Anwar Study Point

সফলতার সাথী

Breaking

রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর


▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর ▪️Class Seven History 2nd Chapter Questions and Answers ▪️ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের কয়েকটি ধারা : খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক ▪️

১. ভারতবর্ষে সামন্ততন্ত্র গড়ে ওঠার কারণ ও ফলাফল কী ছিল ?
উত্তর :- জমির মালাকানা ও জমি থেকে রাজস্বের আয়কে আত্মসাৎ করার জন্য গড়ে ওঠে সামন্ততন্ত্র। গুপ্তযুগের আগে থেকেই ব্রাহ্মণদের ও সরকারি প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের জমি দান করার একটি প্রথা চালু হয়। তবে গুপ্তযুগে তাা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এসময় রাজার সঙ্গে  ব্রাহ্মণদের সুসম্পর্ক ছিল। কারণ, ব্রাহ্মণরা ঠিক করেে দিতেন কোন রাজার বংশ কোন্ অলৌকিক শক্তি থেকে শুরু হয়েছেে, এর  ফলে রাজবংশের সম্মান বাড়ত। আর তাই রাজা খুশি হয়ে ব্রাহ্মণদের  জমি দান করতেন। এর ফলে প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্রাহ্মণেরা বাা অন্যান্য মানুষেরা একদিকে যেমন জমি ও রাজস্বের ওপর নিজেদের অধিকার কায়েম করতেে লাগল অপরদিকে এরাই সামন্ত ও মহাসামন্ত উপাধি গ্রহণ করে শাসনক্ষমতাকে নিজেদের হস্তগত করল।
▪️ফলাফল : সামন্ততন্ত্র গড়ে ওঠার ফলে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ল। বাধ্য হয়ে রাজা তার ক্ষমতাকে ব্রাহ্মণ ও প্রশাসকদের হাতে ছেড়ে দিলেন। তবে সামন্ততন্ত্রের  জন্যই গুপ্তযুগে ঐক্যবদ্ধ সাম্রাজ্য গড়ে উঠতে পারেননি।

২. পাল বংশের উত্থান কীভাবে হয়েছিল ?
উত্তর :- বাংলার প্রথম সার্বভৌম নরপতি শশাঙ্কের মৃত্যুর পর (৬৩৭ খ্রিঃ) বাংলার রাজনীতির গতি বদলে যায়। সারা বাংলায় যোগ্য শাসক না থাকায় প্রায় একশো বছর এক প্রচন্ড অরাজক অবস্থা বিরাজ করে। বারবার বহিঃশত্রুর আক্রমণে সাধারণ মানুষের অবস্থা অসহনীয় হয়ে ওঠে। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং মাৎস্যন্যায়ের উদ্ভব ঘটে। খালিমপুর লিপি থেকে জানা যায়, বিশৃঙ্খলা দূর করার জন্য বাংলার 'প্রকৃতিপুঞ্জ' বা প্রধান সামন্তরা অষ্টম শতকের মাঝামাঝি গোপাল নামে এক তরুণ উৎসাহী সামন্তকে বাংলার  রাজা নির্বাচিত  করেন (৭৫০ খ্রিঃ) । গোপালের দায়িত্বশীল, দূরদর্শী, সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলায়  শান্তি ফিরে আসে। গোপাল পালের নাম অনুসারে তাঁর বংশের নাম হয় পাল বংশ। এভাবেই পাল বংশের উত্থান ঘটে।

৩. পালরাজাদের শাসনকাল বর্ণনা করো ।
উত্তর :- পাল রাজাদের আদি নিবাস ছিল বরেন্দ্র অঞ্চলে। পাল শাসনের প্রথম  একশো বছর ছিল তাদের ক্ষমতাা বিস্তারের সময়। এরপরের প্রায়   একশো ত্রিশ বছর ধরে পালদের ক্ষমতাা কমতে থাকে। আবার দশম শতকের শেষ দিক থেকে পালদের ক্ষমতাা অনেকটা বৃদ্ধি  পেয়েছিল।
          মাৎস্যন্যায়ের সময় বাংলার প্রকৃতিপুঞ্জ বা প্রধান সামন্তরা অষ্টম শতকের মাঝামাঝি গোপাল নামে এক তরুণ উৎসাহী সামন্তকে বাংলার রাজা নির্বাচিত করেন। পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোপাল। বাংলার অধিকাংশ এলাকাকে তিনি নিজের শাসনের আওতায় এনেছিলেন। গোপালের উত্তরাধিকারী ধর্মপাল উত্তর ভারতের কনৌজকে কেন্দ্র করে যে ত্রিশক্তি সংগ্রাম চলেছিল তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সময়ে উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে অন্তত বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত এবং উত্তর-পশ্চিমে কম্বোজ দেশ থেকে পূর্বে প্রাগজ্যোতিষপুর পর্যন্ত পাল সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়েছিল। দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকুট, পশ্চিম ভারতের প্রতিহার ও ওড়িশার শাসকরা নবম শতকে পালদের বাংলা ও বিহারের অনেক এলাকা জয় করেছিল।

৪. লক্ষ্মণসেনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর :- বল্লালসেনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র লক্ষ্মণসেন   ৬০ বছর বয়সে (১১৭৯ খ্রিঃ) বাংলার সিংহাসনে বসেন। পিতা ও পিতামহের মতো সামরিকবলে তিনি বিভিন্ন অঞ্চল জয় করেন। তিনি গৌড় জয় করেে সেখানে নিজ নাম অনুসারে নতুন রাজধানী লক্ষ্মণাবতী নির্মাণ করেন। তাঁর বিজিত অঞ্চলগুলি ছিল কলিঙ্গ, কামরূপ, কাশী, পুরী, এলাহাবাদ প্রভৃতি। সম্ভবত তিনি কনৌজও অধিকার করেন।  লক্ষ্মণসেনের শাসনকালের শেষদিকে বাংলায় তুর্কি আক্রমণ হয়। ১২০৪-৫ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার-উদ্দিন - বখতিয়ার খলজি নামে এক ভাগ্যান্বেষী তুর্কির আক্রমণ প্রতিরোধ না করে লক্ষ্মণসেন রাজধানী পরিত্যাগ করেন  ও পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরেে রাজধানী স্থাপন  করেন। তিনি প্রথম জীবনে শিব‌ের উপাসক ছিলেন, পরে তিনি বৈষ্ণবধর্মে  দীক্ষিত হন। 'গীতগোবিন্দ' রচয়িতা জয়দেব ও 'পবনদূত' রচয়িতা ধোয়ি ছিল‌েন  লক্ষ্মনসেনের সভাসদ। তাঁর রাজধানী লক্ষ্মণাবতীতে বাা লখনৌতিতে প্রথমে থাকলেও পরেে নবদ্বীপে রাজধানী স্থানান্তর করেন। এরপরেে পূর্ববঙ্গে কিছুকাল রাজত্বের পর ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মণসেনের মৃত্যুু হয়।

৫. দক্ষিণ ভারতে চোল শক্তি বর্ণনা করো।
উত্তর :- দক্ষিণ ভারতেও বেশ কিছু আঞ্চলিক শক্তির বিকাশ হয়েছিল। পল্লব, পান্ড্য ও বিশেষত চোলরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কাবেরী ও শাখানদীগুলির বদ্বীপকে ঘিরে চোল রাজ্য গড়ে উঠেছিল। সেখানকার রাজা মুট্টাবাইয়াক‌ে সরিয়ে বিজয়ালয় চোল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। থাঞ্জাভুর বাা  তাঞ্জোর নামে এক নতুন নগরী তৈরি হয় যা চোলদের রাজধানী ছিল। বিজয়ালয়ের সুযোগ্য উত্তরসূরিরা রাজ্যকেে আরও সম্প্রসারিত করেন। দক্ষিণের পান্ড্য ও উত্তরের পল্লব অঞ্চল  চোলদের দখলে আসে। ৯৮৫ সালে প্রথম রাজরাজ বর্তমান কেরল, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেে চোল প্রতিপত্তিি বৃদ্ধি করেন। তাঁর পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র চোল কল্যাণীর চালুক্যশক্তিকে পরাজিত করেন। বাংলার পালবংশের বিরুদ্ধে এক অভিযানে গঙ্গা নদীর তীরে পাল রাজাকে হারিয়ে তিনি গঙ্গাইকোন্ডচোল উপাধি নেন। প্রথম রাজারাজ ও রাজেন্দ্র চোল দুজনেই দক্ষ নৌবাহিনী তৈরি করেন। তার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে  ভারতীয় বাণিজ্যকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা চোলদের পক্ষে সম্ভব হয়।


▪️File Name  :- সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয়                                                অধ্যায় ৫ নম্বরের
▪️Language  :- Bengali

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন