Anwar Study Point

সফলতার সাথী

Breaking

সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২

মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর


মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর 
দশম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর 
মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর 
দশম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার  বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর 
দশম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর 

মাধ্যমিক / দশম শ্রেণি
ইতিহাস
দ্বিতীয় অধ্যায় : সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
প্রতিটি প্রশ্নের মান : ২


প্রশ্ন (১) কীভাবে সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্য থেকে উনিশ শতকের সমাজের প্রতিফলন পাওয়া যায় ?

উত্তর:- উনিশ শতকের বাংলার ইতিহাসের একটি বিশেষ উপাদান হল সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্য। এগুলি থেকে 

প্রথমত, সমসাময়িক সমাজের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস কৃষক, সমাজ ও জাতিবিন্যাসের কথা যেমন জানা যায়, তেমনি সমাজের অগ্রগতি ও আধুনিকীকরণের কথাও জানা যায়।

দ্বিতীয়ত, বামাবােধিনী পত্রিকা’ নামক সাময়িক পত্রিকা থেকে মূলত নারী সমাজের কথা, “হিন্দু প্যাট্রিয়ট'-এর মতাে সংবাদপত্র থেকে ইংরেজ শাসন শােষণের কথা, 'হুতােম প্যাচার নকশা' থেকে উনিশ শতকের কলকাতার নাগরিক জীবনের কথা ও ‘নীলদর্পণ' নামক নাটক থেকে নীল চাষিদের দুরবস্থার কথা জানা যায়।

প্রশ্ন (২) ‘বামাবােধিনী পত্রিকা’ বিখ্যাত কেন ?

উত্তর:- ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের একটি বিশেষ দিক নারীশিক্ষা প্রসার ও নারীসমাজের উন্নয়ন। এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি ছিল—

প্রথমত, উমেশচন্দ্র দত্তের সম্পাদনায় ‘বামাবােধিনী সভার মুখপত্ররূপে ‘বামাবােধিনী পত্রিকা’ নামক মাসিক পত্রিকার আত্মপ্রকাশ (১৮৬৩ খ্রি.)।

দ্বিতীয়ত, এই পত্রিকায় নারী সমাজের অবস্থা, শিক্ষাগ্রহণ তার তাৎপর্য, চাকরি-সহ বিভিন্ন পেশায় যােগদান ও তার অভিজ্ঞতা, গৃহচিকিৎসাসহ গৃহপরিচালনার খুঁটিনাটি সম্পর্কিত রচনা প্রকাশিত হত।

প্রশ্ন (৩) উমেশচন্দ্র দত্ত বিখ্যাত কেন ?

উত্তর:- উমেশচন্দ্র দত্ত বিখ্যাত (১৮৪০-১৯০৭ খ্রি.) ছিলেন, কারণ

প্রথমত, তিনি ছিলেন ব্রাম্মসমাজের বিশিষ্ট নেতা, শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক এবং কলকাতায় সিটি স্কুল ও কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ।

দ্বিতীয়ত, তিনি সামাজিক কুসংস্কারের বিরােধিতার পাশাপাশি বাঙালি ‘বামা’ অর্থাৎ, নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার সাধন এবং নারীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ‘বামাবােধিনী’ (১৮৬৩ খ্রি.) সভা প্রতিষ্ঠা করেন।

তৃতীয়ত, তিনি বামাবােধিনী' নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করে নারী সমাজের অবস্থা, নারীশিক্ষা গ্রহণ ও তার তাৎপর্য, চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় যােগদান ও তার অভিজ্ঞতা, গৃহ-চিকিৎসাসহ গৃহ পরিচালনার খুঁটিনাটি দিক তুলে ধরেন। 

প্রশ্ন (৪) স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে ‘বামাবােধিনী পত্রিকার ভূমিকা কী ছিল ?

উত্তর:- স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে বামাবােধিনী পত্রিকার ভূমিকাগুলি হল— 
প্রথমত, বামাবােধিনী পত্রিকার বিভিন্ন লেখনীর (তৎকালীন সমাজের ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ঘরােয়া ওষুধপত্র, শিশু পরিচর্যা, নারীশিক্ষা বিষয়ক) মাধ্যমে বাঙালি গৃহবধূসহ নারীদের শিক্ষিত করে তােলার কাজ শুরু হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, এই পত্রিকা নারীদের প্রতি বঞ্চনা ও শােষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নারীদের সচেতন করে তুলেছিল।

তৃতীয়ত, এই পত্রিকা নারীদের মধ্যে বিদ্যাশিক্ষার প্রসারের জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করে কুসংস্কারমুক্ত শিক্ষিত নারী গড়ে তােলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বন্দিনী বামা মুক্তির যুগ’ শুরু করেছিল। 

প্রশ্ন (৫) ‘বামাবোধিনী' পত্রিকায় প্রকাশিত বিষয়ের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখাে।

উত্তর:- বামাবােধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত বিষয়ের দুটি বৈশিষ্ট্য হল - 

প্রথমত, নারী জাতির মানসিক বিকাশের জন্য নারী সমাজের অবস্থা, নারীশিক্ষা গ্রহণ ও তার তাৎপর্য, চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় যােগদান ও তার অভিজ্ঞতা, গৃহচিকিৎসাসহ গৃহ পরিচালনার খুঁটিনাটি দিক প্রতিফলিত হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, পত্রিকাটি নারীদের জন্য হলেও প্রকাশিত বিষয়ের পত্রিকাটিতে পুরুষ লেখকদের রচনার পাশাপাশি নারীরাও স্বনামে অথবা বেনামে নিয়মিত লিখতেন।

তৃতীয়ত, এই পত্রিকা নারীদের প্রতি বঞ্চনা ও শােষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নারীদের সচেতন করে তুলে 'বন্দিনী বামামুক্তির' যুগ শুরু করেছিল।

প্রশ্ন (৬) ‘বামাবােধিনী পত্রিকা থেকে নারীশিক্ষা বিষয়ে কী কী তথ্য পাওয়া যায় ?

উত্তর:- ‘বামাবােধিনী পত্রিকা ঊনবিংশ শতকে বাঙালি নারীদের শিক্ষিত করে তােলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, যেমন—

প্রথমত, বামা অর্থাৎ নারীদের বিদ্যাশিক্ষার প্রতিবন্ধকতার প্রতিফলন ঘটেছিল এই পত্রিকাটিতে।

দ্বিতীয়ত, মেয়েদের জড়তা কাটিয়ে শিক্ষিত করে তােলাই ছিল এই পত্রিকার অন্যতম লক্ষ্য।

প্রশ্ন (৭) ‘স্ত্রীধন’ কী ?

উত্তর:- বামাবােধিনী পত্রিকা থেকে জানা যায় যে—
প্রথমত, ভারতীয় নারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তিই হল ‘স্ত্রীধন’ এবং এগুলি সাধারণত অলংকার ও পােশাক।

দ্বিতীয়ত, বিবাহকালে নারীর পিতৃদত্ত বা পিতার দেওয়া, ভ্রাতৃদত্ত বা ভাইয়ের দেওয়া অলংকার ও উপহার ছিল স্ত্রীধনের উৎসস্থল।

তৃতীয়ত, নারীর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি স্বামী অথবা পুত্ররা পেত না, তা পেত তার কন্যা বা কন্যারা।

প্রশ্ন (৮) 'হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ থেকে বাংলার জনজীবন সম্পর্কে কী জানা যায় ?

উত্তর:- হিন্দু প্যাট্রিয়ট’’-এ বাংলার জনগণের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে প্রতিবেদন রচিত হয়েছিল, যেমন—

প্রথমত, ইংরেজ শাসনকালে অর্থকরী ফসল (যেমন—পাট, তুলা, তৈলবীজ, আখ) চাষ ও তা বিদেশে রপ্তানির কারণে কৃষিপণ্য ও খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধির ফলে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাদের কর্মসংস্থানও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

তৃতীয়ত, নীলকরদের অত্যাচার ও নীলচাষিদের দুরবস্থার কথাও জানা যায়।

প্রশ্ন (৯) ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ কেন বিখ্যাত ?

উত্তর:- গিরিশচন্দ্র ঘােষের সম্পাদনায় মধুসূদন রায় ইংরেজি সাপ্তাহিক সংবাদপত্ররূপে (অবশ্য ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ থেকে দৈনিক) প্রকাশ করেন (৬ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৩ খ্রি.)। এই পত্রিকা বিখ্যাত ছিল, কারণ—

প্রথমত, এই পত্রিকার বিখ্যাত সম্পাদক ছিলেন হরিশচন্দ্র মুখােপাধ্যায়। যিনি নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে খবর প্রকাশ করে নীলচাষিদের বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন।

দ্বিতীয়ত, এই পত্রিকা ইংরেজ শাসন-শােষণের সমালােচনা ও বিরােধিতা করে এবং নীলচাষিদের পক্ষ সমর্থন করে জাতীয়তাবাদী পত্রিকার মর্যাদা লাভ করে।

প্রশ্ন (১০) সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রতি ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট' পত্রিকার কী মনােভাব ছিল?

উত্তর:- সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রতি হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার মনােভাব ছিল এরকম-

প্রথমত, এই পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখার্জি সাঁওতালদের ওপর অর্থনৈতিক শােষণের তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং তাদের জঙ্গল ও উপত্যকার মধ্যে স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অধিকার সুনিশ্চিতকরণের দাবি জানান।

দ্বিতীয়ত, সাঁওতাল বিদ্রোহের জন্য শান্তিপ্রিয় সাঁওতালরা দায়ী ছিল না, দায়ী ছিল ব্রিটিশ সরকার।

তৃতীয়ত, এই পত্রিকা সাঁওতাল এলাকায় ইংরেজ সরকারের সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠারও তীব্র বিরােধিতা করে।

প্রশ্ন (১১) হিন্দু প্যাট্রিয়ট থেকে নীলচাষ’ সম্পর্কে কী জানা যায়?

উত্তর:- হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ নামক সংবাদপত্র হল নীলচাষ ও নীলকর সাহেবদের অত্যাচার সম্পর্কে জানার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ,

প্রথমত, নীলবিদ্রোহের আগে ও সমকালে এই পত্রিকা বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খবর সংগ্রহ করে তা জনসমক্ষে তুলে ধরে।

দ্বিতীয়ত, কৃষকদের কাছে নীলচাষ অলাভজনক হলেও ‘দাদন’ বা অগ্রিম অর্থ গ্রহণের কারণে নীলচাষিরা নীলচাষ করতে বাধ্য হত। 

তৃতীয়ত, নীলচাষে অনিচ্ছুক কৃষকরা নীলকর সাহেবদের দ্বারা বিভিন্ন ভাবে অত্যাচারিত হত।

প্রশ্ন (১২) হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার উদ্দেশ্য কী ছিল? 

উত্তর:- হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার উদ্দেশ্যগুলি ছিল—

প্রথমত, দেশের স্বার্থ জনগণের কাছে তুলে ধরা।

দ্বিতীয়ত, প্রচলিত সামাজিক, রাজনৈতিক ত্রুটিবিচ্যুতিগুলির প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের আদর্শ জাগ্রত করা।

তৃতীয়ত, ব্রিটিশ শাসনের স্বৈরাচার ও অত্যাচারের প্রতিবাদ করা ছিল এই পত্রিকার অন্যতম লক্ষ্য।

প্রশ্ন (১৩) হুতোম প্যাচার নকশা’ থেকে কীভাবে কলকাতার সমাজ বিন্যাসের কথা জানা যায় ?

উত্তর:- কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা হুতােম প্যাচার নকশা’ নামক ব্যঙ্গাত্মক গ্রন্থটি থেকে - 

প্রথমত, উনিশ শতকের কলকাতার চড়ক পার্বণ, বারােয়ারি -এর বাদশা এবং দ্বিতীয় ভাগ থেকে রথ উৎসব, দুর্গোৎসব, রামলীলা ও লােকসংস্কৃতির কথা জানা যায়।

দ্বিতীয়ত, ইংরেজ শাসনের আগে বাংলার বড়াে বড়াে বংশের (কৃষচন্দ্র, রাজবল্লভ, মানসিংহ, নন্দকুমার, জগৎশেঠ) পতন এবং নতুন বংশের নব্য বাবু সমাজের (মল্লিক পরিবার, শীল পরিবার) উত্থানের কথা জানা যায়।

তৃতীয়ত, ইংরেজ শাসন ও ব্যাবসাবাণিজ্যের মাধ্যমে যেসব জাতের উদ্ভব হয় তার কথা জানা যায়।

প্রশ্ন (১৪) হুতােম প্যাঁচার নকশা’ থেকে উনিশ শতকে সংস্কৃতির কথা কীভাবে জানা যায়? অথবা, হুতােম প্যাঁচার নকশা’ গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরুপ সমাজচিত্র পাওয়া যায়?

উত্তর:- হুতােম প্যাঁচার নকশা থেকে উনিশ শতকের কলকাতা শহরের বিভিন্নধর্মী সংস্কৃতির কথা জানা যায়, যেমন—

প্রথমত, নীলের ব্রত, গাজন সন্ন্যাসী (চড়কি)-দের শিবের কাছে মাথা ঘােরানাে বা মাথা চালা, যাত্রাগান, বুলবুলের গান, অশ্লীল শব্দযুক্ত ‘আখড়াই গান প্রভৃতির কথা জানা যায়।

দ্বিতীয়ত, চড়কপূজা, নীলষষ্ঠী, রামলীলা, রথ উৎসব, বারােয়ারি দুর্গাপূজার মতাে সংস্কৃতির কথা জানা যায়।

তৃতীয়ত, ইংরেজ শাসনে ব্যাবসাবাণিজ্যের সুবাদে হঠাৎ ফুলেফেঁপে ওঠা নব্যবাবু সম্প্রদায়ের এবং গোঁড়া হিন্দু সমাজের আদবকায়দার কথা জানা যায়।

প্রশ্ন (১৫) “হুতােম প্যাঁচার নকশা’ নামকরণের তাৎপর্য কী?

উত্তর:- ‘হুতােম প্যাঁচার নকশা’ আসলে একটি ব্যঙ্গাত্মক রচনা। এতে কলকাতার বিত্তবান দেশীয় সমাজের স্বার্থপরতা তুলে ধরা হয়েছে। নিশাচর প্রাণীর মতাে সমাজের হঠাৎ বড়ােলােক হয়ে যাওয়া নয়টি শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার ছবি প্যাচার চোখে দেখা হয়েছে বলে রচনাটির নামকরণ যথার্থ হয়েছে।

প্রশ্ন (১৬) নীলদর্পণ’ নাটকের গুরুত্ব কী? অথবা নীলদর্পণ নাটক বিখ্যাত কেন? 

উত্তর:- নীলদর্পণ' নাটকের গুরুত্ব হল—
প্রথমত, নীলচাষিদের নীলচাষ ও অনিচ্ছুক নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারই ছিল দীনবন্ধু মিত্রের রচিত ‘নীলদর্পণ’ নাটকের মূল বিষয়। (অনুমান করা হয় যে, নদিয়ার গুয়াতেলির মিত্র পরিবারের দুর্দশাই এই নাটকের বিষয়)।

দ্বিতীয়ত, এই নাটক বাঙালির মনে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করেছিল।

তৃতীয়ত, নীল বিদ্রোহ ও ‘নীল কমিশন গঠনের পর এই নাটকটি প্রকাশিত হলে পাদরি জেমস্ লং এই নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন এবং ইউরােপের জনমানসে নীলকরদের অত্যাচার তুলে ধরতে সচেষ্ট হন।

প্রশ্ন (১৭) নীলদর্পণ নাটক থেকে সমকালীন কী চিত্র দেখা যায়? 

উত্তর:- উনিশ শতকের বাংলার বিদেশি শাসন, শােষণ ও অত্যাচারের করুণ চিত্র ধরা পড়ে নীলদর্পণ’ নাটকে, যেমন—

প্রথমত, এই নাটকে সাধারণ প্রজাদের ওপর নীলকর সাহেবদের। অত্যাচার ও লুঠতরাজ, গৃহদাহ, নরহত্যা, নারী নির্যাতনের বিবরণ পাওয়া যায়।

দ্বিতীয়ত, ইংরেজদের সাহায্যকারী দেশীয় আমিন, গােমস্তা, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটদের কথা এবং তৎকালীন সমাজের আইন-আদালতের চিত্র এই নাটকে প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রশ্ন (১৮) 'নীলদর্পণ' নাটকটি লেখকের স্বনামে প্রকাশিত হয়নি কেন?

উত্তর:- নীলদর্পণ' নাটকটি লেখকের স্বনামে প্রকাশিত হয়নি কারণ - 

প্রথমত, নীলদর্পণ' নাটকের লেখক দীনবন্ধু মিত্র একজন সরকারি চাকুরে ছিলেন।

দ্বিতীয়ত, নীলকরদের বিরুদ্ধে লেখা এই নাটকটিতে নীলচাষিদের দুঃখদুর্দশার কথা তুলে ধরে তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরাগভাজন হতে পারতেন এবং তার চাকুরির ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারত।

তৃতীয়ত, তিনি মনে করেছিলেন পাদরি জেমস লঙ যেহেতু ইংরেজ সেহেতু তার নামে নাটকটা প্রকাশ করলে কোনাে সমস্যা হবে না।

প্রশ্ন (১৯) ‘নীলদর্পণ’ নাটকের কয়েকটি চরিত্রের নাম লেখাে।

উত্তর:- নীলদর্পণ' নাটকের প্রধান দুটি চরিত্র হল তােরাপ এবং গােলকচন্দ্র বসু। এ ছাড়াও নবীন মাধব, বিন্দু মাধব, সৈরিন্ত্রী, সাবিত্রী প্রমুখ ছিল এই নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র।

প্রশ্ন (২০) দেশপ্রেমের উন্মেষে নীলদর্পণ’ নাটকের কী ভূমিকা ছিল?

উত্তর:- দেশপ্রেমের উন্মেষে ‘নীলদর্পণ' নাটকের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ—

প্রথমত, দীনবন্ধু মিত্র তাঁর নীলদর্পণ' নাটকে অনিচ্ছুক নীলচাষিদের ওপর নীলকরদের অত্যাচারের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।

দ্বিতীয়ত, প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা চোখের জল ও মুখের হাসি তুলে ধরেছিলেন তার নাটকে।

তৃতীয়ত, নীলকরদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে রায়ত, সম্পন্ন কৃষক, মধ্যবিত্ত শ্রেণি একজোট হয়ে নীলচাষের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করেছিল তা ধরা পড়ে এই নাটকে, যা ভারতীয়দের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

প্রশ্ন (২১) ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা'-র কয়েকটি দিক চিহ্নিত করাে। অথবা গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকার বিষয়বস্তু কী ছিল?

উত্তর:- হরিনাথ মজুমদার বা ‘কাঙাল হরিনাথ’ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ ছিল এক সাময়িক পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি - 

প্রথমত, গ্রাম ও গ্রামবাসী প্রজার অবস্থা সহ সমসাময়িক বিভিন্ন খবর প্রকাশ করতেন।।

দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ সরকার ও তার সহযােগী জমিদার ও মহাজন কর্তৃক প্রজা শােষণ ও অত্যাচারের কথা প্রকাশিত হয়েছিল। এমনকি জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়ির জমিদারি ব্যবস্থাও ঠার সমালােচনার হাত থেকে রেহাই পায়নি।

তৃতীয়ত, এই পত্রিকায় সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও বীরগাথা প্রকাশিত হয়েছিল।

প্রশ্ন (২২) গ্রামাবার্তা প্রকাশিকা’ কেন ব্যতিক্রমী ছিল?

উত্তর:- গ্রামাবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা বিভিন্ন কারণে ব্যাতিক্রমী ছিল, যেমন - 

প্রথমত, এর আগের সমস্ত পত্রপত্রিকা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বলে তাতে শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানসিক প্রতিফলন ধরা পড়েছিল। কিন্তু গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ সর্বপ্রথম গ্রাম থেকেই প্রকাশিত হয়।

দ্বিতীয়ত, এতে গ্রামের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, বনা, নিপীড়নের কথা, নীলকরদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়েছিল বলেই এটি ব্যতিক্রমী।

তৃতীয়ত, এটিই ছিল বাংলার গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক।

প্রশ্ন (২৩) হরিনাথকে কাঙাল হরিনাথ’ বলা হয় কেন? অথবা, কে, কেন কাঙাল হরিনাথ নামে পরিচিত ছিলেন?

উত্তর:- হরিনাথকে ‘কাঙাল হরিনাথ’ বলা হয়, কারণ—

প্রথমত, কুমারখালি পাঠশালার পণ্ডিত হরিনাথ মজুমদার ‘কাঙাল হরিনাথ’ নামে ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন।

দ্বিতীয়ত, নিদারুণ আর্থিক দুরবস্থা, পরিকাঠামােগত অসুবিধে সত্ত্বেও দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে তিনি এই সমাজের নিপীড়িত, অত্যাচারিত, অবহেলিত মানুষের অবস্থা প্রকাশ করেন।

তৃতীয়ত, হরিনাথ নিজে শুধুমাত্র সমাজের ওইসব মানুষগুলির প্রতি সমব্যথীই ছিলেন না, এক গভীর একাত্মবােধে আবদ্ধ হয়েছিলেন বলে তিনি নিজে তার নামের আগে কাঙাল' কথাটি ব্যবহার করতেন।

প্রশ্ন (২৪) দেশীয় শিক্ষা বলতে কী বােঝ?

উত্তর:- প্রাক-ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা দেশীয় শিক্ষা নামে পরিচিত ছিল; এর বিভিন্ন দিকগুলি হল - 

প্রথমত, হিন্দুদের পাঠশালা ও টোল এবং মুসলিমদের মক্তব ও মাদ্রাসাগুলি ছিল দেশীয় শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র।

দ্বিতীয়ত, হিন্দুরা সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় এবং মুসলিমরা আরবি ও ফারসি ভাষায় ধর্মীয় কাহিনিসহ সাধারণ কিছু বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করত।

তৃতীয়ত, এই শিক্ষা ছিল ধর্মভিত্তিক এবং একারণেই এই শিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান, গণিত, ভূগােল, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদান অবহেলিত ছিল। 

প্রশ্ন (২৫) জনশিক্ষা কমিটি কেন তৈরি হয়েছিল?

উত্তর:- লর্ড হেস্টিংসের আমলে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা প্রদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে জনশিক্ষা কমিটি বা General Committee of Public Instruction (GCPI) তৈরি হয়েছিল।

প্রশ্ন (২৬) ১৮১৩ সালের চার্টার আইনে কী বলা হয়? ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের গুরুত্ব কী?

উত্তর:- ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের গুরুত্ব হল—

প্রথমত, ভারতে শিক্ষাবিস্তারের জন্য প্রতি বছর অন্তত এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করার জন্য সুপারিশ করা হয়।

দ্বিতীয়ত, এভাবে সরকার ভারতীয় প্রজাদের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

তৃতীয়ত, এই সুপারিশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিতর্ক।

প্রশ্ন (২৭) ভারতে শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক বলতে কী বােঝ?

উত্তর:- উনিশ শতকে ভারতীয় জনগণের মধ্যে ভারতে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে শিক্ষাচর্চার মাধ্যম’ কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে বিতর্ক দেখা দেয়, যা প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক নামে পরিচিত।

প্রথমত, এইচ. টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রমুখ পণ্ডিত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা অর্থাৎ প্রাচ্য ভাষাকে সমর্থন জানান।

দ্বিতীয়ত, স্যার জন শাের, চার্লস গ্রান্ট, লর্ড মেকলে প্রমুখ পণ্ডিত ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাচর্চার দাবি করেন।

তৃতীয়ত, শেষপর্যন্ত ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মেকলে মিনিটের মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষার নীতি গৃহীত হলে এই বিতর্কের অবসান ঘটে।

প্রশ্ন (২৮) কে, কবে ইংরেজি ভাষাকে ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ঘােষণা করেন? এর গুরুত্ব কী?

উত্তর:- লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি ভাষাকে ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ঘােষণা করেন। এর গুরুত্ব হল—

প্রথমত, ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের সরকারি নীতি গৃহীত হয়।

দ্বিতীয়ত, প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী বিতর্কের অবসান ঘটে। 

প্রশ্ন (২৯) মেকলে মিনিট’ কী ?

উত্তর:- প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে লর্ড বেন্টিঙ্কের শাসনকালে আইন সচিব টমাস মেকলে তার এক মিনিট বা প্রতিবেদনে ভারতে ইংরেজি ভাষায় পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করেন (২ ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ)। এটি মেকলে মিনিট বা প্রতিবেদন নামে পরিচিত। লর্ড বেন্টিঙ্ক শেষ পর্যন্ত এই মিনিটের ভিত্তিতে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের নির্দেশ দেন (৭ মার্চ, ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ)।

প্রশ্ন (৩০) ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর:- প্রাচ্য শিক্ষা অথবা পাশ্চাত্য শিক্ষা-কোনটি ভারতের মঙ্গলময় হবে, এই নিয়ে যখন তুমুল বিতর্ক চলছিল বেন্টিঙ্ক তখন তাঁর আইন সচিব মেকলের পরামর্শে ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে নীতি সরকারিভাবে গৃহীত হয় যা ছিল একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। 

প্রশ্ন (৩১) সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা কয়েকটি দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম লেখাে।

উত্তর:- সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে-(১) ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগে গড়ে ওঠা কলকাতা মাদ্রাসা (১৭৮১ খ্রি.), (২) উইলিয়াম জোনস্-এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এশিয়াটিক সােসাইটি (১৭৮৪ খ্রি.,) (৩) জোনাথান ডানকানের বেনারসে সংস্কৃত কলেজ (১৭৯১ খ্রি.) (৪) হােরেস হেম্যানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা সংস্কৃত কলেজ (১৮২০ খ্রি.) প্রভৃতি ছিল উল্লেখযােগ্য।

প্রশ্ন (৩২) চার্লস উড কে ছিলেন?

উত্তর:- স্যার চার্লস উড ছিলেন ইংল্যান্ডের বাের্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত তাঁর শিক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনাম ‘উডের প্রতিবেদন’ নামে পরিচিত। এর ওপর ভিত্তি করেই ভারতে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

প্রশ্ন (৩৩) উডের নির্দেশনামা কী? অথবা উডের নির্দেশনামা কেন বিখ্যাত? অথবা উডের ডেসপ্যাচ কী?

উত্তর:- ভারতের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষার মধ্যে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষাসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করার জন্য উনিশ শতকে চার্লস উডের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সুপারিশগুলিকে ‘উডের নির্দেশনামা’ বলা হয় (১৮৫৪ খ্রি.)। সুপারিশগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—

প্রথমত, সরকারি শিক্ষানীতি রূপায়ণ ও পরিচালনার জন্য সরকারি শিক্ষা বিভাগ গঠন করা।

দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রেসিডেন্সি শহরগুলিতে (কলকাতা, মাদ্রাজ ও বােম্বাই) একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।

প্রশ্ন (৩৪) ভারতে আধুনিক শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে চার্লস উডের দুটি সুপারিশ উল্লেখ করাে।

উত্তর:- ভারতে আধুনিক শিক্ষা প্রসারের জন্য চার্লস উড অনেকগুলি সুপারিশ (১৮৫৪ খ্রি.) করেন। এর মধ্যে দুটি সুপারিশ ছিল :

প্রথমত, সরকারি শিক্ষানীতি রূপায়ন ও পরিচালনার জন্য সরকারি শিক্ষা বিভাগ গঠন করা। 

দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রেসিডেন্সি শহরগুলিতে (কলকাতা, মাদ্রা ও বােম্বাই) একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। 

প্রশ্ন (৩৫) হান্টার কমিশন কী ?

উত্তর:- ভারতের উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে স্যার উইলিয়াম হান্টার নামে এক শিক্ষাবিদের নেতৃত্বে ভারত সরকার একটি কমিশন নিয়ােগ করে। এটি হান্টার কমিশন’ নামে পরিচিত।

         ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে এই কমিশন তার রিপাের্টে –প্রাথমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরােপসহ মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষার উন্নতিকরণ, আর্থিক সাহায্যদান এবং স্ত্রীশিক্ষায় উৎসাহদানের সুপারিশ করে। 

প্রশ্ন (৩৬) ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইনে (১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ) কী বলা হয়েছিল ?

উত্তর:- ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় আইনে (১৯০৪ খ্রি.) বলা হয়েছিল যে—(১) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাবে; (2) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে সরকার মনােনীত সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে; (৩) উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক নিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতির ব্যবস্থা করা হবে এবং (৪) কলেজগুলির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য কলেজগুলি পরিদর্শন করা হবে। 

প্রশ্ন (৩৭) ভারতে নারীশিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের অবদান কী ছিল ?

উত্তর:- উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতের নারীশিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের অবদানগুলি হল—

প্রথমত, ১৮৫০-এর দশকে দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শকের সরকারি পদে থাকার সুবাদে তিনি ৩৫টি (মতান্তরে ৪০টি) বালিকা বিদ্যালয় এবং ১০০টি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

দ্বিতীয়ত, তাঁর উল্লেখযােগ্য কৃতিত্ব ছিল ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বেথুন সাহেবের সহযােগিতায় হিন্দু ফিমেল স্কুল স্থাপন ও এই স্কুলের জন্য নিয়মাবলি রচনা।

প্রশ্ন (৩৮) শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কী অবদান ছিল ?

উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সারাজীবন ধরে শিক্ষাবিস্তারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, যেমন—

প্রথমত, নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

দ্বিতীয়ত, পাঠ্যপুস্তকের অভাব দূর করার জন্য তিনি নানা ধরনের সহজ পুস্তক রচনা করেন যার মধ্যে উল্লেখযােগ্য বর্ণপরিচয়, কথামালা, বােধােদয় ইত্যাদি। 

প্রশ্ন (৩৯) বেথুন কলেজ কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:- জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই স্কুলের সঙ্গে বালিগঞ্জের ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় সম্মিলিত বা একত্রিত হয়ে বেথুন কলেজে পরিণত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়।

প্রশ্ন (৪০) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কেন ? অথবা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য প্রশ্ন কী ?

উত্তর:- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্যগুলি হল—

প্রথমত, ওয়েলেসলি ভেবেছিলেন যে, ইংল্যান্ড থেকে যেসব যুবক ভারতে সিভিল সার্ভিসের চাকরি নিয়ে ভারতে আসবে তাদের এদেশের ভাষা, সামাজিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে পরিচয় থাকা দরকার।

দ্বিতীয়ত, এই সিভিল সার্ভেন্টদের ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি, আইন ও রীতিনীতি শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন (৪১) হিন্দু কলেজ কখন ও কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় ও ইউরােপীয়দের যৌথ উদ্যোগে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে রাজা রামমােহন রায়, ডেভিড হেয়ার এবং বিচারপতি হাইড ইস্ট-এর নাম বিশেষ উল্লেখযােগ্য। অধিকাংশের মতে, হিন্দু কলেজের প্রস্তাবক ডেভিড হেয়ার এদেশীয় ধনবান ব্যক্তিদের আর্থিক সহযােগিতায় এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, হাইড ইস্ট-ই এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। 

প্রশ্ন (৪২) বাংলার নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা বিশ্লেষণ করাে। 

উত্তর:- বাংলার নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ—

প্রথমত, তিনি নিজে সংস্কৃত পণ্ডিত হয়েও জাতির নৈতিক চরিত্র ও সামাজিক সুখ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নারীদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সােসাইটি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন (১৮১৯ খ্রি.)।

দ্বিতীয়ত, তিনি ক্যালকাটা স্কুল বুক সােসাইটির অবৈতনিক সম্পাদকরূপে তার বাড়িতে ক্যালকাটা স্কুল সােসাইটির অধীনস্থ স্কুলের ছাত্রীদের পরীক্ষা দানের সুযােগ করে দেন।

তৃতীয়ত, স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের সমর্থনে রাধাকান্ত দেব গৌরমােহন বিদ্যালংকারকে স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক’ (১৮২২ খ্রি.) পুস্তিকাটি রচনার জন্য অনুরােধ করেন ও সাহায্য করেন। এই সমস্ত কারণে জে. ডি. বেথুন রাধাকান্ত দেবকে স্ত্রীশিক্ষার সমর্থক প্রথম বাঙালি’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন (৪৩) পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাধাকান্ত দেব গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

উত্তর:- রাধাকান্ত দেব কলকাতার রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের নেতা হলেও পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের একজন উৎসাহী সমর্থক ছিলেন, যেমন - 

প্রথমত, তিনি হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা এবং ক্যালকাটা স্কুল বুক সােসাইটি’ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন।

দ্বিতীয়ত, নারীশিক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষাকে প্রাধান্য দেন এবং তার সহযােগিতায় ব্যাপটিস্ট মিশনারিরা ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন (৪৪) ডেভিড হেয়ার বিখ্যাত কেন ? অথবা  পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে ডেভিড হেয়ারের দুটি অবদান উল্লেখ করো। 

উত্তর:- স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ডেভিড হেয়ার (১৭৭৫-১৮৪২) শিক্ষাবিস্তারে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যেমন -

প্রথমত, তিনি প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। 
দ্বিতীয়ত, পটলডাঙা অ্যাকাডেমি (হেয়ার স্কুল), ক্যালকাটা। স্কুল বুক সােসাইটি' ও 'ক্যালকাটা স্কুল সােসাইটি প্রতিষ্ঠার। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন মানবতাবাদী ও সমাজসেবী।

তৃতীয়ত, তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও তার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

প্রশ্ন (৪৫) ক্যালকাটা স্কুল সােসাইটি এবং ক্যালকাটা স্কুল বুক সােসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কেন ? অথবা, ডেভিড হেয়ার ক্যালকাটা স্কুল সােসাইটি’ কেন স্থাপন করেন ?

উত্তর:- ডেভিড হেয়ার পুরােনাে বিদ্যালয়ের সংস্কার সাধন ও নতুন। বিদ্যালয় তৈরি করার জন্য ক্যালকাটা স্কুল সােসাইটি (১৮১৮ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন।

ডেভিড হেয়ার কর্তৃক ক্যালকাটা স্কুল বুক সােসাইটি (১৮১৭ খ্রি.) প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল— (১) ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা, (২) বিদ্যালয়ের উপযােগী পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং (৩) দরিদ্র স্কুল ছাত্রদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা।

প্রশ্ন (৪৬) বেথুন বিখ্যাত কেন ?

উত্তর:- জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ভারতের বড়লাটের কাউন্সিলের আইন সদস্যরূপে যােগদান করেন (১৮৪৮ খ্রি.)। তিনি এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে সচেষ্ট হন এবং কয়েকজন বিশিষ্ট বাঙালির সহযােগিতায় ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্কুল পরবর্তীকালে 'বেথুন স্কুল’ নামে পরিচিত হয়।

প্রশ্ন (৪৭) শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে কারা এবং কেন পরিচিত ছিলেন ? অথবা, উইলিয়াম কেরি বিখ্যাত কেন ?

উত্তর:- শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশনের তিন সদস্য— -উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড ও জে মার্শম্যান শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁদের এরূপ পরিচিতির কারণ হল—

প্রথমত, এঁরা তিনজন ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের জন্য শতাধিক স্কুল ও শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা (১৮১৮ খ্রি.) করেন।

দ্বিতীয়ত, এঁদের উদ্যোগেই শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠিত মিশন প্রেস বাংলা ভাষায় মুদ্রণ ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করে।

তৃতীয়ত, ভারতীয় সংবাদপত্রের বিকাশে এই তিনজনের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন (৪৮) ভারতে শিক্ষাবিস্তারে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান কী ছিল ?

উত্তর:- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত শ্রীরামপুর মিশন এদেশের শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, যেমন - 

প্রথমত, পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে শতাধিক স্কুল ও শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত (১৮১৮ খ্রি.) হয়।

দ্বিতীয়ত, এই মিশনের উদ্যোগেই ভারতে মুদ্রণযন্ত্রের প্রসার ঘটে এবং ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও স্কুল বুক সােসাইটির চাহিদামতাে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও তা সরবরাহ করে শিক্ষার প্রসারে সাহায্য করে।

তৃতীয়ত, প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ('দিন্দর্শন’, ১৮১৮ খ্রি.) ও বাংলা ব্যাকরণ রচনা প্রকাশের ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনের অসামান্য অবদান ছিল।

প্রশ্ন (৪৯) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থার কার্য পরিচালনা করত ?

উত্তর:- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন হত না, কারণ—

প্রথমত, শুরুতে এই বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজকে অনুমােদন প্রদান করত এবং এন্ট্রান্স ও বি এ পরীক্ষা পরিচালনা করত।

দ্বিতীয়ত, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভরতির জন্য প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বি এ এবং ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম এম.এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

তৃতীয়ত, পরীক্ষা শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সার্টিফিকেট ও ডিগ্রি প্রদান।

প্রশ্ন (৫০) ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে কোথায় ও কবে স্থাপিত হয় ?

উত্তর:- ভারতে কলকাতায় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত।

এটি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি স্থাপিত হয়েছিল। 

প্রশ্ন (৫১) ডা, মধুসূদন গুপ্ত বিখ্যাত কেন ? অথবা, মধুসূদন গুপ্ত স্মরণীয় কেন ?

উওর:- ডা. মধুসূদন গুপ্ত (১৮০৬-১৮৫৬ খ্রি.) ছিলেন বিখ্যাত ও স্মরণীয় ব্যক্তি, কারণ—

প্রথমত, তিনি ছিলেন কলকাতা সংস্কৃত কলেজের ছাত্র এবং পরবর্তীকালে এই কলেজে তিনি হিন্দু ঔষধের পণ্ডিতরূপে নিযুক্ত হন (১৮৩০ খ্রি.)।

দ্বিতীয়ত, কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এখানে ডাক্তাররূপে যােগদান করেন ও পরবর্তীকালে তিনি প্রথম মর্যাদার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন হন।

তৃতীয়ত, ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি হিন্দু কুসংস্কার উপেক্ষা করে নিজ হাতে শব ব্যবচ্ছেদ করেন এবং এর দশ মাস পর ডাক্তার গুডিভের তত্ত্বাবধানে চারজন মেডিকেল ছাত্র (রাজকৃষ্ণ দে, উমাচরণ শেঠ, দ্বারকানাথ গুপ্ত ও নবীনচন্দ্র মিত্র)-কে সাথে নিয়ে পুনরায় শব ব্যবচ্ছেদ করেন।

প্রশ্ন (৫২) উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনগুলির প্রধান লক্ষ্য বা মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তর:- উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনগুলির প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল—

প্রথমত, প্রগতিশীল ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারা দ্বারা সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও কুপ্রথার অবসান ঘটানাে।

দ্বিতীয়ত, নারীমুক্তি ও নারীকল্যাণ সাধন করা।

তৃতীয়ত, সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটানাে।

প্রশ্ন (৫৩) ব্রাহ্মসমাজ কে, কেন প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর:- ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট রাজা রামমােহন রায় ‘ব্রাত্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীকালে ‘ব্রাত্যসমাজ’ (জানুয়ারি ১৮৩০) নামে পরিচিত হয়। ব্রাত্মসমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি হল—

প্রথমত, খ্রিস্টধর্ম প্রচারকদের হিন্দুধর্ম সম্পর্কে অপপ্রচারের হাত থেকে হিন্দুধর্ম ও সমাজকে রক্ষা করা।

দ্বিতীয়ত, হিন্দুধর্মের বহু দেবতাবাদ ও আচার অনুষ্ঠান এবং কুসংস্কার দূর করে একেশ্বরবাদী ব্রাহ্ম আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করা।

প্রশ্ন (৫৪) ব্রাহ্মসমাজের যে-কোনাে দুটি সমাজসংস্কারমূলক কাজের উল্লেখ করাে।

উত্তর:- ব্রাহ্মসমাজের দুটি সমাজসংস্কারমূলক কাজ হল—

প্রথমত, হিন্দুধর্মের প্রচলিত কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতা দূর করে একেশ্বরবাদের প্রচার বা নিরাকার ব্রত্মের উপাসনা করা এবং খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরণের হাত থেকে হিন্দুধর্মকে রক্ষা করা।

দ্বিতীয়ত, ব্রাহ্রসমাজের আন্দোলনের ফলে সতীদাহপ্রথার অবসান, স্ত্রীশিক্ষার প্রসারসহ শিক্ষার বিস্তার, অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা হ্রাস পেয়েছিল।

প্রশ্ন (৫৫) কে, কবে সতীদাহপ্রথা নিবারণ করেন? অথবা কে, কেন সতীদাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন ?

উত্তর:- রাজা রামমােহন রায়ের সহযােগিতায় গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর এক আইনের (সপ্তদশ বিধি’) মাধ্যমে সতীদাহপ্রথা নিবারণ করেন। 

প্রশ্ন (৫৬) ব্রাহ্ম আন্দোলনের দুটি সীমাবদ্ধতা লেখাে।

উত্তর:- ব্রাহ্ম আন্দোলনের দুটি তিনটি সীমাবদ্ধতা হল - 

প্রথমত, ব্রাত্ম আন্দোলন ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক ইংরেজি শিক্ষিত মানুষের একেশ্বরবাদী ও সমাজসংস্কারমূলক আন্দোলন।

দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলন সমসাময়িক বহুদেবতাবাদে বিশ্বাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের কাছে কিছুটা হিন্দু-বিরােধী আন্দোলনরূপে প্রতিভাত হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, ব্রাহ্ম আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে মতাদর্শগত ও ব্রাত্ম সমাজে বিভাজন, কথ্য বাংলার পরিবর্তে সংস্কৃত ভাষায় ধর্মপ্রচার প্রভৃতি ঘটনা ব্রাত্ম আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। 

প্রশ্ন (৫৭) রাজা রামমােহন রায়কে কেন ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ' বলা হয় ?

উত্তর:- রাজা রামমােহন রায় ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ হয়, কারণ—

প্রথমত, তিনি প্রাচীন হিন্দু, ইসলামীয় ও ইউরােপীয় সংস্কৃতি আত্মস্থ করে ধর্ম, সমাজ, সাহিত্য ও রাজনীতিতে নতুন চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটান এবং নবজাগরণের সূচনা করেন।

দ্বিতীয়ত, আত্মীয় সভা’ ও ‘ব্রাত্মসভা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধর্মীয় ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন এবং সতীদাহপ্রথা, বহুবিবাহ প্রথা, জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে সমাজসংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে যে ধারার সূচনা করেছিলেন তা ভারতকে আধুনিক করে তুলতে সাহায্য করেন। 

প্রশ্ন (৫৮) ডিরােজিওকে মনে রাখা হয় কেন ? অথবা ডিরােজিও বিখ্যাত কেন ?

উত্তর:- ডিরােজিওকে মনে রাখার কারণগুলি হল—

প্রথমত, হিন্দু কলেজের যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী ও শিক্ষক ডিরােজিও ছিলেন উনিশ শতকের প্রথমার্ধের একজন উল্লেখযােগ্য সমাজসংস্কারক |

দ্বিতীয়ত, প্রগতিশীল চিন্তাধারার ভিত্তিতে তিনি হিন্দু সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি এবং কুসংস্কারের বিরােধিতা করেন।

তৃতীয়ত, নব্যবঙ্গ’বা ইয়ংবেঙ্গল’ আন্দোলনের নেতা হিসেবে ডিরােজিওকে মনে রাখা হয়।

প্রশ্ন (৫৯) কার উদ্যোগে নব্যবঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়েছিল? এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তর:- হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিও-র উদ্যোগে নব্যবঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়েছিল।

ইয়ংবেঙ্গল দলের উদ্দেশ্য ছিল : (১) জনসাধারণের মধ্যে প্রগতিশীল ধ্যানধারণা প্রচার করা ও যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠা, (২) হিন্দুসমাজে প্রচলিত ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরােধিতা করা এবং (৩) যুক্তিবাদী আধুনিক পাশ্চাত্য চিন্তাধারা ও শিক্ষার বিস্তার ঘটানাে।

প্রশ্ন (৬০) ডিরােজিও কেন কর্মচ্যুত হন ?

উত্তর:- ডিরােজিও কর্মচ্যুত হন, কারণ—

প্রথমত, হিন্দু কলেজের অধ্যাপকরূপে তিনি তার ছাত্রদের যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচয় ঘটান।

দ্বিতীয়ত, তিনি ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসােসিয়েশন' নামে একটি বিতর্ক সভা গঠন করে হিন্দুসমাজের রক্ষণশীলতা, কুসংস্কার ও প্রচলিত কুপ্রথাগুলি সমালােচনা করেন।

তৃতীয়ত, ডিরােজিওর প্রভাবে তার ছাত্র সম্প্রদায় প্রকাশ্যে হিন্দুধর্মের আচার-ব্যবহার লঙ্ঘন করতে থাকলে হিন্দুসমাজের রক্ষণশীল সমাজপতিরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ডিরােজিওর বিরদ্ধে নালিশ জানান এবং এর ফলে ডিরােজিও কর্মচত হন।

প্রশ্ন (৬১) নব্যবঙ্গ গােষ্ঠী কাদের বলা হত ?

উত্তর:- উনিশ শতকের প্রথমার্ধে হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিওর অনুগামীরা ইয়ং বেঙ্গল’ বা ‘নব্যবঙ্গ সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত। এই গােষ্ঠীর দুটি উল্লেখযােগ্য দিক হল—

প্রথমত, কৃষ্ণমােহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগােপাল ঘােষ, রামতনু লাহিড়ি, প্যারীচাঁদ মিত্র প্রমুখ ছিলেন নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা।

দ্বিতীয়ত, ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা তাদের পত্রিকাগুলির মাধ্যমে হিন্দুসমাজের বহুবিবাহ, নারীশিক্ষা, জুরির সাহায্যে বিচার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন ও তাদের সুচিন্তিত মতামত দেন। 

প্রশ্ন (৬২) ‘সাধারণ জ্ঞানােপার্জিকা সভা’ কী ?

উত্তর:- ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে ডিরােজিওর অনুগামী নব্যবঙ্গ সম্প্রদায়ের সদস্যগণ সাধারণ জ্ঞানােপার্জিকা সভা’ নামে এক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের সর্বাঙ্গীণ অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন এবং তা জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করার উদ্দেশ্যেই এই সভা স্থাপিত হয়। 

প্রশ্ন (৬৩) সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা কী ছিল ?

উত্তর:- নব্যবঙ্গ আন্দোলন সর্বস্তরের মানুষের মনকে স্পর্শ করতে না পারায় এই আন্দোলন সমাজজীবনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবুও এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না, কারণ—

প্রথমত, এই আন্দোলন ভারতীয়দের যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী মানসিকতা গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, এদের প্রচেষ্টার ফলেই বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, নারীশিক্ষার অগ্রগতি ঘটে এবং ভারতীয়রা কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন (৬৪) বিজয়কৃয় গোস্বামী বিখ্যাত কেন ? অথবা বিজয়কৃয় গােস্বামী ব্রাত্মধর্মে কী পরিবর্তন আনেন ?

উওর:- বিজয়কৃয় গােস্বামী বিখ্যাত, কারণ—

প্রথমত, বিজয়কৃষ্ণ গােস্বামী (১৮৪১-১৮৯১খ্রি.) ছিলেন ব্রাত্মধর্মের একজন বিখ্যাত প্রচারক।

দ্বিতীয়ত, তিনি কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে কলকাতার বাইরে পূর্ববঙ্গে ব্রাত্মধর্ম প্রচারের পাশাপাশি এই অঞ্চলে ব্রাত্ম উপাসনা মন্দির, বালিকা বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করেন।

তৃতীয়ত, তিনি পরবর্তীকালে নব্য বৈষুববাদের প্রবর্তন করেন ও রাধাকৃয়ের মূর্তিপূজার অভিযােগে সাধারণ ব্রাম্মসমাজ কর্তৃক তিনি অভিযুক্ত হন এবং শেষপর্যন্ত তিনি ব্রাহ্বসমাজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ও শেষ ১৪ বছর তিনি বৈয়বধর্ম প্রচার করেন। 

প্রশ্ন (৬৫) লালন ফকির বিখ্যাত কেন ? অথবা, লালন ফকির স্মরণীয় কেন ? 

উত্তর:- লালন ফকির ছিলেন একজন বাউল সাধক, মানবতাবাদী এবং জাতিবিদ্বেষের তীব্র বিরােধী। মুরশিদাবাদের চেউরিয়াতে তিনি বাউল সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে তিনি প্রায় দশ হাজারেরও বেশি সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বাউল গান রচনা করেন। 

প্রশ্ন (৬৬) হাজি মহম্মদ মহসিন বিখ্যাত কেন ? অথবা, হাজি মহম্মদ মহসিন কে ছিলেন ?

উত্তর:- হুগলিতে জন্মগ্রহণকারী হাজি মহম্মদ মহসিন (১৭৩০-১৮১২ খ্রি.) বিখ্যাত ছিলেন, কারণ—

প্রথমত, তিনি ছিলেন একজন বিত্তবান, মানবতাবাদী ও পরােপকারী ব্যক্তি।

দ্বিতীয়ত, তিনি তার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি ও সম্পদের ওপর ভিত্তি করে দানমূলক একটি ট্রাস্টি সংস্থা গঠন করেন।

তৃতীয়ত, সমাজসেবামূলক কাজ ও শিক্ষার প্রসারে তিনি এবং তাঁর এই ট্রাস্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

প্রশ্ন (৬৭) তত্ত্ববােধিনী সভা ও তত্ত্ববােধিনী পত্রিকা বলতে কী বােঝায় ?

উত্তর:- ব্রাত্যসমাজ আন্দোলনকে সুস্পষ্ট কর্মপ্রণালী ও প্রতিষ্ঠানের ওপর গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে তত্ত্ববােধিনী সভা স্থাপিত হয়। এই তত্ত্ববােধিনী সভার মুখপত্র ছিল তত্ত্ববােধিনী পত্রিকা। অক্ষয়কুমার দত্তের সম্পাদনায় তত্ত্ববােধিনী পত্রিকা সমকালীন বাংলার শ্রেষ্ঠ সাময়িক পত্রে পরিণত হয়।

প্রশ্ন (৬৮) ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হল কেন ?

উত্তর:- কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে গঠিত ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্রসমাজ (১৮৬৬ খ্রি.) বিভিন্ন কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যেমন—

প্রথমত, কয়েকটি বিষয় (কেশবচন্দ্রের খ্রিস্টধর্মের প্রীতি ও ইংরেজ প্রীতি, শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ভক্তিবাদ ও হিন্দু দেবদেবীর প্রতি বিশ্বাস)-কে কেন্দ্র করে শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমােহন বসু প্রমুখ নবীন ব্রাত্মনেতার সঙ্গে কেশবচন্দ্র সেনের মতাদর্শগত বিরােধ দেখা দেয়।

দ্বিতীয়ত, কেশবচন্দ্র সেন ব্রাত্মবিবাহ আইনকে অমান্য করে তার ১৪ বছরের নাবালিকা কন্যা সুনীতি দেবীর সঙ্গে কোচবিহারের নাবালক হিন্দু রাজপুত্র নৃপেন্দ্র নারায়ণের বিবাহ দেন।

প্রশ্ন (৬৯) রাজা রামমােহন আত্মীয় সভা কেন স্থাপন করেন ?

উত্তর:- রাজা রামমােহন রায় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন। এক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্যগুলি ছিল—

প্রথমত, বেদ এবং উপনিষদের ওপর ভিত্তি করে হিন্দুধর্মের সংস্কার, হিন্দুধর্মের কুসংস্কার, পৌত্তলিকতা দূর করে একেশ্বরবাদের প্রতিষ্ঠা ও নিরাকার ব্রত্মের উপাসনা করা।

দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান মিশনারিদের আক্রমণের হাত থেকে হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করা।

প্রশ্ন (৭০) শ্রীরামকৃষ্ণ কীভাবে ধর্মসমন্বয়বাদী আদর্শ বাস্তবায়িত করেন ? অথবা শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্মসমন্বয় বলতে কী বােঝ ?

উত্তর:- শ্রীরামকৃষ্ণদেবের আবির্ভাবের আগে বাংলার হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের প্রসারকে কেন্দ্র করে একেশ্বরবাদ ও বহুদেবতাবাদ সম্পর্কিত দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি - 

প্রথমত, বিভিন্ন ধর্ম বর্ণিত ঈশ্বরলাভের পথ ধরে ঈশ্বর সাধনা করেন ও সফল হন।

দ্বিতীয়ত, তাঁর উপলব্ধির ভিত্তিতে তিনি প্রচার করেন যে, সাকার ও নিরাকার (একই ঈশ্বরের বিচিত্র রূপ), একেশ্বরবাদ ও বহুদেবতাবাদ হল ধর্মের বিভিন্ন অঙ্গ।

তৃতীয়ত, ধর্মসমন্বয়বাদী আদর্শ প্রচারের জন্য তিনি বলেছিলেন যত মত তত পথ'।

প্রশ্ন (৭১) বিবেকানন্দ কীভাবে নব্যবেদান্ত মতাদর্শের সূচনা করেন ? অথবা নব্য বেদান্ত’ কী ?

উত্তর:- বিবেকানন্দ বেদান্তের নতুন যে ব্যাখ্যা দেন তা নব্যবেদান্ত নামে পরিচিত। এর উল্লেখযােগ্য দিকগুলি হল—

প্রথমত, অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী বিবেকানন্দ বনের বেদান্ত’কে ‘ঘরে’ আনার কথা প্রচার করেন এবং বেদান্তকে মানুষের কল্যাণে কাজে ব্যবহারের কথা বলেন।

দ্বিতীয়ত, মানবতাবাদী ও সমাজপ্রেমী বিবেকানন্দ আত্মমুক্তির চেয়ে সমাজের উন্নতির উপর বেশি গুরুত্ব আরােপ করেন।

তৃতীয়ত, তিনি জাতির মধ্যে ত্রাণকার্য, শিক্ষার প্রসার, সুচিকিৎসার প্রসার এবং প্রকৃত মানুষ গড়ার উদ্দেশ্যে রামকৃয় মিশন প্রতিষ্ঠা করেন (৫ মে, ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ)।

প্রশ্ন (৭২) এশিয়াটিক সােসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কেন ?

উত্তর:- ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম জোনস প্রশাসনিক প্রয়ােজনে প্রাচ্য ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা এবং প্রাচ্য বিষয়ের গবেষণার জন্য কলকাতায় এশিয়াটিক সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সােসাইটি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের পৃষ্ঠপােষকতাও ছিল।

প্রশ্ন (৭৩) কলকাতা মাদ্রাসা কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তর:- মুসলিম আইন (ইসলামিক), ফারসি এবং আরবি শিক্ষার জন্য ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা মাদ্রাসা স্থাপন করেছিলেন। এ ছাড়া বিচার বিভাগের কাজে নিয়ােগের জন্য ইসলামি আইন এবং আরবি ও ফারসি জানা উপযুক্ত অফিসার তৈরি করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। 

প্রশ্ন (৭৪) বাংলার নবজাগরণ কী ?

উত্তর:- উনিশ শতকে বাংলায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আদর্শবাদের ভিত্তিতে সমাজ ও সংস্কৃতিতে এক নবচেতনার উন্মেষ ঘটে, যা নবজাগরণ নামে পরিচিত। নবজাগরণের দিকগুলি হল -

প্রথমত, বাংলা তথা ভারতের প্রাচীন গৌরবময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন করা।

দ্বিতীয়ত, তবে বাংলার নবজাগরণ ক্রমশ সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি ও বিজ্ঞানচিন্তার ক্ষেত্রেও পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। 

প্রশ্ন (৭৫) বাংলায় নবজাগরণের প্রধান ভিত্তি কী ছিল ? 

উত্তর:- বাংলায় নবজাগরণের প্রধান ভিত্তি ছিল প্রাচ্যবাদ ও পাশ্চাত্যবাদ এবং এই দুই আদর্শের ঘাত-প্রতিঘাতেই সৃষ্টি হয় বাংলার নবজাগরণ। প্রাচ্যবাদী প্রতিষ্ঠানগুলিতে (এশিয়াটিক সােসাইটি, কলকাতা মাদ্রাসা, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও কলকাতা সংস্কৃত কলেজ) প্রাচ্যবাদের চর্চা ভারতের ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটায়। অন্যদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষা বাংলায় মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ, প্রগতিবাদী আদর্শের সঞ্চার ঘটায়।

প্রশ্ন (৭৬) বাংলার নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলি কী ?

উত্তর:- বাংলায় নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলি হল—

প্রথমত, সমাজ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলন মূলত হিন্দুসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, তাই তা ছিল হিন্দু নবজাগরণ। 

দ্বিতীয়ত, নবজাগরণ শহরকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন হওয়ার কারণে এর প্রভাব ছিল সীমিত।

তৃতীয়ত, নবজাগরণের ফলে জমিদার, ব্যবসায়ী, শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিরা লাভবান হলেও কৃষক-সহ সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়নি।

প্রশ্ন (৭৭) ইটালির নবজাগরণের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের দুটি বৈসাদৃশ্য লেখাে।

উত্তর:- ইটালির নবজাগরণের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের দুটি বৈসাদৃশ্য হল—

প্রথমত, ইটালির নবজাগরণের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটেছিল মুক্ত পরিবেশে কিন্তু বাংলার নবজাগরণের বিকাশ ঘটেছিল ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে।

দ্বিতীয়ত, ইটালির স্বাধীন নগর রাষ্ট্রগুলির বুর্জোয়া ব্যবসায়ী, বণিক শ্রেণি ও শাসকবর্গ ইটালীয় নবজাগরণের পৃষ্ঠপােষকতা দান করেছিল, কিন্তু বাংলার নবজাগরণের মূল পৃষ্ঠপােষক ও কারিগর ছিল চাকরজীবী, উকিল, ডাক্তার ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি।


**************** সমাপ্ত *****************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন