসঙ্গে সম্রাট ষোড়শ লুই-এ -এর জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকার
(Necker)-কে পদচ্যুত করার সংবাদে। জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে শহরের বিভিন্ন
স্থানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ বাধে। উন্মত্ত জনতা অধিক আগ্নেয়াস্ত্র
সংগ্রহের জন্য স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক' বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে।
বাস্তিল
দুর্গ আক্রমণ ও ধবংস : প্যারিস শহরের উত্তেজিত জনতা
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গ দখল করে ধ্বংস করে দেয়। সমস্ত
বন্দিরাও মুক্তি পায়।
ফলাফল
: (১) বাস্তিল
দুর্গের পতনের ফলে রাজা ষোড়শ লুই-এর স্বৈরশাসনের অবসান হয়।
(২) রাজা
জাতীয় পরিষদকে স্বীকৃতি দেন এবং এই সময় থেকে রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা আইনসভার
হাতে চলে যায়।
(৩) ফ্রান্সের
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সূচনা হয় এবং অভিজাততন্ত্রের পতন আসন্ন হয়ে ওঠে।
প্রায় ২০ হাজার অভিজাত দেশত্যাগী হয়।
(৪) বাস্তিলের
পতন কৃষক বিদ্রোহে ইন্ধন জোগায়, সামন্ততন্ত্রের পতনের পথ প্রস্তুত এবং
পৌরবিপ্লবেরও সূচনা করে। ঐতিহাসিক গুডউইন (Goodwin) বলেন- “বাস্তিলের পতনের মতো
বিপ্লবের আর কোনো ঘটনার এত বহুমুখী ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল না।
৩৯. ‘টেইলি’
কী ?
উঃ- বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে প্রচলিত একটি প্রত্যক্ষ করের নাম টেইলি।
টেইলি হল ভূমিকর বা সম্পত্তিকর। এই কর ফরাসিদের সম্পত্তি অনুসারে ধার্য করা হত।
কিন্তু বাস্তবে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র কৃষকদের এই কর দিতে হত।
৪০. ফরাসি
সমাজে বুর্জোয়া’ কাদের বলা হত ?
উঃ- ফরাসি সমাজে বুর্জোয়া বলা হত তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত মধ্যবিত্তদের।
এরা ছিলেন বিদ্যা, বুদ্ধি ও ধনবলে বলীয়ান; কিন্তু বংশকৌলীন্যের অভাবে তারা সমাজ ও
রাষ্ট্রে বিশেষ মর্যাদা পেতেন এরা ছিলেন অধিকারহীন শ্রেণি। বুর্জোয়াদের মধ্যেও
তিনটি স্তর ছিল—1.উচ্চ বুর্জোয়া, 2.মধ্য বুর্জোয়া ও 3.
নিম্ন বুর্জোয়া।
৪১. ফরাসি
বিপ্লবের জনক' কাকে বলা হয় ?
উত্তরঃ ফরাসি দার্শনিক রুশো-কে ফরাসি
বিপ্লবের জনক’ বলা হয়।
৪২. ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
উঃ- বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি স্বৈরশাসনের প্রতীক। এখানে বিনা বিচারে
প্রচুর নিরপরাধ ও সাধারণ মানুষকে বন্দি করে রাখা হত। প্যারিসের উত্তেজিত জনতা ১৭৮৯
খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে এবং কারারক্ষীদের হত্যা করে
কুখ্যাত এই দুর্গ দখল করে নেয়।
৪৩.
টেনিস কোর্টের শপথ’ বলতে কী বোঝায় ?
উঃ-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা স্টেট
জেনারেলের অধিবেশনে তাদের জন্য নির্দিষ্ট সভাকক্ষে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখেন সেটি
তালাবন্ধ আছে। তখন তারা আবে সিয়েস ও মিরাববার নেতৃত্বে পাশের টেনিস খেলার মাঠে
সমবেত হন। এখানে তারা শপথগ্রহণ করেন যে, যতদিন না ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন
সংবিধান রচনা হচ্ছে ততদিন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। একে ‘টেনিস কোর্টের শপথ’
বলা হয়।
৪৪.
কোন ঘটনা ‘সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে
পরিচিত ?
উঃ-১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে বিপ্লবী-কমিউন কয়েক হাজার রাজতন্ত্রের
সমর্থক ব্যক্তিকে বন্দি করে এবং কারাগারে অনেক মানুষকে হত্যা করে। এই ঘটনা
সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। এই ঘটনা রাজতন্ত্রের অবসানকে সুনিশ্চিত করে।
৪৫.
ফরাসি বিপ্লবকে ‘বুর্জোয়া বিপ্লব’ বলা
হয় কেন ?
উঃ-টেনিস কোর্টের শপথগ্রহণের সময় যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের কিছু
সদস্য তৃতীয় শ্রেণি অর্থাৎ বুর্জোয়াদের সঙ্গে যোগ দেন। রাজা ষোড়শ লুই তাদের
দাবির কাছে নতিস্বীকার করেন এবং মাথাপিছু ভোটাধিকারের দাবি মেনে নেন। এইভাবে
ফ্রান্সে তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বুর্জোয়ারা বিপ্লবের ক্ষেত্রে এগিয়ে
আসে ও নেতৃত্ব দেয়। এই ঘটনাই বুর্জোয়া বিপ্লব’ নামে পরিচিত।
৪৬. ফ্রান্সের
জাতীয় সভা কীভাবে সংবিধান সভায় রূপান্তরিত হয়?
উঃ-ফ্রান্সে তিনটি সম্প্রদায়ের মিলিত অধিবেশনে ফ্রান্সের জন্য। সংবিধান
রচনার দায়িত্ব জাতীয় সভাকে দেওয়া হয়। এর ফলেই জাতীয় সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে
সংবিধান সভায় রূপান্তরিত হয়।
৪৭. জাতীয় মহাসভা বা ন্যাশনাল কনভেনশন’ কী ?
অথবা, ন্যাশনাল কনভেনশন কেন আহ্বান করা হয়েছিল ?
উঃ- ১৭৯১
খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন ষোড়শ লুই বন্দি হলে ফ্রান্সে নতুন সংবিধানের প্রয়োজন হয়।
এই নতুন সংবিধান রচনার জন্য গণভোটের ভিত্তিতে যে পরিষদ গঠিত হয়, তা জাতীয়
কনভেনশন’ নামে পরিচিত।জাতীয় কনভেনশন ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর থেকে ১৭৯৫
খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বজায় ছিল।
৪৮. ফ্রান্সের প্রথম লিখিত সংবিধান কী ছিল ?
উত্তরঃ ‘১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের সংবিধান’ হল ফ্রান্সের প্রথম
লিখিত সংবিধান।
৪৯. ‘১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের সংবিধান’ বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ ১৭৮৯ থেকে ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে – দুই বছরের চেষ্টায়
সংবিধান-সভা ফ্রান্সের জন্য একটি সংবিধান রচনা করে। এই সংবিধান ‘১৭৯১
খ্রিস্টাব্দের সংবিধান’ নামে পরিচিত। এটি ছিল ফ্রান্সের প্রথম লিখিত সংবিধান।
৫০. সংবিধান সভার কার্যাবলীকে ক’টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?
উত্তরঃ চারভাগে- (ক) শাসনতান্ত্রিক (খ) অর্থনৈতিক (গ)
বিচারবিভাগীয় (ঘ) গির্জার পুনর্গঠন।
৫১. কে, কোন ঘটনাকে দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব’ বলেছেন ?
উঃ-১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট জেকোবিনদের নেতৃত্বে ফ্রান্সের ক্ষিপ্ত
জনতা টুইলারিস রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে রাজার দেহরক্ষী দলকে হত্যা করে। এই ঘটনাকেই
ঐতিহাসিক লেফেভর ‘দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন।
৫২. রাজা ষোড়শ লুই-এর কীভাবে
মৃত্যু হয়েছিল ?
উঃ-রাজা ষোড়শ লুই-এর মৃত্যুকে
কেন্দ্র করে ফ্রান্সে জেকোবিন ও জিরন্ডিন দলের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠেছিল। এরপর ১৭৯৩
খ্রিস্টাব্দের ২১ জানুয়ারি গিলোটিন যন্ত্রে তাকে হত্যা করা হয়।
৫৩.
“রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে রাজাকে মরতে হবে” – কার উক্তি ?
উত্তরঃ রোবস্পিয়র-এর
।
৫৪.
‘গিলোটিন’ কী ?
উত্তরঃ
গিলোটিন হল এক ধরণের যন্ত্র, যার দ্বারা অতি সহজেই একসঙ্গে বহু মানুষের শিরচ্ছেদ
করা যেত। এর আবিষ্কারক ছিলেন ডাঃ গিলোটিন নামে এক চিকিৎসক। তাঁর নাম থেকে
যন্ত্রটির এই নামকরণ। এই যন্ত্রে দুটি কাঠের লাঠির মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় ভারী লোহার
কাটারি থাকত। ওপরের দিক থেকে নেমে এসে এটি শায়িত মানুষের শিরচ্ছেদ করত।
৫৫. সন্ত্রাসের
শাসনের দুজন পরিচালকের নাম লেখো।
উঃ- সন্ত্রাসের শাসনের অন্যতম দুজন পরিচালক ছিলেন রোবসপিয়র এবং দাঁতো
৫৬. সন্ত্রাসের
শাসনের প্রধান অঙ্গগুলির নাম লেখো।
উঃ-সন্ত্রাসের শাসনের প্রধান অঙ্গগুলি ছিল— 1.জননিরাপত্তা কমিটি,
2. সাধারণ নিরাপত্তা কমিটি, 3.সন্দেহের আইন,4. বিপ্লবী আদালত
এবং 5. গিলোটিন যন্ত্র।
৫৭.
সন্ত্রাসের রাজত্ব’ বলতে কী বোঝায় ?
উঃ- রাজা ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদণ্ডের ফলে ফ্রান্সে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক
ক্ষেত্রে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরে খাদ্যাভাব ও
অর্থাভাবে চরম সংকট তৈরি হয় এবং জনগণ প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরোধিতা করে।
অপরদিকে ইউরোপের দেশগুলি ফ্রান্সকে আক্রমণ করতে সচেষ্ট হয়। এই অবস্থায় জেকোবিন
দল ফ্রান্সের জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যে
শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে, তাকে সন্ত্রাসের শাসন’বলা হয়।সন্ত্রাসের শাসনের
প্রধান পরিচালক ছিলেন রোবসপিয়র।
৫৮.
ফ্রান্সে কোন্ ঘটনাকে ‘Dictatorship of
the Distress বলা হয় এবং কেন ?
উঃ- ফ্রান্সে সন্ত্রাসবাদী শাসনকালকে ‘Dictatorship of the Distress'
বলা হয়। কারণ : বৈদেশিক আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দমনের জন্য এসময়
কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল বলে সন্ত্রাসের শাসনকালকে ‘Dictatorship of the
Distress' বলে অভিহিত করা হয়।
৫৯. রোবসপিয়র
কে ছিলেন ?
উঃ- রোবসপিয়র ছিলেন ফ্রান্সে জেকোবিন দলের নেতা এবং সন্ত্রাসের
রাজত্বের প্রধান পরিচালক। তিনি ফ্রান্সে মহাসন্ত্রাস’ শুরু করেছিলেন। ১৭৯৪
খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই গিলোটিনে তাকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের
শাসনের অবসান হয়।
৬০.
ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের অবসান কীভাবে
ঘটেছিল ?
উঃ- ফ্রান্সে জোকোবিন দল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে ১৭৯৪
খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাস পর্যন্ত সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছিল। তবে এই রাজত্বের
শেষদিকে রোবসপিয়রের জনসমর্থন কমে আসার পাশাপাশি জাতীয় কনভেনশনের অভ্যন্তরেই
বিরোধ দেখা দেয়। এমতাবস্থায় কনভেনশনের দক্ষিণপন্থী ও সাধারণ সদস্যরা রোবসপিয়র ও
তার অনুগামীদের গিলোটিনে হত্যা করে সন্ত্রাসের শাসনের অবসান ঘটায়।
৬১. ‘জেকোবিন’
কাদের বলা হত? অথবা, জেকোবিন দল বলতে কী বোঝো ?
উঃ-জেকোবিন হল ফরাসি আইনসভার একটি রাজনৈতিক দল। ফ্রান্সের
জেকোবিন দলের সদস্যদেরই ‘জেকোবিন’ বলা হত। জেকোবিনরা ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থকও
উগ্র বামপন্থী। জেকোবিনরা কয়েক বছর ফ্রান্সের শাসন পরিচালনা করেছিলেন। জেকোবিনদের
অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন রোবসপিয়র।
৬২. ফরাসি সমাজে ‘সাকুলোৎ কাদের বলা হত ?
উঃ- ফরাসি সমাজে সাকুলোৎ বলতে বোঝাত শহরবাসী খেটে খাওয়া সাধারণ
মানুষদের। এর মধ্যে ছিল দিনমজুর, কুলি, মালি, ভিস্তি (জলবাহক), কাঠুরে, চাকর
(গৃহভৃত্য) প্রভৃতি। ফরাসি বিপ্লবে সাকুলোৎদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
৬৩.
‘মহা আতঙ্ক’ (Great Fear) কী ?
উঃ-প্যারিস শহরে গণ অভ্যুত্থান এবং বাস্তিল দুর্গের পতন ফ্রান্সের
গ্রামগুলিতে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টিকরে। এই সময়ে গ্রামের কৃষকদের মধ্যে গুজব
ছড়ায় যে, তাদের শায়েস্তা করতে অভিজাতদের সেনাবাহিনী ও গুন্ডারা আসছে। এই মিথ্যা
রটনাই ফ্রান্সের ইতিহাসে মহা আতঙ্ক’ (Great Fear) নামে পরিচিত।
৬৪. বিপ্লব
পূর্ববর্তী ফ্রান্সে কয়টি প্রত্যক্ষ কর ছিল? এগুলি কী কী?
উঃ-বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে তিনটি প্রত্যক্ষ কর ছিল।
এগুলি হল— 1.টেইলি বা ভূমিকর, 2.ক্যাপিটেশন বা
উৎপাদন-কর, 3.ভিংটিয়েমে বা আয়কর।
৬৫.
রুশো বিখ্যাত কেন ? তাঁর রচিত দুটি
গ্রন্থের নাম লেখো।
উঃ-রুশো ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তাঁর
রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল— 1, সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট (সামাজিক চুক্তি) এবং 2,
অরিজিন অফ ইনইকুয়ালিটি (অসাম্যের উৎস)।
৬৬. ফরাসি বিপ্লবের সঙ্গে
যুক্ত কয়েকজন দার্শনিকের নাম লেখো।
উঃ- ফরাসি বিপ্লবেরমধ্যে
উল্লেখযোগ্য হলেন- মন্তেস্কু, রুশো, ভলতেয়ার, দেনিস দিদেররা, দ্য এলেমবার্ট
প্রমুখ।
৬৭. দেনিস
দিদেরো ও দ্য এলেমবার্ট কেন বিখ্যাত ?
উঃ- দেনিস দিদেরো ও দ্য এলেমবার্ট ছিলেন বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের
বিখ্যাত দুই পণ্ডিত। এঁরা সমকালীন পণ্ডিতদের সহযোগিতায় ৩৫ খণ্ডের বিশ্বকোশ
(Encyclopedia) রচনা করেন।
৬৮.
বাস্তিল কী ? কবে, কীভাবে এর পতন ঘটেছিল ?
উঃ-বাস্তিল : বাস্তিল হল ফ্রান্সের একটি কুখ্যাত দুর্গ।
বাস্তিলের পতন: ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই
বাস্তিল দুর্গের পতন হয় ফরাসি জনগণের আক্রমণে।
৬৯.
প্যারিস কমিউন’ কী ?
উঃ- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের পতনের পর ফ্রান্সের
বিপ্লবী জনগণ প্যারিসের পৌরশাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়। নিজেদের মধ্যে থেকে
প্রতিনিধি নির্বাচন করে যে অস্থায়ী পৌরপরিষদ গঠন করে, তাকেই‘প্যারিস কমিউন’ বলা হয়।
৭০. বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব কী ?
উঃ-বাস্তিল দুর্গ ছিল বুরবোঁ রাজতন্ত্রের স্বৈরচারিতার প্রতীক। বাস্তিল
দুর্গের পতনের প্রধান গুরুত্ব ছিল— 1, ফ্রান্সে বুরবো রাজাদের স্বৈরশাসনের
অবসান ঘটে। 2, বাস্তিল দুর্গে বন্দি নিরপরাধ ফরাসি জনসাধারণ মুক্তি পায়। ও
বাস্তিল দুর্গের পতনের মাধ্যমে ফ্রান্সে বিপ্লবের জয়যাত্রা সূচিত হয়।
৭১.
মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ বলতে
কী বোঝো ?
উঃ-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ফ্রান্সের সংবিধান সভা একটি ঘোষণাপত্রে
মানুষের অধিকারের কথা ঘোষণা করে। এটি মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ নামে
পরিচিত। এতে বলা হয়— বি। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার।আইনের চোখে সকলেই সমান।
৭২.সাসপেনসিভ ভেটো’ (Suspensive Veto) বলতে কী
বোঝো?
উঃ-ফরাসি সংবিধান সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে আইনসভা কর্তৃক প্রবর্তিত কোনো
আইন রাজা সম্পূর্ণ বাতিল করতে না পারলেও সাময়িকভাবে মুলতুবি রাখতে পারতেন। রাজার
এই ক্ষমতা সাসপেনসিভ ভেটো’ নামে পরিচিত। অবশ্য যে-কোনো আইন পরপর তিনবার
আইনসভা কর্তৃক গৃহীত হলে রাজা তা মেনে নিতে বাধ্য হতেন।
৭৩. ব্যক্তি
ও নাগরিক অধিকারপত্র’ -এর লক্ষ্য কী ছিল ?
উঃ-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট সংবিধান সভা একটি ঘোষণাপত্রে মানুষ ও
নাগরিকদের অধিকার ঘোষণা করে। এর লক্ষ্য ছিল 1.ফ্রান্সের জনগণকে
পুরাতনতন্ত্রের কবল থেকে স্বাধীন করা এবং 2.সকল মানুষের জন্য সাম্যের আদর্শ
প্রতিষ্ঠা করা।
৭৪. রাজতন্ত্রের
শবযাত্রা’ কাকে বলে ?
উঃ-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর প্যারিসের কয়েক হাজার মহিলার দাবি
অনুসারে রাজা ষোড়শ লুই সপরিবারে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভার্সাই থেকে প্যারিসে আসতে
বাধ্য হন। মহিলাদের শোভাযাত্রার সূত্রে রাজার প্যারিসে আসার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক
রাইকার রাজতন্ত্রের অস্তিন যাত্রার সূচক তথা রাজতন্ত্রের শবযাত্রাস’ বলে চিহ্নিত
করেছেন।
৭৫.
মানবিক ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণাপত্রকে
পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা’ বলা হয় কেন ?
উঃ- মানবিক ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণাপত্রকে ‘পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু
পরোয়ানা’ বলে উল্লেখ করেছেন ঐতিহাসিক ওলার (Aulard)। কারণ এই ঘোষণায় মানুষের
ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সমানাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। পুরাতন রাজতন্ত্রের
অবসান ঘটিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
৭৬.
‘জেকোবিন’ কাদের বলা হত ? অথবা, জেকোবিন
দল বলতে কী বোঝো ?
উঃ-জেকোবিন হল ফরাসি আইনসভার একটি রাজনৈতিক দল। ফ্রান্সের
জেকোবিন দলের সদস্যদেরই ‘জেকোবিন’ বলা হত। জেকোবিনরা ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থকও
উগ্র বামপন্থী। জেকোবিনরা কয়েক বছর ফ্রান্সের শাসন পরিচালনা করেছিলেন। জেকোবিনদের
অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন রোবসপিয়র।
৭৭.
কারা, কবে ফ্রান্সে প্রথম প্রজাতন্ত্র
প্রতিষ্ঠা করে ?
উঃ-ফ্রান্সের জাতীয় মহাসভা বা ন্যাশনাল কনভেনশন ফরাসি রাজতন্ত্রের
উচ্ছেদ ঘটিয়ে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সে প্রথম প্রজাতন্ত্র
প্রতিষ্ঠা করে।
৭৮. জেকোবিন
শাসনকে সন্ত্রাসের শাসন’ বলা হয় কেন ?
উঃ-জেকোবিনরা ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুন মাস থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই
মাস পর্যন্ত সময়ে বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরোধ এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দমন করার
জন্য ফ্রান্সে এক কঠোর শাসন প্রবর্তন করেছিলেন। এই শাসনে বহু মানুষকে প্রাণ দিতে
হয়েছিল। সেইজন্য এই শাসনকে ‘সন্ত্রাসের শাসন’ বলা হয়।
৭৯. সন্দেহের আইন’ বলতে কী বোঝো ?
উঃ-ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন চলাকালীন এক বিশেষ ধরনের আইন প্রচলিত হয়।
এই আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে কেবলমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেফতার এবং বিনা
বিচারেশাস্তি প্রদান করা যেত। এই আইনই সন্দেহের আইন’ নামে পরিচিত।
৮০. লাল
সন্ত্রাস’ (Red Terror) বলতে কী বোঝো ?
উঃ-জেকোবিন দলের পরিচালনায় এবং রোবসপিয়রের নেতৃত্বে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই পর্যন্ত
ফ্রান্সে যে নৃশংস সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল, তাকে লাল সন্ত্রাস’ বলা
হত। ফ্রান্সে সন্ত্রাসের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেও রোবসপিয়র সন্ত্রাসের রাজত্ব
চালিয়ে যান।
৮১. ফরাসি
বিপ্লবের কটি আদর্শ ও কী কী ? অথবা, ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ কী ?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের তিনটি মূল আদর্শ ছিল। এগুলি হল— সাম্য, মৈত্রী ও
স্বাধীনতা অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্রবাদ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা।
৮২. ‘দ্য
ওয়েলথ অফ নেশনস' (The Wealth of Nations) গ্রন্থের রচয়িতা কে ?
উত্তরঃ অ্যাডাম স্মিথ।
৮৩. ফ্রান্সের বুরবো রাজারা কোন্ তত্ত্বে বিশ্বাসী
ছিলেন ?
উত্তরঃ রাজার দৈবস্বত্বে বিশ্বাসী
ছিলেন।
৮৪. ফ্রান্সে লবণ কর কী নামে পরিচিত ছিল ?
উত্তরঃ ফ্রান্সে লবণ কর গ্যাবেলা নামে
পরিচিত ছিল।
৮৫. ফ্রান্সে ধর্মর্কর কী নামে পরিচিত ছিল ? অথবা, টাইথ কী ?
উত্তরঃ ফ্রান্সে ধর্মর্কর টাইথ নামে
পরিচিত ছিল।
৮৬. ‘প্যাট্রিশিয়ান’ কারা ?
উত্তরঃ ফরাসি বিপ্লবের আগে ফরাসি
সমাজের অভিজাতরা। ‘প্যাট্রিশিয়ান’ নামে পরিচিত ছিলেন।
৮৭. কোন গ্রন্থকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’ বলা হয় ?
উত্তরঃ সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট (Social
Contract) গ্রন্থকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’ বলা হয়।
৮৮. সামাজিক চুক্তি' (Social Contract) গ্রন্থের
রচয়িতা কে ?
উত্তরঃ রুশো ।
৮৯. জাতীয় সভা’ (National Assembly) কী ?
উত্তরঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন
স্টেট জেনারেলের অধিবেশনে তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা নিজেদের সভাকে জাতীয়
সভা’ (National Assembly) বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ জাতীয় সভা হল তৃতীয়
সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিজস্ব সভা।
৯০. ফ্রান্সের
করব্যবস্থা বৈষম্যমূলক ছিল কেন ?
উত্তরঃ বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা :
ফ্রান্সের করব্যবস্থা বৈষম্যমূলক ছিল কারণ— ফরাসি রাজাদের সুনির্দিষ্ট কোন
রাজস্বনীতি ছিল না। বাজেটও তৈরি হত না। তাই রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে
অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। ফ্রান্সে প্রত্যক্ষ করের বােঝা দরিদ্র মানুষকেই
বহন করতে হত। যাজক ও অভিজাতরা কোনাে প্রকার কর দিতেন না। ফলত করভার সকলের উপর বা
সব অঞ্চলের উপর সমান ছিল না। কর আদায়ের ব্যবস্থাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ।
কর প্রদানকারী :
ফ্রান্সে আদায় করা মােট করের ৯৬% কর দিতে হত তৃতীয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষকে।
অপরদিকে মাত্র ৪%কর দিত প্রথম ও দ্বিতীয় সম্প্রদায়।
কর
আদায় ব্যবস্থা : ফ্রান্সে কর আদায়ের ব্যবস্থাও
ছিল ত্রুটিপূর্ণ। সরকার এককালীন কর আদায়ের জন্য কিছু রাজকর্মচারী (ফারমিয়ের
nজেনারেল) ও অভিজাতদের কর আদায়ের দায়িত্ব দিত। এই কর
আদায়কারীরা
প্রজাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট করের অতিরিক্ত কর আদায় করে নিত। বাড়তি কর আদায়ের
জন্য তারা প্রজাদের উপর অকথ্য অত্যাচারও করত।
বাণিজ্যশুল্ক
আদায়কারী শুল্কবিভাগের কর্মচারীরা নানাভাবে সরকারের পাওনা আত্মসাৎ করত এবং
বণিকদের উপর অত্যাচার চালাত।এইসব কারণে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ তৎকালীন
ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’(Museum of Economic Errors) বলেও অভিহিত
করেছিলেন
৯১. ফরাসি
বিপ্লবের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভূমিকা : ফ্রান্সের অধিবাসী ফরাসিরা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে যে বিপ্লব
ঘটিয়েছিল, তা ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) নামে খ্যাত। এই বিপ্লবের
মাধ্যমে ফরাসি জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। ঐতিহাসিকগণ
বলেন যে, ফরাসিদের ওসামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য ও ক্ষোভের কারণেই ১৭৮৯
খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ঘটেছিল।
ফরাসি
বিপ্লবের কারণ :
❖ সামাজিক কারণ
: ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম
প্রধান কারণ ছিল ফরাসি সমাজে বৈষম্য ও শোষণ। শ্রেণিবিভক্ত ফরাসি সমাজব্যবস্থা
মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ফরাসি সমাজে এই সময়
প্রধান তিনটি শ্রেণি (এস্টেট) বর্তমান ছিল; যথা— প্রথম শ্রেণি (যাজকগণ), দ্বিতীয়
শ্রেণি (অভিজাতবর্গ) এবং তৃতীয় শ্রেণি (ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক
প্রভৃতি)। এই তিন শ্রেণির মধ্যে যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ছিল বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত
শ্রেণি’ ও তৃতীয় সম্প্রদায় ছিল অধিকারহীন শ্রেণি।
[1]
প্রথম শ্রেণি (First Estate) :ফরাসি
সমাজব্যবস্থায় যাজকরা ছিল প্রথম শ্রেণিভুক্ত। বিপ্লবের পূর্বে এরা ছিলেন সুবিধাভোগী
এবং ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ১%-এরও কম। এদের মোট সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। অথচ
এদের দখলে ছিল ফ্রান্সের মোট জমির ১০%। এই জমির জন্য এরা রাজাকে কোনো প্রকার করও
দিতেন না। যাজকরা ভূমিকর, ধর্মকর, মৃত্যুকর ইত্যাদি আদায় করলেও সরকারকে
স্বেচ্ছাকর ছাড়া অন্য কোন কর দিতে রাজি ছিলেন
না। অথচ রাষ্ট্রের সবরকম সুযোগসুবিধা এরা ভোগ করতেন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন।
[2]
দ্বিতীয় শ্রেণি (Second Estate) : ফরাসি সমাজে অভিজাতরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। এরা ছিলেন
ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.৫% অর্থাৎ প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার। অথচ
ফ্রান্সের মোট জমি,২০% ছিল এদের দখলে | এরা জমির জন্য সরকারকে কোন প্রতক্ষ্য কর
দিতেন না। আবার সরকারের সামরিক ও অসামরিক বিভাগের উচ্চপদগুলিতে এদের একচেটিয়া
অধিকার ছিল।
[3]
তৃতীয় শ্রেণি (Third Estate) :
ফরাসি সমাজের ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, সর্বহারা সকলেই ছিলেন তৃতীয়
শ্রেণিভুক্ত। এদের মোট জনসংখ্যা ছিল ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ৯৭৩%-এর বেশি। সমাজে
এদের বংশকৌলীন্য ছিল না। ফ্রান্সের করের বোঝার বেশির ভাগটাই এদের বহন করতে হত।
ফ্রান্সে সবক্ষেত্রে এরা ছিলেন অসাম্যের শিকার। তাই তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত মানুষেরা
তাদের প্রতি সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের শোষণ,
নিপীড়নের
প্রতিবাদে বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
❖ অর্থনৈতিক কারণ : ফরাসি বিপ্লব (1789 খ্রি:)
আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঐতিহাসিক কোবান ফরাসি
বিপ্লবকে অসংখ্য ছোটো বড়ো খরস্রোতা নদীর সমন্বয়ে ছড়িয়ে পড়া ভয়ানক বন্যার সঙ্গে
তুলনা করেছেন।
সরকারি
অপব্যয় -
ফরাসি রাজপরিবার অকাতরে অর্থব্যয় করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করেছেন।
চতুর্দশ লুই (1643-1715 খ্রি:), পঞ্চদশ লুই (1715 - 74 খ্রি:) ও ষোড়শ লুই -এর আমলে
সম্রাট সহ রাজপরিবার অমিতব্যয়ী ও বিলাসিতা চরমে পৌঁছায়। ফলে ফরাসি রাজকোশ শুন্য
হয়ে যায়।
ব্যায়বহুল যুদ্ধ - চতুর্দশ ও পঞ্চদশ লুই বিভিন্ন
ব্যায়বহুল যুদ্ধে অংশ নিয়ে বিপুল অর্থ ব্যায় করেন। ষোড়শ লুই আমেরিকার স্বাধীনতা
যুদ্ধে অংশ নিলে প্রচুর লোক ও অর্থ ব্যয় হয়।
অধিকারভোগীদের
আয় - ফ্রান্সের
প্রায় অর্ধেক কৃষিজমি ছিল যাজক ও অভিজাতদের হাতে। জমি থেকে বিপুল আয় সত্বেও তারা
সরকারকে টাইলে বা ভূমিকর, ক্যাপিটেশন বা আয়কর দিত না। তা সত্বেও তারা রাষ্ট্রের
বিভিন্ন ধরনের সুযোগ -সুবিধা ভোগ করত।
তৃতীয় শ্রেণির করের বোঝা - রাষ্ট্র, গির্জা ও জমিদাররা
তৃতীয় শ্রেণির কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর আদায় করত। টাইলে, ক্যাপিটেশন, ভিংটিয়েম,
লবণ কর, ভোগ্য পণ্যের উপর কর, যাজকদের টাইদ বা ধর্মকর, এইদস বা মদ, তামাক প্রভৃতির
কর, করভি, অন্যান্য অতিরিক্ত কর প্রভৃতি দিতে বাধ্য হতো। এতরকম কর মিটিয়ে কৃষকদের
হাতে উৎপন্ন ফসলের 20 শতাংশ পড়ে থাকত।
মধ্যবিত্তদের দুরাবস্থা - অর্থনীতিবিদ আডাম স্মিথ মনে
করেন যে বিপ্লবের আগে ফ্রান্স ছিল ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’, ত্রুটিপূর্ণ অর্থনীতির
জন্য দেশে দ্রব্যমূল্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেলে, দরিদ্র মানুষ সীমাহীন দুর্দশার
মুখে পড়ে। খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যের মূল্য গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে
যায়। অন্যদিকে ধনী বুর্জোয়া ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা স্বাধীন ও অবাধ বাণিজ্যের জন্য
শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণ লোপের দাবি জানায়।
এই
সমস্ত বিভিন্ন কারনে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল।
৯২.ফ্রান্সের
করব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই করব্যবস্থা ফরাসি সমাজের তৃতীয়
সম্প্রদায়কে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল ?
উত্তরঃ ভূমিকা : বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বুরবো (Bourbon) রাজবংশের
রাজারা রাজত্ব করতেন। রাজাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করা
বিভিন্ন ধরনের কর।
ফ্রান্সের করব্যবস্থা : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পূর্বে
ফ্রান্সে প্রচলিত করগুলিকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় প্রত্যক্ষ কর এবং পরোক্ষ
কর।
প্রত্যক্ষ
করঃ ফরাসি
বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে তিন ধরনের প্রত্যক্ষ কর প্রচলিত ছিল। যেমন- 0 ‘টেইলি’
(Taile) বা সম্পত্তিকর
ক্যাপিটেশন’
(Capitation) বা উৎপাদনকর এবং @ ‘ভিংটিয়েমে’ (Vingtieme) বা আয়কর। যাজক ও
অভিজাতরা যথাক্রমে ফ্রান্সের ১ঠ অংশ এবং অংশ ভূসম্পত্তির মালিক হয়েও তারা
রাষ্ট্রকে টেইলি দিতেন না। যাজকেরা রাষ্ট্রকে একপ্রকার স্বেচ্ছাকর প্রদান করতেন।
যাজক এবং অভিজাত সম্প্রদায় রাষ্ট্রকে কোন প্রকার উৎপাদনকর এবং আয়কর প্রদান করতেন
না
রাষ্ট্রের
তিনটি প্রত্যক্ষ করই তৃতীয় সম্প্রদায় বহন করত। কর আদায়ের জন্য
ইনটেনডেন্ট’ (Intendent) নামক কর্মচারীরা সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচার
চালাত।
পরোক্ষ
কর : প্রত্যক্ষ
করের পাশাপাশি ফ্রান্সে বহু পরোক্ষ করও প্রচলিত ছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
‘টাইথ’ (Tithe) বা ধর্মকর, ‘গ্যাবেলা’ (Gabelle) বা লবণ কর, ‘এই’ (Aides) বা ভোগ্যপণ্যের
উপর কর, ‘তেরাজ’ বা পথকর, করভি’ (Corvée) বা মকর, ব্যানালাইট’ (Banalités) বা শস্যদানা ভানার কর প্রভৃতি। পরোক্ষ
করগুলিও সরকার, গির্জা ও সামন্তপ্রভুকে তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা দিতে বাধ্য
থাকত। যাজক ও অভিজাতরা রাষ্ট্রকে কোন প্রকার পরোক্ষ কর দিতেন না।
করব্যবস্থা ও তৃতীয়
সম্প্রদায় : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বিভিন্ন
প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর প্রচলিত ছিল। তবে এই সকল কর ফরাসি সমাজের সকল
সম্প্রদায় বহন করত না। ফরাসি সমাজব্যবস্থা তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। প্রথম
সম্প্রদায়ভুক্ত যাজক এবং দ্বিতীয় সম্প্রদায়ের অভিজাতরা সকল প্রকার কর প্রদানের
দায়িত্ব থেকে মুক্ত ছিলেন। এই দুই শ্রেণি ব্যতীত অবশিষ্ট যারা ছিলেন তারা তৃতীয়
সম্প্রদায়ভুক্ত। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৮% মানুষ ছিলেন তৃতীয় সম্প্রদায়ের
সাধারণ মানুষ। এরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও রাষ্ট্রপ্রদত্ত
সমস্ত প্রকার কর প্রদান করতে বাধ্য হতেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা বহন করে
জীবনধারণ করা কষ্টকর হয়ে উঠলে তারা বিপ্লবমুখী হয়ে ওঠেন।
৯৩. অঁসিয়া রেজিম কী ?
উত্তরঃ ‘অঁসিয়া রেজিম’ বা Ancién
Regime কথার অর্থ হল ‘প্রাচীন আমল’। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে
ফ্রান্সে বুরবোঁ রাজাদের আমলকে ‘অঁসিয়া রেজিম’ বলা হয়। এই সময় রাজনৈতিক অবস্থা
ছিল স্বৈরাচারী, সামাজিক অবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক, অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ।
ফরাসি বিপ্লব এই ‘পুরাতনতন্ত্রের’ অবসান ঘটিয়েছিল।