Anwar Study Point

সফলতার সাথী

Breaking

সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২

মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর


মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর 
দশম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর 
মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
দশম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর 
মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর 

মাধ্যমিক / দশম শ্রেণি
ইতিহাস
দ্বিতীয় অধ্যায় :- সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
প্রতিটি প্রশ্নের মান : ৮


প্রশ্ন (১) ‘বামাবোধিনী পত্রিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীসমাজের অবস্থা উল্লেখ করে পত্রিকার অবদান চিহ্নিত করাে। 

উত্তর :- ভূমিকা : উনিশ শতকের বাংলার যেসব সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় সেগুলির মধ্যে অনন্য ছিল ‘বামাবােধিনী পত্রিকা।

বামাবােধিনী পত্রিকার প্রতিষ্ঠা :

প্রথমত, উমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪০-১৯০৭ খ্রি.) ছিলেন ব্রাহ্সমাজের বিশিষ্ট নেতা, বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক এবং কলকাতায় সিটি স্কুল ও কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। তিনি সামাজিক কুসংস্কারের বিরােধিতা, বাঙালি ‘বামা’ অর্থাৎ নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার সাধন এবং নারীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ‘বামাবােধিনী’ (১৮৬৩ খ্রি.) সভা প্রতিষ্ঠা করেন।

দ্বিতীয়ত, তিনি বামাবােধিনী পত্রিকা নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করে নারী সমাজের অবস্থা, নারীশিক্ষা গ্রহণ ও তার তাৎপর্য, চাকরি-সহ বিভিন্ন পেশায় যােগদান ও তার অভিজ্ঞতা, গৃহ-চিকিৎসাসহ গৃহ পরিচালনার খুঁটিনাটি দিক তুলে ধরেন। 

নারী সমাজের অবস্থা : ‘বামাবােধিনী পত্রিকা থেকে নারী সমাজের অবস্থার যে দিকগুলি জানা যায় তা হল— 

১. কুপ্রথার অস্তিত্ব : উনিশ শতকে নারীসমাজে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, পর্দাপ্রথার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়, সতীদাহ প্রথার চল না থাকলেও বিধবাবিবাহ প্রথার প্রসার তেমন ঘটেনি। 

২. সম্পত্তির অধিকারহীনতা : অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নারীরা ছিল পরাধীন–বিবাহকালে পিতৃদত্ত’ ও ‘ভ্রাতৃদত্ত’ যৌতুক এবং মাতৃদত্ত স্ত্রীধন’(মূলত অলংকার) ছাড়া সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ছিল না। 

৩. শিক্ষার দাবি : নারী সুশিক্ষিতা হলেই সুগৃহিণী, সুপত্নী ও সুমাতা : হওয়া সম্ভব এই যুক্তিতে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নারীসমাজে শিক্ষার প্রসার ঘটতে শুরু করে। বামাবােধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত
কন্যার প্রতি মাতার উপদেশ’ বা ‘স্ত্রীলােকদিগের বিদ্যাশিক্ষার আবশ্যিকতা নামক রচনা থেকে এ কথা জানা যায়। 

৪. নানা পেশায় নারী : বালিকা বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের একাংশ শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষকতা বা ডাক্তারির পেশায় যােগ দেয়। উদাহরণরূপে চন্দ্রমুখী বসু, কুমুদিনী খাস্তগীর, কামিনী সেন এবং প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলির কথা বলা যায়। 

অবদান/গুরুত্ব : বামাবােধিনী পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত তৎকালীন নারীসমাজের চিত্র ছিল কলকাতা ও বাংলার বিভিন্ন শহরকেন্দ্রিক। এ সত্ত্বেও স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে বামাবােধিনী পত্রিকার উল্লেখযােগ্য ভূমিকাগুলি হল—

প্রথমত, ‘বামাবােধিনী পত্রিকার বিভিন্ন লেখার সেকালের ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ঘরােয়া ওষুধপত্র, শিশু পরিচর্যা, নারী শিক্ষা বিষয়ক বক্তব্য তুলে ধরা হত।

দ্বিতীয়ত, এই পত্রিকা নারীদের প্রতি বনা ও শােষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নারীদের সচেতন করে তুলেছিল।

তৃতীয়ত, এই পত্রিকা নারীদের মধ্যে বিদ্যাশিক্ষার প্রসারের জন্য দূর করে কুসংস্কারমুক্ত শিক্ষিত নারী গড়ে তােলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বন্দিনী বামা মুক্তির যুগ শুরু করেছিল। 

প্রশ্ন (২) “হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় বাংলার সমাজব্যবস্থার কোন্ কোন্ দিক প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করাে। গ্রামবার্তা প্রকাশিকা'র বিভিন্ন দিক চিহ্নিত করাে। ৫+৩ = ৮

উত্তর:- প্রথম অংশ, উনিশ শতকের ‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ নামক ইংরেজি সংবাদপত্রটি থেকে তৎকালীন গ্রামীণ সমাজ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির তথা বাংলার সমাজব্যবস্থার কথা জানা যায়।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট’-এ প্রতিফলিত বাংলার সমাজজীবন : হিন্দু প্যাট্রিয়টের বর্ণনা থেকে সমাজজীবনের উল্লেখযােগ্য দিকগুলি এভাবে চিহ্নিত করা যায় - 

১. কৃষিকাজ : গ্রামীণ সমাজে জমিদারদের উপস্থিতি থাকলেও কৃষকেরা আউশ ও আমন চাষের মাধ্যমে সারাবছরের খাদ্যশস্য জোগাড় করত। তবে নীলচাষের ব্যাপক প্রসার ঘটলে কৃষকেরা তাদের আউশ জমিতে নীলচাষ করতে বাধ্য হয়।

২. অলাভজনক নীলচাষ : নীলচাষ অলাভজনক হওয়ায় কৃষকরা নীলচাষে অসম্মতি জানায়। অবশ্য যে কৃষক একবার নীলকর সাহেবের কাছ থেকে নীলচাষের জন্য অগ্রিম অর্থ বা দাদন গ্রহণ। করেছিল তাদের নীলচাষ থেকে অব্যাহতি ছিল না। শেষ পর্যন্ত নীলচাষিরা নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।

৩. আদিবাসী বিদ্রোহ : ‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট' পত্রিকার মতে, আদিবাসী সমাজে জোর করে সাঁওতালদের বেগার খাটানাে, অতিরিক্ত খাজনার দাবি ও অর্থনৈতিক শােষণই ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

৪. মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অবস্থা : উনিশ শতকে খাদ্যশস্যের বদলে অর্থকরী ফসল (যেমন—পাট, তুলা, তৈলবীজ, আখ) চাষ ও তা বিদেশে রপ্তানির কারণে কৃষিপণ্য ও খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধি পেলে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৫. বেকারত্ব বৃদ্ধি : এই পত্রিকায় বলা হয় যে, শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়, কৃষি ও বাণিজ্য ছাড়া শিক্ষিতদের সামনে আর কোনাে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা নেই।

‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় প্রতিফলিত হয়েছিল জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বদেশি মেজাজ।

দ্বিতীয় অংশ, গ্রামবার্তা প্রকাশিকা'র বিভিন্ন দিক : উনিশ শতকের ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' নামক সাময়িকপত্রের বিভিন্ন দিকগুলি হল - 

১. পত্রিকার প্রকাশ : কুমারখালি বাংলা পাঠশালার প্রধান শিক্ষক হরিনাথ মজুমদার ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রকাশ করেন। এটির মােট ১৯টি ভাগ প্রকাশিত হয়েছিল।

২. গ্রাম সমাজের কল্যাণ : গ্রামবাসী প্রজাদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও প্রজাদের ওপর অত্যাচারের কথা সরকারের কাছে। জানানাে এবং তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করাই ছিল এই পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য। প্রজাদের ওপর সরকার ও জমিদারদের অত্যাচারের কথা এই পত্রিকা থেকে জানা যায়।

৩. স্থানীয় ইতিহাস : ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’-তে হরিনাথ মজুমদার শান্তিপুর উলাদি উপনগরের প্রাচীন ইতিহাস তুলে ধরেছিলেন। এ ছাড়া তৎকালীন বাংলার মেহেরপুর, চাকদহ ও উলা প্রভৃতি স্থানের দুর্ভিক্ষ ও মহামারির কথাও বর্ণিত হয়েছিল। 

প্রশ্ন (৩) হুতােম প্যাঁচার নকশা’তে কলকাতা নগরীর কোন ছবি পাওয়া যায় ? ‘নীলদর্পণ’ নাটকের তাৎপর্য কী ? ৫+৩ =৮

উত্তর:- প্রথম অংশ, কলকাতা নগরীর ছবি : কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত হুতােম প্যাচার নকশা থেকে উনিশ শতকের কলকাতা নগরীর কথা জানা যায়। এই গ্রন্থে আলােচিত মূল দিকগুলি হল - 

১. সমাজবিন্যাস : লেখক তার সময়কালে কলকাতা শহরের সামাজিক বিন্যাসের চিত্র তুলে ধরেছেন। বিশেষত সমাজের উচ্চস্তরে উত্থান ও পতনের কথা দেখানাে হয়েছে। ভাগ্যের সুবাদে অনেকে দ্রুত বৈভব অর্জন করত আর অনেক বিত্তশালী পরিবার আকস্মিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ত। মদন দত্ত, মল্লিক পরিবার, শীল পরিবার প্রভৃতি কলকাতার সমাজের হর্তাকর্তা হয়ে ওঠেন।

২. বাবু সংস্কৃতি : ব্যাবসাবাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী এবং গ্রাম থেকে কলকাতায় চলে আসা জমিদাররা যে বিলাসবহুল এবং জমকালাে সংস্কৃতিতে মেতে উঠেছিলেন তা ‘বাবু সংস্কৃতি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। বাইজি নাচ ও মদ্যপানের নেশায় বাবুসমাজ বিভাের হয়ে থাকতেন।

৩. পূজাপার্বণ : কলকাতায় ছিল বারাে মাসে তেরাে পার্বণ, অর্থাৎ চড়কপূজা, নীলষষ্ঠী, রাসলীলা, রথযাত্রা, মাহেশের স্নানযাত্রা, বারােয়ারি দুর্গাপূজা ইত্যাদি নানা ধরনের উৎসব।

৪. সংস্কৃতি : নীলের ব্রত, গাজন সন্ন্যাসী (চড়কি)-দের শিবের কাছে মাথা দোলানাে বা মাথাচালা, যাত্রাগান, বুলবুলের গান, অশ্লীল শব্দযুক্ত আখড়াই গান ছিল তৎকালীন সংস্কৃতির অঙ্গ।

 দ্বিতীয় অংশ, নীলদর্পণ নাটকের তাৎপর্য : দীনবন্ধু মিত্র রচিত নীলদর্পণ নাটকের মূল বিষয় ছিল নীলকরদের অত্যাচার ও কৃষকের সংগ্রামের কথা। এই নাটকের তাৎপর্যগুলি হল—

১. নীলকরদের অত্যাচারের বিবরণ : এই নাটকে সাধারণ প্রজাদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার, লুঠতরাজ, গৃহদাহ, নরহত্যা, নারী নির্যাতনের বিবরণ পাওয়া যায়। বাংলার সাহিত্য জগতে নীলদর্পণ নাটকেই প্রথম বাংলার কৃষকদের দুর্দশার চিত্র উপস্থাপিত হয়েছিল।

২. নীলকরদের স্বরূপ প্রকাশ : নীল বিদ্রোহ ও ‘নীল কমিশন’ গঠনের পর এই নাটকটি প্রকাশিত হলে পাদরি জেমস্ লং এই নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন এবং ইউরােপের জনমানসে নীলকরদের অত্যাচার তুলে ধরতে সচেষ্ট হন।

৩. পেশাদারি নাটকের সূচনা : নীলদর্পণ’ প্রকাশের পর নাটকটির জনপ্রিয়তার কারণে প্রথমে ঢাকায় ও পরে কলকাতায় (১৮৬২ খ্রি.) নাটকটি অভিনীত হয়। একারণেই গিরিশচন্দ্র ঘােষ নীলদর্পণ নাটকের স্রষ্টা দীনবন্ধু মিত্রকে বাংলার রঙ্গালয়ের স্রষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন (৪) নীলদর্পণ’ নাটকের বিষয় ও তার গুরুত্ব আলােচনা করাে।

উত্তর:- উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান ছিল নীলবিদ্রোহ কালে দীনবন্ধু মিত্রের রচিত ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০ খ্রি.) নাটক।

নাটকের বিষয় : এই নাটকের কাহিনিতে কৃষকসমাজ, নীলকরদের অত্যাচার ও কৃষকের সংগ্রামের কথা প্রতিফলিত হয়েছিল। যেমন—

১. নীলকরদের অত্যাচার : এই নাটকে সাধারণ প্রজাদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার, লুঠতরাজ, গৃহদাহ, নরহত্যা, নারী নির্যাতনের বিবরণ পাওয়া যায়।

 ২. প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণি : ইংরেজদের সাহায্যকারী দেশীয় আমিন, গােমস্তা, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটদের কথা, তৎকালীন সমাজের আইন-আদালতের চিত্র এই নাটকে প্রতিফলিত হয়েছে।

৩. জোটবদ্ধতা : নীলকরদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে রায়ত, সম্পন্ন কৃষক, মধ্যবিত্ত শ্রেণি একজোট হয়ে নীলচাষের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করেছিল তা ধরা পড়ে এই নাটকে, যা ভারতীয়দের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

গুরুত্ব : নীলদর্পণ নাটক বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন— 

১. কৃষক প্রীতি : বাংলার সাহিত্য জগতে নীলদর্পণ নাটকেই প্রথম বাংলার কৃষকদের দুর্দশার চিত্র উপস্থাপিত হয়েছিল।

২. নীলকরদের স্বরূপ প্রকাশ : নীল বিদ্রোহ ও ‘নীল কমিশন’ গঠনের পর এই নাটকটি প্রকাশিত হলে পাদরি জেমস্ লং এই নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন এবং ইউরােপের জনমানসে নীলকরদের অত্যাচার তুলে ধরতে সচেষ্ট হন।

৩. পেশাদারি নাটকের সূচনা : নীলদর্পণ’ প্রকাশের পর নাটকটির জনপ্রিয়তার কারণে প্রথমে ঢাকায় ও পরে কলকাতায় (১৮৬২ খ্রি.) নাটকটি অভিনীত হয়। একারণেই গিরিশচন্দ্র ঘােষ নীলদর্পণ নাটকের লেখক দীনবন্ধু মিত্রকে বাংলার রঙ্গালয়ের স্রষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। 

প্রশ্ন (৫) কাঙাল হরিনাথের ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’র বৈশিষ্ট্য ও অবদান লেখাে।

উত্তর:- ভূমিকা : কুমারখালি পাঠশালার পণ্ডিত হরিনাথ মজুমদার (১৮৩৩-১৮৯৬ খ্রি.) কাঙাল হরিনাথ’ নামে ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন। নিদারুণ আর্থিক দুরবস্থা, পরিকাঠামােগত অসুবিধে সত্ত্বেও দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে তিনি এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেন, এতে সমাজের নিপীড়িত, অত্যাচারিত, অবহেলিত মানুষের অবস্থা জ্বলন্ত রূপ পেয়েছিল। 

গ্রামবার্তা প্রকাশিকার বৈশিষ্ট : ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা ছিল এক সাময়িক পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে হরিনাথ মজুমদার নির্ভীকভাবে যেগুলি তুলে ধরেন তা হল - 

প্রথমত, ব্রিটিশ সরকার ও তার সহযােগী জমিদার ও মহাজন কর্তৃক প্রজা শশাষণ ও অত্যাচারের কথা প্রকাশিত হয়েছিল। এমনকি জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর বাড়ির জমিদারি ব্যবস্থাও তাঁর সমালােচনার হাত থেকে রেহাই পায়নি।

দ্বিতীয়ত, এই পত্রিকায় সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও প্রকাশিত হয়েছিল। 

অবদান : ‘গ্রামাবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা সে-সময় আলােড়ন তুলেছিল, কারণ—

প্রথমত, এর আগের সমস্ত পত্রপত্রিকা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বলে তাতে শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানসিক প্রতিফলন ধরা পড়েছিল। কিন্তু একমাত্র ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' গ্রাম থেকেই প্রকাশিত হয়।

দ্বিতীয়ত, এতে গ্রামের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, বঞ্চনা, নিপীড়নের কথা, নীলকরদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়েছিল বলেই এটি ব্যতিক্রমী।

তৃতীয়ত, এটিই ছিল বাংলার গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক। 

প্রশ্ন (৬) প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক কী ? মেকলে মিনিট কী ?
অথবা, উনিশ শতকে বাংলাদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব’ কেন ঘটে ? এর পরিণতি কী হয় ?

উত্তর:- প্রথম অংশ, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক : ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে এদেশের শিক্ষাখাতে প্রতি বছর বরাদ্দ করা একলক্ষ টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে খরচ করা হবে সে সম্পর্কে। ১৮২০-র দশকে এক তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়, যা প্রাচ্য শিক্ষা-পাশ্চাত্য শিক্ষা-বিষয়ক দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত।

বিতর্কের বিষয় : ওই সময়ে যাঁরা প্রাচ্য ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাচর্চার কথা বলেন তারা প্রাচ্যবাদী এবং যারা ইংরেজির মাধ্যমে শিক্ষাচর্চার কথা বলেন তারা পাশ্চাত্যবাদী নামে পরিচিত হন। এইচ. টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রমুখ প্রাচ্যবাদীর মত ছিল—দেশীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার ঘটানাে। অন্যদিকে লর্ড মেকলে, চার্লস গ্রান্ট প্রমুখ পাশ্চাত্যবাদীর উদ্দেশ্য ছিল মূলত ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার ঘটানাে।

      ভারতীয়দের মধ্যে রাজা রামমােহন রায় ছিলেন পাশ্চাত্যবাদী, পক্ষান্তরে রাজা রাধাকান্ত দেব প্রমুখ ছিলেন প্রাচ্যবাদী। রাজা রামমােহন রায় কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরােধিতা করেন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি করেন।

        ভারতে ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে প্রাচ্যবাদীপাশ্চাত্যবাদী বিতর্কে শেষপর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীদের মতই সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক মেকলে মিনিট-এর ভিত্তিতে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার প্রসারকে ‘সরকারি নীতি’ বলে ঘােষণা করেন।

মূল্যায়ন : ভারতের বাংলা প্রদেশে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক শুরু হলেও বােম্বাই প্রদেশ-সহ অন্যান্য প্রদেশে অনুরূপ বিতর্ক হয়নি। এই স্থানগুলিতে পাশ্চাত্য শিক্ষানীতিই গৃহীত হয়েছিল। যাইহােক, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের অবসানের ফলে ভারতে দ্রুত পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটতে থাকে।

দ্বিতীয় অংশ, মেকলে মিনিট : বডােলাট উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের শাসনকালে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে বড়ােলাটের পরিষদে আইন সদস্যরূপে যােগ দেন ও পরবর্তীকালে শিক্ষাসভার সভাপতি হন। তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে সচেষ্ট হন এবং ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করেন যা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত। তার মতের সমর্থনে যুক্তি দেন যে—

১. ভারতীয় ভাষার দৈন্যতা : তাঁর মতে, সমস্ত ভারত ও আরবের যে প্রাচীন সাহিত্য রয়েছে তা ইউরােপীয় ভাষা অপেক্ষা নিকৃষ্টতর হওয়ায় ভারতীয়দের মাতৃভাষাগুলি শিক্ষার বাহনরূপে যথার্থ ভূমিকা পালনে অক্ষম।

২. ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব : তিনি মনে করেন যে, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য হল জ্ঞানবিজ্ঞানের এক অফুরন্ত খনি।

৩. ইংরেজি জানা কর্মচারী :ইংরেজি ভাষা প্রবর্তিত হলে ভারতে নবজীবনের সূচনার পাশাপাশি ব্রিটিশ প্রশাসনে ইংরেজি ভাষা জানা কর্মচারী নিয়ােগ করাও সম্ভব হবে।

       মেকলে মিনিট প্রবর্তনের মাধ্যমে সরকারি অর্থ পাশ্চাত্য ভাষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাই ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে এটি ছিল খুব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

প্রশ্ন (৭) বাংলায় সরকারি উদ্যোগে ইংরেজি শিক্ষাবিস্তার কীভাবে হয়েছিল ? এর ফলাফল বিশ্লেষণ করাে।

উত্তর :- প্রথম অংশ, বাংলায় সরকারি উদ্যোগে ইংরেজি শিক্ষা : বাংলায় উনিশ শতকের প্রথমে মূলত বেসরকারি উদ্যোগে এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রচেষ্টায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটলেও সামাজিক ও প্রশাসনিক কারণে উনিশ শতকের প্রথম দশকে ভারতে ইংরেজ কোম্পানি ভারতীয়দের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের দায়িত্ব গ্রহণ করে, যেমন - 

১. ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট : ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের একটি ধারায় ভারতে জনশিক্ষার জন্য কোম্পানিকে প্রতি বছর অন্তত এক লক্ষ টাকা ব্যয়বরাদ্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্যে কোম্পানির উদ্যোগে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ বা ‘জনশিক্ষা কমিটি গঠিত হয়।

২. মেকলে মিনিটগভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্কের শাসনকালে আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলের উদ্যোগে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ ইংরেজি শিক্ষাকে সরকারি নীতি বলে ঘােষণা করা হলে সরকারি শিক্ষানীতিতে এক উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন আসে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে (ক) কলকাতায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, (খ) বােম্বাইয়ে ‘এলফিনস্টোন ইন্সটিটিউশন’, (গ) মাদ্রাজে মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি হাই স্কুল এবং (ঘ) রুরকি-তে ‘থমসন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপিত হয়।

৩. হার্ডিঞ্জের ঘােষণা : ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ কর্তৃক সরকারি চাকরিতে নিয়ােগের সময় ইংরেজি ভাষায় দক্ষ লােকেদেরই অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ঘােষণার পর থেকে মধ্যবিত্ত ভারতীয়দের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষায় প্রবল আগ্রহ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি বিদ্যালয় ও তাদের ছাত্রসংখ্যা দুটোই বাড়তে থাকে।

৪. উডের ডেসপ্যাচ : ভারতবর্ষের শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে বাের্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড শিক্ষা সংক্রান্ত এক নির্দেশনামা (উডের ডেসপ্যাচ) জারি করেন। ভারতের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রসারের জন্য চার্লস উডের বিভিন্ন সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল : (১) নিম্নতম শ্রেণি থেকে উচ্চতর শ্রেণি পর্যন্ত যথাযথ সমন্বয়মূলক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন, (২) সরকারি শিক্ষাবিভাগ স্থাপন, (৩) প্রত্যেক প্রেসিডেন্সি শহরে (অর্থাৎ-কলকাতা, বােম্বাই ও মাদ্রাজ শহরে) একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন।

৫. হান্টার কমিশন : ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হান্টার কমিশন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সরকারি অনুদান সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ করতে সচেষ্ট হয় এবং প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারের জন্য বেশ কিছু সুপারিশও করে। এ ছাড়া সরকারি সাহায্যে বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি স্থাপন, মেধাবি ছাত্রদের বৃত্তিদান ও স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের বিষয়ে গুরুত্ব আরােপ করা হয়।

দ্বিতীয় অংশ, পাশ্চাত্য শিক্ষার ফলাফল : উনিশ শতকের ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার ফলাফলগুলি হল—

১. যুক্তিবাদের প্রসার : পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার ফলে ভারতবাসীর মধ্যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণার পরিবর্তন ঘটে এবং যুক্তিবাদী ধ্যানধারণার প্রতিষ্ঠা হয়। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ভারতে যুক্তিবাদী শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হয়।

২. পাশ্চাত্যবাদী আদর্শের প্রসার : পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ভারতবাসীরা পাশ্চাত্য সভ্যতার ইতিহাস, জ্ঞান-বিজ্ঞান, মানবতাবাদ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, যুক্তিবাদ প্রভৃতি উচ্চ-আদর্শের সঙ্গে পরিচিত হয়।

৩. ধর্ম ও সমাজসংস্কার : পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে উনিশ শতকের শিক্ষিত ভারতীয়রা কুসংস্কারমুক্ত হয়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, রাজনীতি, সমাজতন্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে প্রগতিমূলক চিন্তাভাবনার উন্মেষ হয়। ভারতে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনের বিস্তার ঘটে এবং ধর্মসংস্কার ও সমাজসংস্কার আন্দোলন শুরু হয়।

      পরিশেষে বলা যায় যে, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ভারতে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে, যা পরবর্তীকালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিণতি লাভ করেছিল।

প্রশ্ন (৮) ‘তারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার সম্পর্কে লেখাে।

উত্তর:- প্রথম অংশ, পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে বেসরকারি উদ্যোগ : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার শুরু হয় বেসরকারি ও খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে। প্রাথমিক পর্বে সরকারি উদ্যোগের বিষয়টি একেবারেই ছিল না।

১. প্রাথমিক পর্বের উদ্যোগ : ভারতে কোম্পানির শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এদেশে নিত্যনতুন ইংরেজদের সওদাগরি অফিস, আইন-আদালত, সরকারি অফিস-কাছারি ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান চালু হতে থাকে। এই সময় ইংরেজদের প্রতিষ্ঠানগুলিতে চাকরি পাওয়ার আশায় বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। ইংরেজি শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হলে শােরবাের্ন, ডেভিড ড্রামন্ড প্রমুখ বিদেশি কলকাতায় ইংরেজি শেখার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

২. উনিশ শতকে উদ্যোগ : উনিশ শতকের বেসরকারি ইংরেজি স্কুল-কলেজগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমােহন রায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত 'অ্যাংলাে-হিন্দু স্কুল', ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ারের উদোগে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু কলেজ (পরবর্তীকালের প্রেসিডেন্সি কলেজ) এবং ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘পটলডাঙা অ্যাকাডেমি' (পরবর্তীকালের হেয়ার স্কুল)। 

৩. খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তারা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারও করতে থাকেন, যেমন—

(ক) শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগ : শ্রীরামপুরে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড নামে তিনজন খ্রিস্টান মিশনারি শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ১২৬টি বিদ্যালয় স্থাপন করে এবং সেখানে প্রায় দশ হাজার ছাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষালাভের সুযােগ পায়।

(খ) লন্ডন মিশনারি উদ্যোগ : লন্ডন মিশনারি সােসাইটির সদস্য রবার্ট মে প্রথমে চুঁচুড়ায় (১৭৯৫ খ্রি.) এবং পরবর্তীকালে অন্যত্র ৩৬টি ইংরেজি শিক্ষার বিদ্যালয় স্থাপন করেন। চার্চ মিশনারি সােসাইটি (১৭৯৯ খ্রি.) ছিল এরকম আরও এক মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

(গ) মিশনারি ও উচ্চশিক্ষা : ভারতে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রেও মিশনারিদের উল্লেখযােগ্য অবদান রয়েছে, যেমন (১) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপটিস্ট মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুর কলেজ, (২) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ মিশনের উদ্যোগে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন (পরবর্তীকালের স্কটিশ চার্চ কলেজ), (৩) বেলজিয়ামের মিশনারিদের উদ্যোগে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ (১৮৩৫ খ্রি:) ও লরেটো হাউস স্থাপিত হয়।

৪. সরকারি উদ্যোগ :

ব্রিটিশ শিক্ষানীতি :

১. ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট : ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের একটি ধারায় ভারতে জনশিক্ষার জন্য কোম্পানিকে প্রতি বছর অন্তত এক লক্ষ টাকা ব্যয়বরাদ্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্যে কোম্পানির উদ্যোগে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে ‘জেনারেল। কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ বা ‘জনশিক্ষা কমিটি গঠিত হয়।

২. মেকলে মিনিট : গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্কের শাসনকালে আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলের উদ্যোগে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ ইংরেজি শিক্ষাকে সরকারি নীতি বলে ঘােষণা করা হলে। সরকারি শিক্ষানীতিতে এক উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন আসে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে (ক) কলকাতায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, (খ) বােম্বাইয়ে ‘এলফিনস্টোন ইন্সটিটিউশন’, (গ) মাদ্রাজে ‘মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি হাই স্কুল এবং (ঘ) রুরকি-তে থমসন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপিত হয়।

উপসংহার : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটলেও তা সার্বিকভাবে পরিব্যাপ্ত হয়নি বা নারী শিক্ষার তেমন উল্লেখযােগ্য প্রসার ঘটেনি।

প্রশ্ন (৯) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে ডেভিড হেয়ার ও ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন-এর ভূমিকা আলােচনা করাে।

উত্তর:- প্রথম অংশ, ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগ : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে ডেভিড হেয়ার ছিলেন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি একজন সামান্য ‘ঘড়িওয়ালা’ হলেও এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারে তাঁর অবদানগুলি হল—

১. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ : ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক উদ্যোক্তাদের মধ্যে ডেভিড হেয়ার ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশের মতে, তিনিই ছিলেন হিন্দু কলেজের প্রস্তাবক এবং এদেশীয় ধনবান ব্যক্তিদের আর্থিক সহযােগিতায় তিনি এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

২. পটলডাঙ্গা অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা : এদেশে শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতায় পটলডাঙা অ্যাকাডেমি (বর্তমানের হেয়ার স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন।

৩. স্কুল বুক সােসাইটি প্রতিষ্ঠা : ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা ও পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্যালকাটা স্কুল বুক সােসাইটি’ (১৮১৭ খ্রি.) এবং ক্যালকাটা স্কুল সােসাইটি (১৮১৮ খ্রি.)। :

দ্বিতীয় অংশ, ড্রিঙ্কওয়াটার টিন-এর ভূমিকা : জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ভারতের বড়ােলাটের কাউন্সিলের আইন সদস্যরূপে যােগদান করেন (১৮৪৮ খ্রি.)। তিনি এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে সচেষ্ট হন এবং কয়েকজন বিশিষ্ট বাঙালির সহযােগিতায় ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্কুল পরবর্তীকালে বেথুন স্কুল’ নামে পরিচিত হয়।

প্রশ্ন (১০) শিক্ষার প্রসারে রামমােহন রায় ও রাধাকান্ত দেবের উদ্যোগ সংক্ষেপে লেখাে।

উত্তর:- প্রথম অংশ, রামমােহনের উদ্যোগ : উনিশ শতকে ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমােহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ) অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ভূমিকা ছিল এরকম - 

১. পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার : পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে রামমােহন পাশ্চাত্য দর্শন, গণিত, রসায়ন, অস্থিবিদ্যা প্রভৃতি শিক্ষার জন্য ব্যাপক প্রচার চালান।

২. ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমােহন রায় নিজ উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে কলকাতায় অ্যাংলাে-হিন্দু স্কুল নামে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। 

৩. সরকারি সহযােগিতার জন্য আবেদন : ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে রামমােহন লর্ড আমহার্স্টকে এক চিঠিতে শিক্ষাখাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রদত্ত এক লক্ষ টাকা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে ব্যবহারের জন্য আবেদন জানান।

৪. বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা : কুসংস্কার দূর করে পাশ্চাত্য পদার্থবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের ধারণা প্রসারের উদ্দেশ্যে রামমােহন ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

      এ ছাড়াও ডেভিড হেয়ার, আলেকজান্ডার ডাফ প্রমুখ পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের তিনি নানাভাবে সমর্থন ও সহযােগিতা করেন এবং হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্বে যুক্ত হয়েছিলেন। 

দ্বিতীয় অংশ, রাধাকান্ত দেবের উদ্যোগ : কলকাতার রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের বিশিষ্ট নেতা রাজা রাধাকান্ত দেব পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে যেরূপ ভূমিকা পালন করেন, তা হল - 

১. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা : এদেশীয় হিন্দুসন্তানদের প্রাচ্যশিক্ষার পাশাপাশি পাশ্চাত্য শিক্ষার ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে তিনি ছিলেন অন্যতম সমর্থক ও এই কলেজ পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য। 

২. সম্পাদক : ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সােসাইটির সম্পাদকরূপেও রাধাকান্ত দেব বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এই সােসাইটির উদ্দেশ্য ছিল অল্পদামে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা।

৩. নারীশিক্ষার প্রসার : রাধাকান্ত দেব নারীশিক্ষার প্রসারেও যত্নবান ছিলেন। তাঁর সহযােগিতায় ব্যাপটিস্ট মিশনারিরা ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন (১১) ভারতে বেসরকারি উদ্যোগে কীভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে ? এ প্রসঙ্গে রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা উল্লেখ করাে। 

উত্তর:- প্রথম অংশ, পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে বেসরকারি উদ্যোগ : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার শুরু হয় বেসরকারি ও খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে। প্রাথমিক পর্বে সরকারি উদ্যোগের বিষয়টি একেবারেই ছিল না।

১. প্রাথমিক পর্বের উদ্যোগ : ভারতে কোম্পানির শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এদেশে নিত্যনতুন ইংরেজদের সওদাগরি অফিস, আইন-আদালত, সরকারি অফিস-কাছারি ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান চালু হতে থাকে। এই সময় ইংরেজদের প্রতিষ্ঠানগুলিতে চাকরি পাওয়ার আশায় বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ইংরেজি শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হলে শােরবাের্ন, ডেভিড ড্রামন্ড প্রমুখ বিদেশি কলকাতায় ইংরেজি শেখার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

২. উনিশ শতকে উদ্যোগ : উনিশ শতকের বেসরকারি ইংরেজি স্কুল-কলেজগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমােহন রায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘অ্যাংলাে-হিন্দু স্কুল’, ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘ হিন্দু কলেজ (পরবর্তীকালের প্রেসিডেন্সি কলেজ) এবং ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘পটলডাঙা অ্যাকাডেমি’ (পরবর্তীকালের হেয়ার স্কুল)। 

৩. খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তারা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারও করতে থাকেন, যেমন—

(ক) শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগ : শ্রীরামপুরে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড নামে তিনজন খ্রিস্টান মিশনারি শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ১২৬টি বিদ্যালয় স্থাপন করে এবং সেখানে প্রায় দশ হাজার ছাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষা লাভের সুযােগ পায়।

(খ) লন্ডন মিশনারি উদ্যোগ : লন্ডন মিশনারি সােসাইটির সদস্য রবার্ট মে প্রথমে চুঁচুড়ায় (১৭৯৫ খ্রি.) এবং পরবর্তীকালে অন্যত্র ৩৬টি ইংরেজি শিক্ষার বিদ্যালয় স্থাপন করেন। চার্চ মিশনারি সােসাইটি (১৭৯৯ খ্রি.) ছিল এরকম আরও এক মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

(গ) মিশনারি ও উচ্চশিক্ষা : ভারতে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রেও মিশনারিদের উল্লেখযােগ্য অবদান রয়েছে, যেমন (১) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপটিস্ট মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুর কলেজ, (২) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ মিশনের উদ্যোগে ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন’ (পরবর্তীকালের স্কটিশ চার্চ কলেজ), (৩) বেলজিয়ামের মিশনারিদের উদ্যোগে কলকাতার ‘সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ’ (১৮৩৫ খ্রি.) ও লরেটো হাউস’ স্থাপিত হয়। 

দ্বিতীয় অংশ, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাধাকান্ত দেব : কলকাতার রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের বিশিষ্ট নেতা রাজা রাধাকান্ত দেব পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে যেরূপ ভূমিকা পালন করে, তা হল - 

১. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা : এদেশীয় শিক্ষার্থীদের প্রাচ্যশিক্ষার পাশাপাশি পাশ্চাত্য শিক্ষার ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে তিনি ছিলেন অন্যতম সমর্থক ও এই কলেজ পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য।

২. সম্পাদক : ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ক্যালকাটা স্কুল বুক সােসাইটির সম্পাদকরূপেও রাধাকান্ত দেব বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এই সােসাইটির উদ্দেশ্য ছিল অল্পদামে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা।

৩. নারীশিক্ষার প্রসার : রাধাকান্ত দেব নারীশিক্ষার প্রসারেও যত্নবান ছিলেন। তাঁর সহযােগিতায় ব্যাপটিস্ট মিশনারিরা ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন (১২) শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক কী ? উচ্চশিক্ষার  বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আলােচনা করাে। 

উত্তর:- প্রথম অংশ, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক : ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে এদেশের শিক্ষাখাতে প্রতি বছর বরাদ্দ করা একলক্ষ টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে খরচ করা হবে সে সম্পর্কে ১৮২০-র দশকে এক তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়, যা প্রাচ্য শিক্ষা-পাশ্চাত্য শিক্ষা-বিষয়ক দ্বন্দ নামে পরিচিত।

১. বিতর্কের বিষয় : ওই সময়ে যাঁরা প্রাচ্য ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাচর্চার কথা বলেন তারা প্রাচ্যবাদী এবং যারা ইংরেজির মাধ্যমে শিক্ষাচর্চার কথা বলেন তারা পাশ্চাত্যবাদী নামে পরিচিত হন। এইচ টি প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রমুখ প্রাচ্যবাদীর মত ছিল—দেশীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার ঘটানাে।    অন্যদিকে লর্ড মেকলে, চার্লস গ্রান্ট প্রমুখ পাশ্চাত্যবাদীর উদ্দেশ্য ছিল মূলত ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার ঘটানাে।

         ভারতীয়দের মধ্যে রাজা রামমােহন রায় ছিলেন পাশ্চাত্যবাদী, পক্ষান্তরে রাজা রাধাকান্ত দেব প্রমুখ ছিলেন প্রাচ্যবাদী। রাজা রামমােহন রায় কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরােধিতা করেন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি করেন। 

২. বিতর্কের অবসান : ভারতে ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে প্রাচ্যবাদী-পাশ্চাত্যবাদী বিতর্কে শেষ পর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীদের মতই সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক মেকলে মিনিট-এর ভিত্তিতে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার প্রসারকে ‘সরকারি নীতি’ বলে ঘােষণা করেন।

মূল্যায়ন : ভারতের বাংলা প্রদেশে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক শুরু হলেও বােম্বাই প্রদেশ-সহ অন্যান্য প্রদেশে অনুরূপ বিতর্ক হয়নি। এই স্থানগুলিতে পাশ্চাত্য শিক্ষারীতিই গৃহীত হয়েছিল। যাইহােক, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের অবসানের ফলে ভারতে দ্রুত পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটতে থাকে।

দ্বিতীয় অংশ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিচিহ্ন হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা (১৮৫৭ খ্রি.)। এটি উডের ডেসপ্যাচের সুপারিশ অনুযায়ী লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে গঠিত হয়েছিল।

১. শিক্ষার বিস্তার : প্রতিষ্ঠাকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এলাকা ছিল লাহাের থেকে বর্তমান মায়ানমারের রেঙ্গুন পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে অনুমােদন নিতে হত।

২. পরীক্ষা গ্রহণ : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতের। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষার বিষয়টি পরিপূর্ণতা লাভ করে। তবে প্রতিষ্ঠাকালে এটি উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল না, বরং তা ছিল পরীক্ষাগ্রহণকারী কেন্দ্র।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন হত না, কারণ—শুরুতে এই বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজকে অনুমােদন প্রদান করত এবং এন্ট্রান্স ও বি.এ. পরীক্ষা পরিচালনা করত।

৩. বি এ ও এম এ পরীক্ষা গ্রহণ : এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভরতির জন্য প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বি.এ. এবং ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম এম.এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে ছাত্রদের সার্টিফিকেট ও ডিগ্রি প্রদান করা হত।

প্রশ্ন (১৩) উনিশ শতকের ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব কী ছিল ?

উত্তর :- ভারতে পাচাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব :  শতকের ভারতে খ্রিস্টান মিশনারি ও দেশীয় ব্যক্তিদের এবং সরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল। এইরূপ পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের সুপ্রভাব ও কুপ্রভাব দুইই ছিল।

সুপ্রভাব : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের সুপ্রভাবের মধ্যে ইতিবাচক বা উল্লেখযােগ্য ছিল - 

১. আধুনিক ভাবধারার বিস্তার : উনিশ শতকে পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন পাঠের প্রভাবে ভারতীয়দের মধ্যে যুক্তিবাদী মানসিকতা গড়ে ওঠে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত উনিশ শতকের যুক্তিবাদী মানুষের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন রাজা রামমােহন রায়, হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিও, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ মনীষী।

২. পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচর্চার উদ্ভব : উনিশ শতকের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে নানান বিষয়ে মানুষের উৎসাহ ও কৌতূহল বৃদ্ধি পাওয়ায় বিজ্ঞানচর্চা শুরু হওয়ার ফলে প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের প্রভাব এযুগে ক্রমশ কমে আসতে থাকে। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন এই যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভারতীয় বৈজ্ঞানিক।

৩. গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ ধারণা : পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ভারতীয়দের মধ্যে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদের ধারণার উদ্ভব ঘটে।

৪. মানবতাবাদের ধারণা : পাশ্চাত্য সাহিত্য, দর্শন, শিল্প, বিজ্ঞান প্রভৃতি চর্চার ফলে এদেশের মানুষ বুঝতে পারে যে, এই জগৎ আনন্দময় এবং দেহ ও মনের উন্নতিসাধনই জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভারতীয় জনগণের মনে এই নতুন চিন্তাধারার উদ্ভব ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষার অন্যতম মানবতাবাদী দিক। 

৫. মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব : অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে। পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের অন্যতম ফলশ্রুতি ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদী ভাবধারায় দীক্ষিত হয়ে সমাজ ধর্ম সংস্কার, শিক্ষাবিস্তার ও রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করে। রাজা রামমােহন রায়, ডিরােজিও, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জ্যোতিরাও ফুলে, বীরসালিঙ্গম পান্তুলু প্রভৃতি মনীষীরা ছিলেন এই গােষ্ঠীর মানুষ।

৬. সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারের সূচনা : পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার ফলশ্রুতিতে উনিশ শতকে সমাজসংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়, যা ভারতীয় নারীদের কল্যাণসাধন এবং ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে পরিণতি লাভ করে।

৭. জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ : ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ, সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সংস্পর্শে এসে ভারতীয়দের মনে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষে বঙ্কিমচন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী প্রমুখ মনীষীদের উল্লেখযােগ্য অবদান ছিল।

কুপ্রভাব : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের কুপ্রভাবের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল—(১) ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতির অবহেলা, (২) বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি শিক্ষায় অবহেলা, (৩) অবহেলিত নারীশিক্ষা ও গণশিক্ষা এবং (৪) পরােক্ষভাবে খ্রিস্টধর্মের প্রচার প্রভৃতি।

প্রশ্ন (১৪) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তা ব্যাখ্যা করাে। পাশ্চাত্য চিকিৎসা শিক্ষাবিস্তার প্রসঙ্গে মধুসূদন গুপ্তের অবদান চিহ্নিত করাে।

উত্তর:-  প্রথম অংশ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা : ভারতে ইংরেজ শাসনের একটি বিশেষ দিক ছিল জনস্বাস্থ্য নীতি। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই নীতির প্রথম প্রতিফলন ঘটেছিল।

প্রেক্ষাপট : কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার পিছনে কারণ হিসেবে নীচের বিষয়গুলি দেখা যায়—

১. পরিপূর্ণ শিক্ষাদান : ১৮২০-র দশকে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ফর নেটিভ ডক্টরস, সংস্কৃত কলেজ ও কলকাতা মাদ্রাসার চিকিৎসাবিদ্যা বিভাগে ব্যাবহারিক অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া ব্যাপক পরিসরে চিকিৎসা প্রদানেরও অভাব ছিল।

২. কমিটি গঠন : এই বিবিধ অভাব পূরণের জন্য লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক একটি কমিটি গঠন করেন (১৮৩৩ খ্রি.)। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন মি জে গ্র্যান্ট এবং অন্যান্য সদস্য ছিলেন জে সি সাদারল্যান্ড, সি জি সাদারল্যান্ড, এম জে ব্রামলি, বাবু রামকমল সেন প্রমুখ। এই কমিটি সংস্কৃত ও আরবি-ফারসির পরিবর্তে ইংরেজির মাধ্যমে পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষাদানের সুপারিশ করে। 

৩. বেন্টিঙ্কের পদক্ষেপ : ভারতের বড়ােলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক উপরােক্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সংস্কৃত কলেজ ও মাদ্রাসার চিকিৎসাবিদ্যার বিভাগ এবং নেটিভ মেডিক্যাল স্কুল বন্ধ করে দেন (১ ফেব্রুয়ারি ১৮৩৫ খ্রি.)। পাশাপাশি এদেশীয় যুবকদের চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন বিভাগে ইংরেজিতে শিক্ষিত করে তােলার উদ্দেশ্যে একটি নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

দ্বিতীয় অংশ, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে মধুসূদন গুপ্ত : প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিকিৎসা শিক্ষার বিস্তারে পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত (১৮০৬-১৮৫৬ খ্রি.) ছিলেন এক উল্লেখযােগ্য ব্যক্তিত্ব।

১. সংস্কৃত কলেজের পণ্ডিত : সম্প্রতি সুতপা ভট্টাচার্য তাঁর কলিকাতা সংস্কৃত কলেজের ইতিহাস (১৮২৪-১৮৭৪ খ্রি.) নামক গবেষণা নিবন্ধে দেখিয়েছেন যে, মধুসূদন গুপ্ত ছিলেন। সংস্কৃত কলেজের প্রতিভাবান ছাত্র এবং তিনি এখানের ‘বৈদ্যক বিভাগে তিন বছর পড়াশােনা করেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই কলেজেই ‘ হিন্দু ঔষধির পণ্ডিত রূপে নিযুক্ত হন। তিনি এই কলেজের মেডিক্যাল ক্লাসে পাশ্চাত্যধারায় অ্যানাটমি শিক্ষাদান ছাড়াও সংস্কৃত কলেজ সংলগ্ন হাসপাতালেও খুব দক্ষতার সঙ্গে চিকিৎসা করেন।

২. মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার : কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে মধুসূদন গুপ্ত এই কলেজের ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি পরবর্তীকালে এই কলেজের প্রথম পদমর্যাদার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন পদে উন্নীত হন।

৩. শব ব্যবচ্ছেদ : ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে মধুসূদন গুপ্ত যাবতীয় হিন্দু কুসংস্কার উপেক্ষা করে প্রথম ভারতীয়রূপে শব ব্যবচ্ছেদ করে এদেশীয় মেডিক্যাল ছাত্রদের কাছে শব ব্যবচ্ছেদ বিষয়ে পথপ্রদর্শকে পরিণত হন।

প্রশ্ন (১৫) পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ইতিহাসে ডেভিড হেয়ারের অবদান ব্যাখ্যা করাে। কলকাতা  বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তা ব্যাখ্যা করাে।

উত্তর:- প্রথম অংশ, পাশ্চাত্য শিক্ষায় ডেভিড হেয়ার : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ইতিহাসে ডেভিড হেয়ার ছিলেন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি একজন সামান্য ‘ঘড়িওয়ালা’ হলেও এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারে তার অবদানগুলি হল—

১. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ : ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক উদ্যোক্তাদের মধ্যে ডেভিড হেয়ার ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশের মতে, তিনিই ছিলেন হিন্দু কলেজের প্রস্তাবক এবং এদেশীয় ধনবান ব্যক্তিদের আর্থিক সহযােগিতায় তিনি এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

২. পটলডাঙ্গা অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা : এদেশে শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতায় পটলডাঙা অ্যাকাডেমি (বর্তমানের হেয়ার স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন।

৩. স্কুল বুক সােসাইটি প্রতিষ্ঠা : ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা ও পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্যালকাটা স্কুল বুক সােসাইটি’ (১৮১৭ খ্রি.) এবং ক্যালকাটা স্কুল সােসাইটি’ (১৮১৮ খ্রি.)। 

দ্বিতীয় অংশ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা : ভারতে শিক্ষা তথা উচ্চশিক্ষার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিচিহ্ন হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা (১৮৫৭ খ্রি.)। এটি উডের ডেসপ্যাচের সুপারিশ অনুযায়ী লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে গঠিত হয়েছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ছিল এরকম - 

১. ইউনিভার্সিটি কমিটি : উডের ডেসপ্যাচের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতের বড়ােলাট লর্ড ডালহৌসির শাসনকালে কলকাতায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত ইউনিভার্সিটি কমিটির দেওয়া রিপাের্টের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (২৪ জানুয়ারি, ১৮৫৭ খ্রি.)।

২. প্রশাসন : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে ৪১ জন সেনেট সদস্য নিয়ে গঠিত সেনেট-এর হাতে শিক্ষানীতি রূপায়ণের ভার ন্যস্ত করা হয়। লর্ড ক্যানিং হলেন প্রথম আচার্য এবং স্যার জেমস উইলিয়াম কোলভিল প্রথম উপাচার্য।

৩. বিস্তার : প্রতিষ্ঠাকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এলাকা ছিল লাহাের থেকে বর্তমান মায়ানমারের রেঙ্গন পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে অনুমােদন নেয়।

৪. কর্ম শুরু : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট-এর প্রথম মিটিং হয় ৩০ জানুয়ারি, ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কাউন্সিল রুম-এ। ক্যামাক স্ট্রিটের একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অফিস গড়ে ওঠে। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ২৪৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

          কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষার বিষয়টি পরিপূর্ণতা লাভ করে। তবে প্রতিষ্ঠাকালে এটি উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল না, বরং তা ছিল পরীক্ষাগ্রহণকারী কেন্দ্র। 

প্রশ্ন (১৬) রাজা রামমােহন রায়ের নেতৃত্বে সমাজ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলন ব্যাখ্যা করাে। অথবা, উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারত সমাজ ও ধর্ম সংস্কারে রাজা রামমােহন রায়ের অবদান নথিবদ্ধ করাে।

উত্তর:- ভূমিকা : উনিশ শতকের ভারতে ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস ছিল। চিন্তার জগতে যুক্তিবাদের অভাব সমাজের অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেয়। ভারতবর্ষের এই সামাজিক পটভূমিতে রাজা রামমােহন রায় সর্বপ্রথম কুসংস্কার ও কুপ্রথা দূর করে ভারতবর্ষের জাতীয় জীবনে জাগরণ ঘটাতে সচেষ্ট হন।

সমাজসংস্কারক : রামমােহন তার যুক্তিবাদী আধুনিক চিন্তাধারার সাহায্যে সমস্ত বাধাবিঘ্নকে অতিক্রম করে সতীদাহপ্রথা, বহুবিবাহ, বর্ণভেদ প্রথা প্রভৃতি কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জয়যুক্ত হয়েছিলেন। উনিশ শতকের ভারতীয় জীবনে ধর্ম, শিক্ষা, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি বিষয়ে যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী আধুনিক চিন্তাধারার পথিকৃৎ রামমােহন রায়কে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ' বলা হয়।

ধর্মসংস্কার : রাজা রামমােহন রায় উপলব্ধি করেছিলেন। যে, প্রথমত, প্রচলিত হিন্দুধর্মের সংস্কারসাধন করা প্রয়ােজন। দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান মিশনারিগণ কর্তৃক হিন্দু ধর্মের সমালােচনা ও হিন্দুদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরকরণ প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করে হিন্দুধর্মকে রক্ষা করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে - 

১. আত্মীয়সভা গঠন : ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রামমােহন রায় কলকাতায় আত্মীয়সভা গঠন করেন। মূর্তিপূজার অসারতা, জাতিভেদ প্রথার বিরােধিতা করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।

২. ব্রাত্মসভা স্থাপন : ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে রামমােহন রায় ব্রাত্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল বহুদেবতাবাদের স্থলে। একেশ্বরবাদী মতাদর্শ প্রচার করা এবং নিরাকার ব্রত্মের উপাসনা করা। পরবর্তীকালে এই সভা ব্রাত্যসমাজ নামে পরিচিত হয়। 

মূল্যায়ন : রামমােহন রায়ের কতকগুলি সীমাবদ্ধতা ছিল, যেমন— (১) তিনি সমাজ ও ধর্মের কোনাে মৌলিক পরিবর্তন ঘটাননি। তাই ঐতিহাসিক সালাউদ্দিন আহম্মদ তাঁকে সংযত সংস্কারক' বলে অভিহিত করেছেন। (২) রামমােহন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্বসমাজ আন্দোলনে ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি অংশগ্রহণ করে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে এই আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে।

প্রশ্ন (১৭) সতীদাহ বিরােধী আন্দোলন কেন ও কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করাে। এ প্রসঙ্গে রাজা রামমােহন রায়ের অবদান চিহ্নিত করাে।

উত্তর:- প্রথম অংশ, সতীদাহ বিরােধী আন্দোলন : বাংলা তথা ভারতের সমাজসংস্কার আন্দোলনে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য আন্দোলন ছিল সতীদাহপ্রথা বিরােধী আন্দোলন। মৃত স্বামীর চিতায় তার সদ্যবিধবা জীবন্ত স্ত্রীর সহমরণ সতীদাহপ্রথা নামে পরিচিত।

আন্দোলনের কারণ : সতীদাহপ্রথা বিরােধী আন্দোলন ছিল একটি ব্যাপক আন্দোলন। এর বিভিন্ন দিক হল—

১. সার্বিক আন্দোলন : প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে প্রচলিত সতীদাহপ্রথা গোঁড়া হিন্দুদের কাছে পবিত্র ও মহান প্রথা হলেও বাস্তবে তা অত্যন্ত নিষ্ঠুর হওয়ায় এই প্রথার বিরুদ্ধে উনিশ শতকে কলকাতা-সহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন গড়ে ওঠে।

২. সরকারি নিয়ন্ত্রণ : জোর-জবরদস্তিমূলক উপায়ে সতীদাহ প্রথার ব্যাপকতায় ইংরেজ সরকার চিন্তিত ছিল। তাই ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে একটি আইনের মাধ্যমে গর্ভবতী ও অল্পবয়সি নারীর সতী হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়।

দ্বিতীয় অংশ, রামমােহন রায়ের অবদান : যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী রামমােহন রায় নিজেকে সতীদাহ বিরােধী আন্দোলনে যুক্ত করেন এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যেমন—

১. স্ত্রী-হত্যা : রামমােহন মত প্রকাশ করেন যে, সতীদাহের অধিকাংশ ঘটনাই স্বেচ্ছাপ্রণােদিত ছিল না, তা ছিল বলপূর্বক স্ত্রী-হত্যা। সমসাময়িককালের বিভিন্ন তথ্য ও সরকারি নথিপত্র থেকেও এই বক্তব্য সমর্থিত হয়।

২. স্বতঃস্ফূর্ত রদ : রামমােহন রায় আইনের পরিবর্তে মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও চেতনার প্রসারের মাধ্যমেই এই প্রথা রদ করতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানুষ একদিন এই প্রথার অবসান ঘটাবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।

৩. চেতনা সৃষ্টি : রামমােহন রায় সতীদাহ বিরােধী চেতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় গ্রন্থ রচনা করে সতীদাহ প্রথাকে অশাস্ত্রীয় প্রমাণ করতে সচেষ্ট হন। ছাড়া সংবাদপত্রে বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে জনগণের চেতনা সঞ্চার করেন। প্রচারসভার পাশাপাশি শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে স্বামীর চিতায় সতী হতে ইচ্ছুক বিধবাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

৪. বেন্টিঙ্কের উদ্যোগকে সমর্থন : রামমােহন রায় সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের জন্য সরকারি সমর্থনের ওপর নির্ভর করেন। অবশেষে ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইংল্যান্ডের জনগণের একাংশ নিষ্ঠুর সতীদাহপ্রথা বন্ধের জন্য আবেদন জানালে তৎকালীন বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সপ্তদশ বিধি (১৭নং রেগুলেশান) জারি করে এই প্রথা রদ করেন।

মূল্যায়ন : এভাবে দেখা যায় যে, সতীদাহ প্রথা বিরােধী আন্দোলন শুধু রামমােহন রায়ের গড়ে তােলা আন্দোলন ছিল। , বরং আগেই গড়ে ওঠা এক আন্দোলন। তবে এই আন্দোলন তার আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে শেষপর্যন্ত সাফল্য লাভ করে। 

প্রশ্ন (১৮) সতীদাহপ্রথা নিবারণ ও বিধবাবিবাহ প্রবর্তনের মূলে রামমােহন ও বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ করাে।

উত্তর:- প্রথম অংশ, অষ্টাদশ শতকের সূচনায় কলকাতা-সহ বাংলায় গড়ে ওঠা সতীদাহ প্রথাবিরােধী আন্দোলনে যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী রামমােহন রায় যুক্ত হন ও সাফল্যের সঙ্গে এই আন্দোলন পরিচালনা করেন।

রামমােহন রায়ের অবদান : যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী রামমােহন রায় নিজেকে সতীদাহ বিরােধী আন্দোলনে যুক্ত করেন। 

১. স্ত্রী-হত্যা : রামমােহন মত প্রকাশ করেন যে, সতীদাহের অধিকাংশ ঘটনাই স্বেচ্ছাপ্রণােদিত ছিল না, তা ছিল বলপূর্বক স্ত্রী-হত্যা। সমসাময়িককালের বিভিন্ন তথ্য ও সরকারি নথিপত্র থেকেও এই বক্তব্য সমর্থিত হয়।

২. স্বতঃস্ফূর্ত রদ : রামমােহন রায় আইনের পরিবর্তে মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও চেতনার প্রসারের মাধ্যমেই এই প্রথা রদ করতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানুষ একদিন এই প্রথার অবসান ঘটাবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।

৩. চেতনা সৃষ্টি : রামমােহন রায় সতীদাহ বিরােধী চেতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় গ্রন্থ রচনা করে সতীদাহ প্রথাকে অশাস্ত্রীয় প্রমাণ করতে সচেষ্ট হন। এ ছাড়া সংবাদপত্রে বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে জনগণের চেতনা সার করেন। প্রচারসভার পাশাপাশি শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে স্বামীর চিতায় সতী হতে ইচ্ছুক বিধবাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

৪. বেন্টিঙ্কের উদ্যোগকে সমর্থন : রামমােহন রায় সতীদাহপ্রথা উচ্ছেদের জন্য সরকারি সমর্থনের ওপর নির্ভর করেন। অবশেষে ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইংল্যান্ডের জনগণের একাংশ নিষ্ঠুর সতীদাহপ্রথা বন্ধের জন্য আবেদন জানালে তৎকালীন বড়ােলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সপ্তদশ বিধি (১৭নং রেগুলেশান) জারি করে এই প্রথা রদ করেন।

মূল্যায়ন : এভাবে দেখা যায় যে, সতীদাহপ্রথা বিরােধী আন্দোলন শুধু রামমােহন রায়ের গড়ে তােলা আন্দোলন ছিল। , বরং আগেই গড়ে ওঠা এক আন্দোলন। তবে এই আন্দোলন তার আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে শেষপর্যন্ত সাফল্য লাভ করে।

 দ্বিতীয় অংশ, অষ্টাদশ শতক থেকেই বিধবাবিবাহ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবং উনিশ শতকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সুযােগ্য নেতৃত্বে এই আন্দোলন সফল হয়েছিল।

বিদ্যাসাগরের অবদান : বিদ্যাসাগর ছিলেন মানবতাবাদী, শিক্ষাব্রতী ও নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ। তিনি বহুবিবাহের বিরােধিতার পাশাপাশি বিধবাদের বৈধব্য যন্ত্রণা উপলব্ধি করে এই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যেভাবে যুক্ত করেন তা হল - 

১. শাস্ত্র নির্ভরতা : বিধবাবিবাহে শাস্ত্রের সমর্থন খোঁজার জন্য তিনি ভারতের প্রাচীন পুথিপত্র ও গ্রন্থাদি পাঠ করেন। ও বিধবাবিবাহের সপক্ষে লেখালেখি শুরু করেন এবং “পরাশর সংহিতা” থেকে উদ্ধৃতি তুলে প্রমাণ করেন যে বিধবাবিবাহ শাস্ত্র সম্মত।

২. গ্রন্থ প্রকাশ : বিদ্যাসাগর “বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫ খ্রি.) নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে বিধবাবিবাহের সপক্ষে জনমত গঠন করতে সচেষ্ট হন। বিদ্যাসাগরের মতামতের বিরুদ্ধে সেইসময় অন্তত ৩০টি প্রতিবাদ পুস্তক প্রকাশিত হয়।

৩. সরকারের কাছে আবেদনপত্র প্রেরণ : তিনি বিধবাবিবাহ প্রবর্তন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য প্রায় এক হাজার জনের স্বাক্ষর করা আবেদনপত্র প্রেরণ করেন (অক্টোবর, ১৮৫৫ খ্রি.)। বিদ্যাসাগরের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাজা রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে তৎকালীন গোঁড়া হিন্দুরা একজোট হন।

৪. সরকারি উদ্যোগ : বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহের সপক্ষে আবেদনের পাশাপাশি বিধবাবিবাহের বিরুদ্ধেও অন্তত ১৪টি আবেদনপত্র সরকারের কাছে পাঠানাে হয়। শেষপর্যন্ত গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং বিধবাবিবাহ আইন পাস করেন (জুলাই, ১৮৫৬ খ্রি.)।

উপসংহার : বিধবাবিবাহ আইন পাস হলে বিদ্যাসাগর শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সঙ্গে কালীমতীদেবী নামের এক বিধবার এবং নিজের পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে আর-এক বিধবার বিবাহ দেন।

প্রশ্ন (১৯) উনিশ শতকের বাংলায় সমাজ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলনগুলি ব্যাখ্যা করাে। অথবা, উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলায় সমাজসংস্কার সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ রচনা করাে।

উত্তর:- সমাজ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলন : উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বঙ্গবাসী বাংলার সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘােষণা করেন এবং অশিক্ষা, অধর্ম ও সামাজিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ব্রতী হন। এই যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন রাজা রামমােহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিও।

১. সমাজসংস্কার আন্দোলন : আলােচ্য সময়ে সমাজসংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রধান ঘটনাগুলি ছিল : (ক) সতীদাহপ্রথার অবসান, (খ) বাল্যবিবাহ নিবারণ ও বিধবাবিবাহ প্রবর্তন এবং (গ) নব্যবঙ্গ আন্দোলন।

(ক) সতীদাহপ্রথার অবসান : ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমােহন রায়ের প্রচেষ্টায় গভর্নর-জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহপ্রথা নিষিদ্ধ করে আইন জারি করেন।

(খ) বিধবাবিবাহ প্রবর্তন ও বাল্যবিবাহ নিবারণ : বিধবাবিবাহ প্রবর্তনের ক্ষেত্রে মহান সমাজসংস্কারক পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গড়ে তােলা আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে গভর্নর-জেনারেল লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে এক আইন প্রণয়ন করে বিধবাবিবাহকে আইনসিদ্ধ বলে ঘােষণা করেন। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রসার বিরােধী (বিদ্যাসাগরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পরবর্তী সময়ে (১৮৬০ খ্রি.)) আইন-প্রণয়ন করে কন্যার বিবাহের বয়স সর্বনিম্ন দশ বছর নির্ধারিত করা হয়।

(গ) নব্যবঙ্গ আন্দোলন : রামমােহনের সমসাময়িককালে। হিন্দু কলেজের তরুণ অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিওর নেতৃত্বে বাংলায় ইয়ং বেঙ্গল’ বা নব্যবঙ্গ সম্প্রদায় নামে পরিচিত একদল যুক্তিবাদী তরুণ ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরােধিতা করতে থাকেন।

২. ধর্মসংস্কার আন্দোলন : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে সমাজসংস্কার আন্দোলনের পাশাপাশি ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রও প্রস্তুত হয়।

(ক) রামমােহন রায় : রাজা রামমােহন রায় হিন্দুধর্মের পৌত্তলিকতা, আচার-অনুষ্ঠানের ব্যাপকতা দূর করার জন্য উপনিষদের আদর্শের ভিত্তিতে ব্রাত্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন (আগস্ট, ১৮২৮ খ্রি.), যা পরবর্তীকালে জাতিভেদ প্রথার নিরসন, স্ত্রীশিক্ষা প্রসার প্রভৃতি সামাজিক-সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে।

(খ) শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ : শ্রীরামকৃয়দেবের আবির্ভাবের আগে বাংলার হিন্দু সমাজে ব্রাত্মধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের প্রসারকে কেন্দ্র করে একেশ্বরবাদ ও বহুদেবতাবাদ সম্পর্কিত দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। বিভিন্ন ধর্ম বর্ণিত ঈশ্বরলাভের পথ ধরে ঈশ্বর সাধনা করেন ও সফল রামকৃয়দেব তার উপলব্বির ভিত্তিতে প্রচার করেন সাকার ও নিরাকার (একই ঈশ্বরের বিচিত্র রূপ), একেশ্বরবাদ ও বহুদেবতাবাদ হল ধর্মের বিভিন্ন অঙ্গ। এভাবে তিনি ধর্মসমন্বয়বাদী আদর্শের প্রচার করেন।

সমালােচনা : বাংলার সামাজিক ও ধর্মসংস্কার আন্দোলন ত্রুটিমুক্ত ছিল না, কারণ - 

১. হিন্দুসমাজ কেন্দ্রিক : কোম্পানির আমলে উল্লিখিত সংস্কারগুলি মূলত হিন্দুসমাজেই সীমাবদ্ধ ছিল। সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজে এই সংস্কারগুলি প্রভাব ফেলতে পারেনি।

২. শহর কেন্দ্রিক : এই আন্দোলন ছিল শহরকেন্দ্রিক আন্দোলন, যা কেবল উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকেই প্রভাবিত করেছিল। 

৩. উত্তরসূরীর অভাব : যােগ্য উত্তরসূরির অভাবে বিদ্যাসাগর ও ডিরােজিও পরিচালিত আন্দোলন মাঝপথেই থেমে যায়।

মূল্যায়ন : এতসব দুর্বলতা সত্ত্বেও বরণীয় বাঙালির স্মরণীয়। প্রচেষ্টার সদর্থক পরিণতিস্বরূপ ভারতবাসী ক্রমশ আত্মসচেতন ও আধুনিক চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়।

প্রশ্ন (২০) নব্যবঙ্গ গােষ্ঠীর নেতৃত্বে সংস্কার আন্দোলন ব্যাখ্যা করাে। এই আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি চিহ্নিত করাে। অথবা, সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে ডিরােজিও ও ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ভূমিকা আলােচনা করাে।

উত্তর :- প্রথম তংশ, নববঙ্গের সংস্কার আন্দোলন :  পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার তরুণ বুদ্ধিজীবীদের একাংশ যে উগ্র সংস্কারপন্থী আন্দোলন সৃষ্টি করেন তা ইয়ং বেঙ্গল বা নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত। নব্যবঙ্গ আন্দোলনের প্রেরণাদাতা ও প্রাণপুরুষ ছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিও (১৮০৯-১৮৩১ খ্রি.)।

নব্যবঙ্গ দলের মূল উদ্দেশ্য : নব্যবঙ্গ দলের মূল উদ্দেশ্য ছিল—(১) জনসাধারণের মধ্যে যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠা ; (২) হিন্দুসমাজে প্রচলিত ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরােধিতা করা এবং (৩) আধুনিক ও যুক্তিবাদী পাশ্চাত্য চিন্তাধারা ও শিক্ষার বিস্তার ঘটানাে।

নব্যবঙ্গ দলের কার্যকলাপ : ডিরােজিওর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন প্যারীচাদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখােপাধ্যায়, কৃষ্ণমােহন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

১. প্রগতিশীল ধারণার প্রসার : ডিরােজিওর ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ছাত্ররা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, সভাসমিতি ও প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে প্রগতিশীল ধ্যানধারণা প্রচার করেন।

২. পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জনমত গঠন : ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা। তাদের পত্রিকাগুলির মাধ্যমে হিন্দুসমাজের বহুবিবাহ, নারীশিক্ষা, জুরির বিচার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন ও তাদের সুচিন্তিত মতামত দেন। 

৩. নারীকল্যাণ সাধন : নব্যবঙ্গ গােষ্ঠীর সদস্যরা নারীশিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার আদর্শ ব্যক্ত করেন; সতীদাহ প্রথা, বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে কলম ধরেন এবং সতীদাহপ্রথা নিবারণের পর সরকারকে তাঁরা অভিনন্দন জানান।

৪. শিক্ষার বিস্তার : নব্যবঙ্গ গােষ্ঠী জ্ঞানের বিস্তার সাধনের মাধ্যমে স্বদেশের উন্নতির উদ্দেশ্যে এদেশে ইউরােপের জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের দাবি জানায়।

দ্বিতীয় অংশ, নব্যবঙ্গের ব্যর্থতার কারণ : নব্যবঙ্গ গােষ্ঠীর আন্দোলন বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়—

১. সমর্থনের অভাব : সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যােগসূত্র না থাকায় সমাজজীবনে ইয়ং বেঙ্গল গােষ্ঠীর তেমন কোনাে প্রভাব পড়েনি।

২. পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ : সবচেয়ে বড়াে কথা, দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তারা পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ করতে আগ্রহী হওয়ায় এই আন্দোলন গণ সমর্থন লাভ করেনি। এই কারণে ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী ইয়ং বেঙ্গল গােষ্ঠীকে নকলনবীশের দল’ বলে মন্তব্য করেছেন।

৩. ধারাবাহিকতার অভাব : নব্যবঙ্গ গােষ্ঠীর সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার অনুসরণ ও কার্যকলাপ করতে ব্যর্থ হন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্দীপনা কমে আসে, দৃষ্টিভঙ্গিও পালটাতে থাকে।

৪. কলকাতা-কেন্দ্রিক : নব্যবঙ্গ আন্দোলন ছিল কলকাতার কিছু শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীর আন্দোলন। কলকাতা ও কলকাতার বাইরে বাংলায় এটি ব্যাপক আন্দোলন হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়।

প্রশ্ন(২১) ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্বে সমাজসংস্কার আন্দোলন বিশ্লেষণ করাে। অথবা, ব্রাহ্ম আন্দোলনের বিবর্তন পর্যালােচনা করাে।

উত্তর:- ভূমিকা : উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে যে সমস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রগতিশীল সমাজসংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল রাজা রামমােহন রায় ও তার প্রতিষ্ঠিত ব্রাম্মসমাজ।

সমাজসংস্কার আন্দোলন : ব্রাত্মধর্মের সমাজসংস্কার আন্দোলনগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে—

১. রাজা রামমােহন রায়ের উদ্যোগ : রাজা রামমােহন রায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সহায়তায় সতীদাহের মতাে অমানবিক প্রথার অবসান ঘটান। আর্থসামাজিক সংস্কারের পাশাপাশি উদারনৈতিক ধর্মীয় মনােভাব গড়ে তােলার জন্য রাজা রামমােহন রায় ব্রাহ্বসমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে তিনি হিন্দুধর্মের কুসংস্কার, মূর্তিপূজা ও রক্ষণশীলতা দূর করে একটি যুগােপযােগী ধর্ম প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।

২. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগ : রাজা রামমােহন রায়ের মৃত্যুর পর দ্বারকানাথ ঠাকুর ও পণ্ডিত রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ ব্রাত্যসমাজের নেতৃত্ব দেন। তারপর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্বসমাজের নেতৃত্ব দেন ও তত্ত্ববােধিনী পত্রিকায় সামাজিক কুসংস্কার ও গলদের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন। দরিদ্র হিন্দুদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার প্রবণতাকে বন্ধ করতে দেবেন্দ্রনাথ কলকাতায় হিন্দু চ্যারিটেবল ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি হিন্দুধর্মের কুপ্রথার বিরুদ্ধে ও কৃষকদের উন্নতির জন্যও আন্দোলন সংগঠিত করেন।

৩. কেশবচন্দ্র সেন : কেশবচন্দ্র সেন স্ত্রীশিক্ষার প্রসার-সহ শিক্ষার বিস্তার, অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদ প্রথার অবলুপ্তি এবং সামাজিক কুপ্রথার অবসান ঘটিয়ে সামাজিক বিপ্লব আনতে চেয়েছিলেন। 

উপসংহার : ব্রাত্ম আন্দোলনের দুটি সীমাবদ্ধতা হল—

প্রথমত, ব্রাত্ম আন্দোলন ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক ইংরেজি শিক্ষিত মানুষের একেশ্বরবাদী ও সমাজসংস্কারমূলক আন্দোলন। তাই এই আন্দোলন সমসাময়িক বহুদেবতাবাদে বিশ্বাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের কাছে কিছুটা হিন্দু-বিরােধী আন্দোলনরূপে প্রতিভাত হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, ব্রাহ্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে মতাদর্শগত বিতর্ক ও ব্রাত্য সমাজে বিভাজন, কথ্য বাংলার পরিবর্তে সংস্কৃত ভাষায় ধর্মপ্রচার প্রভৃতি ঘটনা ব্রাত্ম আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। 

প্রশ্ন (২২) প্রবন্ধ রচনা করাে : ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলায় সমাজসংস্কার আন্দোলন।

উত্তর:- ভূমিকা : ঊনবিংশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে ভারতের আর্থসামাজিক তথা ধর্মীয় জীবনে এক বিরাট পরিবর্তনের সূচনা হয়। প্রগতিশীল এই আন্দোলনের রূপকার ছিলেন রাজা রামমােহন রায়, কেশবচন্দ্র সেন, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিরােজিও প্রমুখ স্বনামধন্য ব্যক্তি।

১. ব্রাহ্মসমাজ : রাজা রামমােহন রায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সহায়তায় সতীদাহের মতাে অমানবিক প্রথার অবসান ঘটান। আর্থসামাজিক সংস্কারের পাশাপাশি উদারনৈতিক ধর্মীয় মনােভাব গড়ে তােলার জন্য রাজা রামমােহন রায় ব্রাম্মসমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে তিনি হিন্দুধর্মের কুসংস্কার, মূর্তিপূজা ও রক্ষণশীলতা দূর করে একটি যুগােপযােগী ধর্ম প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।

       রামমােহনের মৃত্যুর পর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্বসমাজের নেতৃত্ব দেন। কেশবচন্দ্র সেন স্ত্রীশিক্ষার প্রসার-সহ শিক্ষার বিস্তার, অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদ প্রথার অবলুপ্তি এবং সামাজিক কুপ্রথার অবসান ঘটিয়ে সামাজিক বিপ্লব আনতে চেয়েছিলেন।

২. বিদ্যাসাগর : বাল্যবিবাহ নিবারণ ও বিধবাবিবাহ প্রবর্তনের ক্ষেত্রে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় গভর্নর-জেনারেল লর্ড ডালহৌ: ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে এক আইন প্রণয়ন করে বিধবাবিবাহকে আইনসিদ্ধ বলে ঘােষণা করেন। এ ছাড়া প্রধানত বিদ্যাসাগরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে আইন প্রণয়ন করে মেয়েদের বিয়ের বয়স সর্বনিম্ন দশ বছর নির্ধারিত করা হয়।

৩. প্রেসিডেন্সি কলেজ : ‘ হিন্দু কলেজ' নামে পরিচিত বাংলার এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কৃতী ছাত্ররা পাশ্চাত্য শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের বিকাশে অংশগ্রহণ করে ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাদের নানান চিন্তাধারা ও প্রচেষ্টা বাংলায় নবজাগরণের সূচনা করে।

৪. রামকৃষ্ণ মিশন : ব্রাত্ম আন্দোলনের গতি যখন স্তিমিত হয়ে আসছিল সেই মুহূর্তে হিন্দুধর্মে নতুন প্রাণসঞার করেন যুগাবতার শ্রীরামকৃয় এবং শ্রীরামকৃয়ের ধ্যানধারণাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিলেন তাঁর শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ। তার উদ্যোগে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে রামকৃয় মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠন সমাজসেবা ও জাতীয়তাবাদী চেতনা সারে আত্মনিয়ােগ করে। 

সীমাবদ্ধতা : বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন কিন্তু সমালােচনামুক্ত ছিল না—

প্রথমত, উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের সমাজসংস্কার আন্দোলন। মূলত হিন্দু সমাজেই সীমাবদ্ধ ছিল, সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলমান সমাজে এই সংস্কারগুলি প্রভাব ফেলতে পারেনি।

দ্বিতীয়ত, এটি ছিল প্রধানত শহরকেন্দ্রিক আন্দোলন, যা কেবল উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকেই প্রভাবিত করেছিল। 

মূল্যায়ন : এতসব দুর্বলতা সত্ত্বেও এই সদর্থক প্রচেষ্টার পরিণতিস্বরূপ ভারতবাসীরা ক্রমশ আত্মসচেতন ও আধুনিক চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে এবং জাতীয়তাবােধে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বরাজ লাভের স্বপ্ন দেখতে থাকে।

প্রশ্ন (২৩) শ্রীরামকৃষ্ণের সমন্বয়বাদী মতাদর্শকে তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে ? বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের অভিমুখ ব্যাখ্যা করাে।

উত্তর:- প্রথম অংশ, শ্রীরামকৃষ্ণের সমন্বয়বাদী মতাদর্শ : উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে হিন্দুধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন ব্রাত্যসমাজের মতাদর্শের পাশাপাশি শ্রীরামকৃয়দেবের (১৮৩৬-১৮৮৬ খ্রি.) ভক্তি ভাবনায় সমন্বয়বাদী মতাদর্শও ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

সমন্বয়বাদী মতাদর্শ : শ্রীরামকৃয়ের মুখ নিসৃত বাণী কথামৃত গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এখানে তার সমন্বয়বাদী ভাবনার পরিচয় মেলে।

১. ধর্মভাবনা : রামকৃয়দেব সব ধরনের ধর্মীয় বিভেদ ও বিদ্বেষ ঘুচিয়ে প্রচার করেন যে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ মত ও পথ অনুসরণ করে সাকার বা নিরাকার ঈশ্বর সাধনায় নিয়ােজিত হতে পারে।

২. মানবতাবাদ : ধর্ম নয় মানুষের মনুষ্যত্বই তার কাছে গুরুত্ব লাভ করে ; তাই তার কাছে তার ধর্মমতের একটি বিশেষ দিক হল মানবতাবােধ।

৩. আধ্যাত্মিক শান্তি : উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আর্থিক দুর্দশা ও সামাজিক সংঘাতে মানুষের মনে যে হতাশা বােধ সৃষ্টি হয়। রামকৃষ্ণের ভাবনা সে সময় শান্তির পথ দেখায়।

৪. জাতিভেদ প্রথার বিরােধিতা : শ্রীরামকৃয়ের মতে, প্রত্যেক মানুষই হল শক্তির আধার; তাই তিনি প্রত্যেক মানুষকে সমান । মর্যাদাদানের কথা প্রচার করেন, যার ফলে সমাজে জাতিভেদ প্রথা ও অস্পৃশ্যতা অনেকটা হ্রাস পায়।

    শ্রীরামকৃষ্ণের এই সমন্বয়বাদী মতাদর্শ একদিকে যেমন বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের মধ্যে সংহতিদান করেছিল, তেমনি তা ক্ষয়িষ্ণু হিন্দুধর্মেও প্রাণসঞ্জার করেছিল।

দ্বিতীয় অংশ, বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কার : মানবতাবাদী ও সমাজপ্রেমী বিবেকানন্দ আত্মমুক্তি অপেক্ষা সমাজের উন্নতির ওপর অধিক গুরুত্ব আরােপ করেন। অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী বিবেকানন্দ বনের বেদান্ত’কে ‘ঘরে’ আনার কথা প্রচার করেন এবং বেদান্তকে মানবহিতের কাজে ব্যবহারের কথা বলেন যা নব্যবেদান্ত নামে। পরিচিত।

দরিদ্রদের সেবা : ভারতবর্ষের পথে-প্রান্তরে ভ্রমণ করে বিবেকানন্দ দরিদ্র ও অজ্ঞ ভারতবাসীর মধ্যে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা : বিবেকানন্দ কর্মের মাধ্যমে মানবসেবার আদর্শকেই তার ধর্ম বলে মনে করতেন। জাতির মধ্যে ত্রাণকার্য, শিক্ষার প্রসার, সুচিকিৎসার প্রসার এবং প্রকৃত মানুষ গড়ার উদ্দেশ্যে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে তারিখে তার উদ্যোগে রামকৃষ্ণ মিশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন (১৪) বাংলার নবজাগরণ’-এর ভিত্তি, চরিত্র ও সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা করাে। 

উত্তর:- বাংলার নবজাগরণ : উনিশ শতকে বাংলায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আদর্শবাদের ভিত্তিতে সমাজ ও সংস্কৃতিতে এক নবচেতনার। উন্মেষ ঘটে, যা নবজাগরণ নামে পরিচিত। নবজাগরণের একটি। দিক ছিল বাংলা তথা ভারতের প্রাচীন গৌরবময় ঐতিহ্য। সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন। 

নবজাগরণের ভিত্তি : প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী আদর্শ ছিল। বাংলার নবজাগরণের প্রধানতম ভিত্তি। প্রাচ্য আদর্শের প্রধানতম দিকটি হল এশিয়াটিক সােসাইটি, কলকাতা মাদ্রাসা, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও কলিকাতা সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা। প্রাচ্যবাদের ভারতের ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটায়। অন্যদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষ। বাংলাদেশে মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ, প্রগতিবাদী আদর্শের সঞ্চার ঘটায়। এই দুই আদর্শের ঘাত-প্রতিঘাতেই সৃষ্টি হয় বাংলার নবজাগরণ।

নবজাগরণের চরিত্র : বাংলার নবজাগরণের কয়েকটি বিশিষ্ট দিক হল - 

১. অনুসন্ধানী মানসিকতা : পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালির অনেকেই রক্ষণশীলতা বর্জন করে যুক্তিবাদী হয়ে ওঠেন এবং এই ধর্ম ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র এই যুক্তিবাদের দ্বারা মূল্যায়িত হতে থাকে।

২. সমাজ ও ধর্মসংস্কার : বাংলার ধর্ম ও সমাজের কুসংস্কারগুলি দূর করে আধুনিক করে তােলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। হিন্দুধর্মের মধ্যে থেকেই হিন্দুধর্মের সংস্কারসাধন ছিল নবজাগরণের একটি দিক। আবার সরকারি সাহায্যে সতীদাহ প্রথা রদ ও বিধবাবিবাহ প্রবর্তন সমাজসংস্কারের বিখ্যাত উদাহরণ।

৩. গৌরবময় অতীত পুনরুদ্ধার : প্রাচ্যবাদ চর্চার নীতি এবং ধর্ম ও সমাজসংস্কারের প্রয়ােজনে ভারতের অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার করা হয়। সমাজ ও ধর্মসংস্কারের প্রয়ােজনে যুক্তিবাদের পাশাপাশি শাস্ত্রীয় প্রমাণের অনুসন্ধান থেকে সংস্কৃত সাহিত্যের চর্চা শুরু হয়। 

৪. স্বতন্ত্র নবজাগরণ : বাংলার নবজাগরণ ইটালির নবজাগরণের সঙ্গে তুলনীয় নয়। বাংলার নবজাগরণের সামাজিক ভিত্তি ছিল উদীয়মান শিক্ষিত পেশাজীবী ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়।

সীমাবদ্ধতা : বাংলায় নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলি হল— সমাজ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলন মূলত হিন্দুসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। (২) নবজাগরণ ছিল শহরকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন; তাই তার প্রভাব সীমিত ছিল। (৩) নবজাগরণের ফলে সমাজের উচ্চবর্গের মানুষের মধ্যে সীমিত থাকায় সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব পড়েনি।

প্রশ্ন (২৫) উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের চরিত্র কী ছিল ? এ সংক্রান্ত বিতর্কটি আলােচনা করাে। 
অথবা, উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি আলােচনা করাে।

উত্তর :- প্রথম অংশ, উনিশ শতকে বাংলায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আদর্শবাদের ভিত্তিতে সমাজ ও সংস্কৃতিতে এক নবচেতনার উন্মেষ ঘটে, যা-নবজাগরণ নামে পরিচিত। নবজাগরণের মাধ্যমে অতীত ঐতিহ্যও আধুনিকতার মধ্যে সমন্বয় ঘটায়।

নবজাগরণের চরিত্র : বাংলার নবজাগরণের চরিত্র বা প্রকৃতির কয়েকটি দিক হল - 

১. অনুসন্ধানী মানসিকতা : পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালির অনেকেই রক্ষণশীলতা বর্জন করে যুক্তিবাদী হয়ে ওঠেন এবং এই ধর্ম ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র এই যুক্তিবাদের দ্বারা মূল্যায়িত হতে থাকে।

২. সমাজ ও ধর্মসংস্কার : বাংলার ধর্ম ও সমাজের কুসংস্কারগুলি দূর করে আধুনিক করে তােলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। হিন্দুধর্মের মধ্য থেকেই হিন্দুধর্মের সংস্কারসাধন ছিল নবজাগরণের একটি দিক। আবার সরকারি সাহায্যে সতীদাহপ্রথা রদ ও বিধবাবিবাহ প্রবর্তন সমাজসংস্কারের বিখ্যাত উদাহরণ।

৩. গৌরবময় অতীত পুনরুদ্ধার : প্রাচ্যবাদ চর্চার নীতি এবং ধর্ম সমাজসংস্কারের প্রয়ােজনে ভারতের অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার করা হয়। সমাজ ও ধর্মসংস্কারের প্রয়ােজনে যুক্তিবাদের পাশাপাশি শাস্ত্রীয় প্রমাণের অনুসন্ধান থেকে সংস্কৃত সাহিত্যের চর্চা শুরু হয়। 

৪. নবজাগরণের মৌলিকত্ব : বাংলার নবজাগরণ ইটালির নবজাগরণের সঙ্গে তুলনীয় নয়। বাংলার নবজাগরণের সামাজিক ভিত্তি ছিল উদীয়মান শিক্ষিত পেশাজীবী ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের স্তম্ভ ছিল হিন্দু কলেজ বা প্রেসিডেন্সি কলেজ। 

দ্বিতীয় অংশ, বিতর্ক : বাংলার নবজাগরণ সংক্রান্ত বিতর্কটি হল বাংলার নবজাগরণ কী প্রকৃতই নবজাগরণ ছিল? এই বিতর্কের দিকগুলি হল—

১. নবজাগরণ : ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার তাঁর 'History of Bengal' গ্রন্থে বলেছেন যে, ব্রিটিশ শাসনের সবচেয়ে বড়াে অবদান হল বাংলার নবজাগরণ, যা ব্যাপ্তি ও গভীরতার দিক দিয়ে ইউরােপের রেনেসাঁসকেও ছাড়িয়ে গেছিল।

২. অতিকথা : গবেষক ও ঐতিহাসিক বিনয় ঘােষ তার নবজাগৃতি' গ্রন্থে দেখিয়েছেন উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ প্রকৃত অর্থে নবজাগরণ ছিল না বরং তা ছিল অতিকথা', কারণ এই নবজাগরণের ফলে সমাজের উঁচুতলার মানুষ উপকৃত হলেও সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়নি। তাই তা ছিল একটি ঐতিহাসিক প্রতারণা।

৩. উৎসগত পার্থক্য : ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে, বাংলার নবজাগরণকে ইটালির নবজাগরণের সঙ্গে তুলনা করা যায় না, কারণ বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতির সঙ্গে ইটালির নবজাগরণের পার্থক্য ছিল। ইটালির নবজাগরণের প্রেরণাস্থল ছিল গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্য, কিন্তু বাংলার নবজাগরণের ক্ষেত্রে তা ছিল সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্য।

সিদ্ধান্ত : ঐতিহাসিক সুশােভন সরকার বাংলার নবজাগরণের - বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেও বাংলার সাংস্কৃতিক জাগরণকে নবজাগরণ বলে অভিহিত করেছেন। এই নবজাগরণ বাংলা তথা ভারতে যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদের প্রসার ঘটায় এবং নানা দিকে তার প্রভাব পড়ে।

**************** সমাপ্ত ******************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন