MODEL ACTIVITY TASK CLASS 6 BENGALI PART 6 ANSWERS
মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক Part 6
ষষ্ঠ শ্রেণি
বাংলা (প্রথম ভাষা)
১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১.১ 'ভাদুলি' ব্রত কখন উদযাপিত হয় ?
উত্তর :- ভাদুলি ব্রত বর্ষাকালের শেষের দিকে মেয়েরা করে থাকে। বৃষ্টির পরে আত্মীয় স্বজনদের সমুদ্রযাত্রা থেকে স্থলপথে নিজেদের বাসায় ফিরে আসার কামনায় তারা এই ব্রত করে। নদীর পাড়ে নানা আলপনা এঁকে, গান গেয়ে নদী মাতাকে জানায় তাদের প্রার্থনা।
১.২ সন্ধ্যায় হাটের চিত্রটি কেমন ?
উত্তর :- কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত তার 'হাট' কবিতায় সন্ধ্যাবেলার বাস্তব চিত্রটুকু তুলে ধরেছেন। দূরের গ্রামগুলিতে প্রদীপ জ্বললেও হাট অন্ধকারে থেকে যায়। ক্লান্ত কাকের পাখনায় ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে। হাটের দোচালা দোকানগুলি যেন চোখ বুজে বিশ্রাম নেয়, শুধু শোনা যায় জীর্ণ বাঁশের বুকে বাতাসের ফুঁতে ওঠা বুদ্রুপের সুর।
১.৩ কোন্ তিথিতে রাঢ়বঙ্গের কৃষিজীবী সমাজের প্রাচীন উৎসব গো-বন্দনা, অলক্ষ্মী বিদায়, কাঁড়াখুঁটা, গোরুখুঁটা প্রভৃতি পালিত হয় ?
উত্তর :- কালীপূজা অর্থাৎ, কার্তিকের অমাবস্যা তিথিতে রাঢ়বঙ্গের কৃষিজীবী সমাজের প্রাচীন উৎসব গো-বন্দনা, অলক্ষ্মী বিদায়, কাঁড়াখুঁটা, গোরুখুঁটা প্রভৃতি পালিত হয়। এই উৎসবের সময় সমস্ত ঘরদোর পরিষ্কার করে আলপনা দিয়ে সাজানো হতো।
১.৪ 'কেমন যেন চেনা লাগে ব্যস্ত মধুর চলা' - কবি কার চলার কথা বলেছেন ?
উত্তর :- কবি অমিয় চক্রবর্তী তাঁর 'পিঁপড়ে' কবিতায় ছোট ছোট পিঁপড়েদের চলার কথা বলেছেন। পিঁপড়ে গুলোর নিজেদের মধ্যে কথা না বলে, ব্যস্ত ভাবে সারি দিয়ে চলা - কবির মনে মুগ্ধতার সৃষ্টি করে।
১.৫ 'সে বাড়ির নিশানা হয়েছে আমগাছটি' - 'ফাঁকি' গল্পে গোপালবাবু কীভাবে তাঁর বাড়ির ঠিকানা জানাতেন ?
উত্তর :- ফাঁকি' গল্পে আমরা দেখতে পাই, গোপাল বাবুকে কেউ তার বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন - কাঠজোড়ি নদীর ধার বরাবর পুরীঘাট পুলিশের ফাঁড়ির পশ্চিমদিকে যেখানে পাঁচিলের মধ্যে আমগাছ দেখবেন সেখানে আমাদের বাড়ি। এভাবেই আমগাছটি তাদের বাড়ির নিশানা বা ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠেছিল।
১.৬ 'তুমি যে কাজের লোক ভাই ! ওইটেই আসল।' - কে, কাকে, কখন একথা বলেছিল ?
উত্তর :- তুমি যে কাজের লোক ভাই! ওইটেই আসল' - এই কথাটি ঘাসের পাতা-পিঁপড়ে কে বলেছিল। বৃষ্টি কমে এলে, পিঁপড়েটি তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঘাসের পাতাটিকে ধন্যবাদ জানালে সেই সময় ঘাসের পাতা কথাটি বলেছিল।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
২.১ 'হটাৎ একদিন ঝমঝম করে পড়ে বৃষ্টি' - তখন কৃষকরা কীভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে 'মরশুমের দিনে' রচনাংশ অনুসরণে লেখো।
উত্তর :- হটাৎ একদিন ঝমঝম করে পড়ে বৃষ্টি' প্রচন্ড গরমের পর বৃষ্টির দেখা পেয়ে কৃষকদের মুখে হাসি ফোটে। দুই তিন দিন বৃষ্টির পর তারা হোগলার তৈরি মাথালে মাথা পিঠ ঢেকে ভারী বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পড়ে চাষের কাজ করতে মাঠের দিকে। ধান রোয়া, আল বাঁধার কাজ সেরে ফেলতে হবে তাড়াতাড়ি। ধান চাষ ছাড়াও অনেকে পাট চাষ করে ; তাদের আরো কাজ, আরো বেশি ব্যস্ততা। লেখক তার 'মরশুমের দিনে' রচনাংশে এভাবেই বৃষ্টির পর কৃষকদের ব্যস্ততার ছবি এঁকেছেন।
২.২ 'শিশির-বিমল প্রভাতের ফল,
শত হাতে সহি পরখের ছল -
বিকালবেলায় বিকায় হেলায়
সহিয়া নীরব ব্যথা।' - উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :- যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত তাঁর 'হাট' কবিতায় গ্রাম-বাংলার চিরপরিচিত রূপটিকে তুলে ধরেছেন। সকালবেলায় শিশির ভেজা টাটকা শাকসবজি পাওয়া যায় হাটের দোকানগুলিতে। শাকসবজি ও ফলগুলি সারাদিন ধরে বিভিন্ন মানুষের হাতের পরখ সহ্য করে, অবশেষে বিকেল বেলায় অনেক কম দামে নিজের মনের যন্ত্রণা লুকিয়ে বিক্রি হয়ে যায়। কবি রূপক অর্থে শাকসবজি ও ফলের সঙ্গে মানবজীবনের তুলনা করেছেন।
২.৩ '.... এমন অভূতপূর্ব অবস্থায় আমায় পড়তে হবে ভাবিনি।' - গল্পকথক কোন্ অবস্থায় পড়েছিলেন ?
উত্তর :- লেখক শিবরাম চক্রবর্তী রাঁচিতে হুড্রুর দিকে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু পথে সাইকেলের টায়ার খারাপ হয়ে যাওয়ায় বাকি পাঁচ মাইল পথ অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর অবশেষে অন্ধকার সন্ধ্যায় ছোট্ট একটি বেবি অস্টিন গাড়ি দেখে তাড়াতাড়ি সেটাতে চেপে বসেন। গাড়িটি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে। লেখক গন্তব্যস্থল বলতে বলতে চমকে উঠেন, ড্রাইভারের জায়গায় কেউ নেই! নিশ্চিত হন তিনি ভূতের পাল্লায় পড়েছেন। শীতেও তার ঘাম দেখা গেল। লেখক এই অবস্থার কথাই বর্ণনা করেছেন তাঁর গল্পে।
২.৪ 'বাঘ বাবা-মা বদলে নিলেন বাড়ি' - তাদের বাড়ি বদলাতে হয়েছিল কেন ?
উত্তর :- নবনীতা দেবসেন তার 'বাঘ' কবিতায় একটি ছোট্ট হলুদ বাঘের কাহিনী শুনিয়েছেন। ছোট্ট বাঘটি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে একটি পাখিরালয়ে থাকতো। ছোট্ট বাঘটির খুব খিদে, সে পাখিগুলোকে থাবা দিয়ে ধরতে গেলেই তারা উড়ে পালাতো। এরপর খিদের জন্য বাঘছানাটি নদীর পাড়ে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে নিজেই নাজেহাল হয়। ছোট ছোট মাছ ধরে খেতে চাইলে মা তাকে বকেন। শেষ পর্যন্ত ছেলের দুঃখ দেখে বাঘটির বাবা-মা কে তাদের বাড়ি বদলাতে হয়েছিল। এখন তারা তিনজন মিলে সজনেখোলা বনে থাকে।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
৩.১ শব্দজাত, অনুসর্গগুলিকে বাংলায় কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় এবং কী কী ?
উত্তর :- শব্দজাত অনুসর্গগুলি নাম অনুসর্গ ও বিশেষ্য অনুসর্গ নামেও পরিচিত। এই অনুসর্গগুলিকে বাংলায় তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। সেগুলি হল -
(ক) সংস্কৃত বা তৎসম অনুসর্গ
উদা : তোমার দ্বারা ইহা সম্ভব।
(খ) বিবর্তিত, রুপান্তরিত বা তদ্ভব অনুসর্গ
উদা : সঙ্গে, আগে, কাছে এই শব্দগুলি তদ্ভব অনুসর্গ।
(গ) বিদেশি অনুসর্গ
উদা : আজ ভারত বনাম ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ম্যাচ রয়েছে।
৩.২ উপসর্গের আরেক নাম 'আদ্যপ্রত্যয়' কেন ?
উত্তর :- আদ্য শব্দের অর্থ হল - 'আদিতে' বা 'প্রথমে'। প্রত্যয় কথার অর্থ হল - মূল শব্দের সঙ্গে যে শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন নামপদ তৈরি করে। মূল শব্দের আদিতে বা প্রথমে বসে যে প্রত্যয় শব্দটির অর্থ বদলে দেয় তাকে আদ্য প্রত্যয় বলে। উপসর্গের কাজটিও সেই রকম। তাই উপসর্গের আরেক নাম আদ্য প্রত্যয়।
৩.৩ 'ধাতুবিভক্তি' বলতে কী বোঝ ?
উত্তর :- ক্রিয়াপদের মূল অংশকে ধাতু বলে। এই ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গড়ে তুললে সেটিকে আমরা ধাতুবিভক্তি বলি। যেমন - 'কর' ধাতুর সঙ্গে 'এ' বিভক্তি যুক্ত হয়ে 'করে' ধাতু বিভক্তির সৃষ্টি করেছে।
৩.৪ শব্দযুগলের অর্থপার্থক্য দেখাও : আশা / আসা, সর্গ/স্বর্গ।
উত্তর :- আশা শব্দের অর্থ : ভরসা, আকাঙ্ক্ষা
আসা শব্দের অর্থ : আগমন করা
সর্গ শব্দের অর্থ : অধ্যায়, গ্রন্থের পরিচ্ছেদ
স্বর্গ শব্দের অর্থ : দেবলোক
৩.৫ পদান্তর করো : জগৎ, জটিল
উত্তর :- জগৎ : জাগতিক
জটিল : জটা
৩.৬ অনধিক ১০০ শব্দে অনুচ্ছেদ রচনা করো : বাংলার উৎসব
উত্তর :-
বাংলার উৎসব
ভূমিকা : বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ' - বাঙালি জাতির উৎসবপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই এই কথার প্রচলন হয়েছে। পর কে আপন করে নেওয়ার দুর্লভ গুণ বাঙালির সহজাত, আর উৎসব মানেই তো তাই - পারস্পারিক মিলন, ভাবের আদানপ্রদান। সেই কারণেই হয়তো বাঙালির জীবনে উৎসবের এই প্রাধান্য। দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি যখন মানুষকে ক্লান্ত করে তোলে, তখন সেই প্রাত্যহিকতায় এক ঝলক মুক্ত হাওয়া বয়ে আনে উৎসব। রোজকার রুটিন বাঁধা জীবন থেকে ছাড়া পেয়ে সবাই তাই খুশিতে মেতে ওঠে। উৎসব তাই আমাদের মানসিক পরিচর্যা ঘটিয়ে আবার নতুন উদ্যমে কাজের জগতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
বিভিন্ন উৎসব : উৎসবপ্রিয় বাঙালির উৎসবের জন্য কোনো বিশেষ উপলক্ষ্য লাগেনা। প্রাণের উৎসবে মাতোয়ারা বাঙালির উৎসবগুলিকে তাও কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় - জাতীয় উৎসব, ঋতু উৎসব, ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক ও পারিবারিক উৎসব।
জাতীয় উৎসবগুলি হল - স্বাধীনতাদিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। এই দিনগুলিতে সমগ্র ভারতবর্ষের সঙ্গে বাঙালিও উৎসবে মেতে ওঠে। এছাড়াও আছে নেতাজির জন্মদিন, রবীন্দ্রজয়ন্তী ইত্যাদিও। এইগুলি বাঙালির নিজস্ব জাতীয় উৎসব। বাঙালির উৎসবের একটা বড়ো অংশ জুড়ে আছে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব। তার মধ্যে যেমন আছে দূর্গাপুজা, কালীপুজা, জগদ্ধাত্রী পুজা, রাস উৎসব, রথযাত্রা, সরস্বতী পুজা, বাসন্তী পুজা, গুরুপূর্ণিমা, তেমনি আছে ঈদ-উল-ফিতর, ঈদুজ্জোহা, মহরম, বড়োদিন প্রভৃতি। সাম্প্রদায়িকতা কখনওই বাঙালির উৎসবমুখরতার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারেনি। একজনের আনন্দ কীভাবে পাঁচজনের আনন্দ হয়ে উঠতে পারে তার সফল দৃষ্টান্ত বাঙালির সামাজিক উৎসবগুলি। বাংলা কৃষিপ্রধান দেশ, তাই নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসব সে পালন করে নবান্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে। তবে প্রাকৃতিক উৎসবগুলি অনেক সময়ই উপস্থাপিত হয় ধর্মীয় মোড়কে। যেমন - নতুন শস্য রোপণের উৎসবটির প্রতীক হিসেবে পালিত হয় ইতুলক্ষ্মীর ব্রত উৎসব। এছাড়াও বসন্ত যখন চারদিক রাঙিয়ে তোলে তখন বাঙালিও নিজেদের রাঙিয়ে নেয় দোল উৎসবের মধ্য দিয়ে।
উপসংহার : প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ এনে দেয় উৎসব। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে একসাথে মেতে উঠতে পারি আমরা। বাঙালিদের জীবনে উৎসবের প্রয়োজন ও গুরুত্ব তাই অপরিসীম।
************ সমাপ্ত ***********