Type Here to Get Search Results !

নব্যপ্রস্তর যুগ সম্বন্ধে যা জানো লেখ ।


💠 নব্যপ্রস্তর যুগ সম্বন্ধে যা জানো লেখ ।

উত্তর :- আমাদের আলোচনার বিষয় নব্যপ্রস্তর যুগ। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে নব্যপ্রস্তর যুগের আগমন হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। 
১. বেলুচিস্তানের মেহেরগড়ে নব্যপ্রস্তর পর্বের সূচনা হয় ৭০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে অথবা তার এক বা দুই হাজার বছর আগে বা পরে।
২. কিলি গুল মহম্মদ - এ নব্যপ্রস্তর পর্বের সূচনা হয় ৫০০০ বা ৫৫০০ খ্রিঃ পূঃ।
৩. কাশ্মীরে এই পর্বের সূচনা হয় ৩০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। 
৪. বিহারের চিরান্দে খ্রিস্ট পূর্বাব্দ তৃতীয় সহস্রাব্দের মধ্যভাগে অথবা তার কিছু আগে নব্যপ্রস্তর পর্বের সূচনা হয়।
৫. দক্ষিণ ভারতে নব্যপ্রস্তর পর্ব প্রায় ২০০০ বছর বর্তমান ছিল। 

নব্যপ্রস্তর পর্বের সংস্কৃতির প্রত্নক্ষেত্র :-
         বেলুচিস্তানের কিলি গুল মহম্মদ, বালাকোট, মেহেরগড়, কাশ্মীরের বুর্জাহোম ও গুফক্রাল, বিহারের চিরান্দ, উত্তরপ্রদেশের কোলদিহাওয়া, মহাগড়া, অসমের দেওজালি হাডিং, কর্ণাটকের মাস্কি, হাল্লুর, ব্রহ্মগিরি এবং তামিলনাড়ুর পৈয়মপল্লী নব্যপ্রস্তর পর্বের প্রত্নক্ষেত্র। 

নব্যপ্রস্তর পর্বের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন :-

১. বেলুচিস্তান এবং ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী পথের ধারে অবস্থিত মেহেরগড়। ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক জাঁ ফ্রাঁসোওয়া জারিজ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে এই মেহেরগড়ের প্রত্নক্ষেত্রের খননকার্যে ভূমিকা গ্রহণ করেন।

২. মেহেরগড়ের প্রথম পর্যায়ে বাড়িঘরের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। বাড়ির দেওয়াল কাঁচা ইট দিয়ে তৈরী। ইটগুলি রোদে শুকোনো। বাড়ির মেঝে সাধারণত মাটির এবং ছাদ নলখাগড়া ও লতাপাতার আচ্ছাদন দিয়ে তৈরী।

৩. নব্যপ্রস্তর পর্বে মেহেরগড়ে যব ও গমচাষের যে প্রচলন ছিল তা জানা যায়। তবে গমের থেকে যবের চাষ বেশি হত। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে মেহেরগড়ে তিন ধরনের যবের নিদর্শন পাওয়া গেছে। 

৪. নব্যপ্রস্তর পর্বে মেহেরগড়ে গৃহপালিত জন্তু হিসেবে গবাদি পশু, ছাগল ও ভেড়ার সন্ধান পাওয়া গেছে।

৫. নব্যপ্রস্তর পর্বে মেহেরগড়ে নানা প্রকার মসৃন হাতিয়ার হিসেবে ব্লেড, কুঠার, বাঁটি, পুঁতি ও শীলনোড়ার খোঁজ পাওয়া গেছে।

৬. নব্যপ্রস্তর পর্বে মেহেরগড়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে পাথরের হাতিয়ার হিসেবে কাস্তে, ছুরি, হাতুড়ি ও ব্লেডের সন্ধান পাওয়া গেছে।

৭. মৃৎশিল্পের নানা নিদর্শন এই পর্বে আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে এগুলি হাতে তৈরি হলেও পরে এগুলি আগুনে পুড়িয়ে টেকসই করা হত।

৮. মেহেরগড়ে তৃতীয় পর্যায়ে (৪৩০০ - ৩৮০০) আগের মতোই যব ও গম উৎপাদিত হতে থাকে।

৯. মৃৎপাত্রের সংখ্যায়, আকারে ও অলংকরণে এই পর্বের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। 

১০. নব্যপ্রস্তর পর্বের দুটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হল কাশ্মীরের বুর্জাহোম ও গুফক্রাল প্রাচীন মনুষ্যজাতির চারটি পর্যায় এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রথম দুটি পর্যায় নবাশ্মীয়, তৃতীয়টি মহাশ্মীয় এবং চতুর্থ পর্যায়টি ঐতিহাসিক পর্বীয়।

১১. এই পর্বে দেখা যায়, মানুষ মাটির প্রলেপযুক্ত গর্ত বা গহ্বরে বসবাস করত। গোলাকার, বর্গাকার, আয়তকার ও ডিম্বাকার - এই চার প্রকার গহ্বর খনন করা হত।

১২. বুর্জাহোমে মৃৎপাত্র হিসেবে হাতে গড়া ধূসর, লাল, হলুদ ও বাদামি রঙের মৃৎশিল্প পাওয়া যেত। মৃৎপাত্রগুলির গলা লম্বা, তলায় চাটাইয়ের ছাদ থাকত।

১৩. বুর্জাহোমে নব্যপ্রস্তর পর্বের দ্বিতীয় পর্যায়ে দেখা গেছে - মানুষ গহ্বরে নয়, বাস করত মাটির উপর নির্মিত কাঁচা ইটের তৈরি চালা ঘরে।

১৪. মৃৎপাত্রগুলি আকারে, প্রকারে ও রঙে বৈচিত্র্যময় হয়েছে।

১৫. এই পর্যায়ে পাথর, হাড় ও শিং দিয়ে তৈরি গুণমানে উন্নত হাতিয়ার পাওয়া গেছে।

১৬. এই পর্বেই তামার ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। 

১৭. এই পর্যায়ে সমাধি আবিষ্কৃত হয়েছে। শবদেহকে ঘরের মেঝের নীচে অথবা প্রাঙ্গনে সমাহিত করা হত।

১৮. মানুষের সমাধি থেকে মানুষের অস্থির সঙ্গে হরিণ, নেকড়ে, নীলগাই, শূকরের মত বন্যপ্রাণী, গরু, মহিষ, কুকুর, ছাগলের মত গৃহপালিত পশুর অস্থিও পাওয়া গেছে।

১৯. এই পর্যায়ে আবিষ্কৃত হয়েছে দুটি ভাস্কর্যফলক। একটি ফলক ভীষণ অস্পষ্ট, সম্ভবত তাতে কুটিরের ছবি আঁকা এবং দ্বিতীয় ফলকটিতে শিকারের দৃশ্য দেখতে পাওয়া গেছে। 

২০. গুফ্রকালে বুর্জাহোমের মত ভূপৃষ্ঠে গহ্বর খনন করে মানুষ আবাস তৈরির নিদর্শন পাওয়া গেছে। গহ্বরগুলি নীচের দিকে প্রশস্ত এবং মাথার দিকে সরু। নব্যপ্রস্তর যুগ সম্বন্ধে ইতিহাসবেত্তা দিলিপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন :

ক. "এই যুগের সব পাথুরে হাতিয়ার, তা সেগুলি এ্যাগেট, কালো শ্লেট বা বেলে পাথরেই হোক না কেন, অদ্ভুত রকমের মসৃণ। এই মসৃণতা পাথরের হাতিয়ারে পূর্বে কখনও দেখা যায়নি।"

খ. "এই যুগে হাড়ের তৈরী হাতিয়ারের ব্যবহার বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। হাড়ের সুচ, হারপুন, বর্শাফলক, ছোরা ইত্যাদি হাতিয়ার এই পর্বের বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে।"

গ. " মধ্যপ্রস্তর পর্বে কয়েকটি মাত্র স্থানে মৃৎপাত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছিল, কিন্তু এইসময় তা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। প্রথম দিকের মৃৎপাত্রগুলি হাতের তৈরী, কিন্তু পরে চাকের ব্যবহার শুরু হয়।"
উপরিউক্ত বর্ণনাগুলি নব্যপ্রস্তর যুগের সাক্ষ্যবহন করে।


*********** সমাপ্ত ************

👉 Download Pdf file  :- Click Here! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ