▪️সপ্তম শ্রেণি
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর pdf
▪️Class Seven History Lesson 4
প্রশ্ন :- সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক সম্পর্কে যা জানো লেখো ।
উত্তর :- ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মোহম্মদ ঘোরির মৃত্যুু হয়। এরপর কুতুবউদ্দিন গজনির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং নিজেকে স্বাধীন শাসক রূপে ঘোষণাা করেন। তিনি ১২০৮ খ্রিস্টাব্দে 'সুলতান' উপাধি ধারণ করেন। তাঁর সিংহাসন আরোহণের সময় থেকেই দিল্লিতে স্বাধীন 'সুলতানি' শাসনের সূচনা ঘটে। স্মিথ, এনফিলস্টোন প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ কুতুবউদ্দিন আইবক প্রতিষ্ঠিত দিল্লির রাজবংশকে 'দাস' বংশ বলে অভিহিত করেছেন। অবশ্য অনেক ঐতিহাসিকের মতে, এই কথা যুক্তিসম্মত নয়। তাঁদের মতে, ভাগ্যচক্রে ক্রীতদাসরূপে জীবন শুরু করলেও এঁরা অভিজাত বংশের সন্তান ছিলেন ও সুলতান হওয়ার আগে প্রত্যেকেই ক্রীতদাসত্ব্ থেকে মুক্তি লাভ করেন।
কৃতিত্ব : সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক মাত্র চার বছর রাজত্ব করেছিলেন। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে তিনি কোনো নতুন রাজ্য দখল করেননি। তবে স্বাধীন সুলতানিি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসাাবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়েে থাকবেন। তিনি একজন সদাশয় ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। তাই তিনি 'লাখবক্স' বা লক্ষদাতা নামে সুবিদিত। তিনি খাজা কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকির স্মৃতির উদ্দেশ্যে দিল্লির উপকন্ঠে্ একটি স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে এটি 'কুতুবমিনার' নামে ভারতের একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য বস্তূ হয়ে আছে।
প্রশ্ন :- সুলতানি যুগের ইতিহাস রচনার উপাদানগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করো ।
উত্তর :- ভারতের ইতিহাসে মধ্যযুগ যথাক্রমে সুলতানি যুগ ও মুঘল আমল এই দুই অংশে বিভক্ত। প্রাচীন যুগের তুলনায় সুলতানি যুগের ঐতিহাসিক উপাদানের সংখ্যা অনেক বেশি। সুলতানি যুগের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলির মধ্যে অলবিরুনির 'তহকিক্ - ই - হিন্দ', মিনহাজ - উদ্দিন - সিরাজ রচিত তবকৎ-ই-নাসিরি, জিয়াউদ্দিন বারনি রচিত তারিখ - ই - ফিরোজশাহি, আফ্রিকার পর্যটক ইবন বতুতার রাহলা বা সফরনামা, আমির খসরু রচিত খাজাইন - উল - ফুতু এবং ফিরোজশাহ তুঘলকের আত্মজীবনী গ্রন্থ ফুতহাৎ-ই-ফিরোজশাহি উল্লেখযোগ্য। সুলতানি যুগে বিদেশ থেকে অলবিরুনি ও ইবন বতুতা ছাড়া অনেক পর্যটক বিবরন লিপিবদ্ধ করে গেছেন, যেমন - ইটালির মার্কোপোলো ও নিকালো কন্টি, রাশিয়ার পর্যটক আথানিসিউস নিকিতন ও পারস্যের আবদুর রাজ্জাক। আঞ্চলিক ভাষায় রচিত নানক ও কবিরের দোঁহা, বাংলা মঙ্গলকাব্য, তুকারামের ভক্তিগীতি প্রভৃতিতে সুলতানিি যুগের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিফলন পড়েছিল।
প্রশ্ন :- অলবিরুনি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তর :- অলবিরুনি ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্য এশিয়ার খোয়ারিজম অথবা ঘিভা অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। সুলতান মামুদের ভারত অভিযানের সময় অলবিরুনি ভারতে আসেন। তিনি অসাধারণ পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'তহকিক-ই-হিন্দ' - এ (অলবিরুনির ভারত) ঐতিহাসিক ঘটনাবলি, হিন্দুদের স্বভাব - চরিত্র ও প্রথা সম্বন্ধে নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেন। তিনি ভারতীয় জ্ঞান - বিজ্ঞানের অকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন। তিনি 'ভগবৎ গীতা' পাঠ করে ভারতীয় দর্শন সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম মুসলমান ভারত - তত্ত্ববিদ। অলবিরুনি জ্যোতির্বিদ্যা, অঙ্কশাস্ত্র, অতীত ঘটনাবলির সময়নুক্রম, গাণিতিক ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যাা ও খনিজ বিদ্যা বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন। তাঁর বিবরন থেকেে জানা যায় যে, ভারতে বাল্যবিবাহ প্রচলিত ছিল, কিন্তু বিধবাবিবাহ চালু ছিলনা। ক্ষত্রিয়দের মধ্যে সতীদাহ প্রথা চালুু ছিল। হিন্দুদের মধ্যে দেবদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। এই সময় বিচারব্যবস্থাও উন্নত ছিল। ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে্ তিনিি দেহত্যাগ করেন।
প্রশ্ন :- আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য অভিযানের বিবরন দাও।
উত্তর :- ভারতের উত্তর - পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বারবার অভিযানকারীরা ভারতেে এসেছে। মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিজ খান ঝড়ের গতিতে যে অভিযান চালান তার সামনে বাকিি রাষ্ট্রগুলি দুর্বল হয়েে পড়েছিল। আলাউদ্দিন খলজির সময়ে তাদের দ্বারা দিল্লি দুবার আক্রান্ত হয়। আলাউদ্দিন পাঞ্জাব, দিল্লি অভিযান করেন। তারপর তিনি চিতোর, রণথম্ভোর ও কারা অভিযান করেন। তাতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। এরপর তিনি গুজরাট জয় করেে ১৩০৫ খ্রিস্টাব্দে মান্ডু জয় করেন, আরব সাগরের মধ্যে যাদব, বরঙ্গল জয় করেন। তিনি মাদুরাই, লাক্ষাদ্বীপও জয় করেন। তাঁর অভিযান এত দূর প্রসারিত হয়েছিল যে তিনি দক্ষিণ ভারতের তাঞ্জোর, পান্ড্য পর্যন্ত জয় করেন। তিনি কাকতীয়, হোয়সল প্রভৃতি অঞ্চলকেও বাদ দেননি। তিনি ছিলেন দুধর্ষ। তাই তাঁর অভিযান ছিল দুধর্ষ বীর। তাঁর অভিযানেও কোনো দেশ বাদ ছিলনা। এভাবে তিনি দাক্ষিণাত্য অভিযানে সফল হয়েছিলেন।
প্রশ্ন :- দিল্লির সুলতানদের সঙ্গে তাঁদের অভিজাতদের কেমন সম্বন্ধ ছিল তা লেখো ।
উত্তর :- যে সুলতান যত ভালোভাবে সবদিক সামলাতে পারতেন, তাঁর শাসন তত বেশিদিন টিকত। তবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময় থেকে সুলতানের ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে মর্যাদাও বাড়তে থাকেে। সুলতানরা এতটাই ক্ষমতার অধিকারী ছিল যে তাঁদের ওপর কেউ কথা বলতে পারত না। সুলতানকে নিয়ে যদি কেউ বিরোধ প্রকাশ করত তাহলে তাদের শাস্তি পেতে হত। আলাউদ্দিন খলজির সময়ে অভিজাতদের কড়া হাতে দমন করা হত। কিন্তু যদি কোনোভাবে সুলতানদের শাসন আলগা হয়ে যেত তাহলে অভিজাতদের ক্ষমতা বেড়ে যেত।
সুলতানরা যেমন অভিজাতদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন তেমনই সময় বা সুযোগ পেলে অভিজাতরাও সুলতানদের মান্য করত না। এছাড়াও অভিজাত ছাড়াও উলেমা সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতেন সুলতানরা। সুলতানদের পরামর্শ দিত উলেমা। হিন্দু-মুসলমান সবাই ছিল সুলতানদের প্রজা।
প্রশ্ন :- ইকতা কী ? কেন সুলতানরা ইকতা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন ?
উত্তর :- দিল্লির সুলতানরা সাম্রাজ্যের আয়তন ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছেন। নতুন অধিকার করা অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায় করা দরকার ছিল এবং সেখানকার শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব তাদের ছিল। সুলতানরা যেসব রাজ্যগুলি জয় করলেন বা অধিকার করলেন সেইসব রাজ্যগুলিকে একটি প্রদেশের মতো ধরে নেওয়া হল। এসব প্রদেশকেই বলাা হত ইকতা ।
এই ইকতার দায়িত্ব নিয়ে থাকতেন একজন সামরিক নেতা। তাকে বলা হত ইকতাদার। ইকতাগুলিকে ছোট ও বড়ো এই দুইভাগে ভাগ করে নেওয়া হত। বড়ো ইকতাগুলিি দায়িত্ব পালনের জন্যও যাঁরা থাকতেন তাঁদের শুধুু সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হত না, প্রশাসনিক দায়িত্বও তাঁদের পালন করতে হত। ছোট ইকতাদারগন শুধুমাত্র সামরিক দায়িত্ব পালন করতেন।
সৈন্যবাহিনীর দেখাশোনা করা, বাড়তি রাজস্ব সুলতানদের দেওয়া, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এসব দায়িত্ব বড়ো ইকতাদারদের উপর থাকত। এসব ইকতাদার সম্পূর্ণভাবে সুলতানদের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন।
প্রশ্ন :- আলাউদ্দিন খলজির সময় দিল্লির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তোমার মতামত লেখো ।
উত্তর :- আলাউদ্দিনের সময় দিল্লির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ সুলতানের হাতে যথেষ্ট ছিল। আলাউদ্দিন সবসময় একটি বিরাট সৈন্যদল গঠন করেন এবং সমস্ত সৈন্যদের বেতন নির্দিষ্ট করে দেন। তিনি বাজারের সমস্ত জিনিসের দর নির্দিষ্ট করে দেন। তিনি বাজারদর দেখাশোনা করার জন্য 'শাহান-ই-মান্ডি' ও 'দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ' নামে দুই রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন। আমার মতে, এটি একটি ভালো বিষয়। এ ছাড়া সুলতানের ঠিক করা দামের চেয়ে কোনো বিক্রেতা দাম বেশি নিলে এবং ক্রেতাকে ঠকালে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। আমার মতে, এটিও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আলাউদ্দিন সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে রেশন ব্যবস্থা চালু করেন। প্রজারা যাতে সঠিক সময়ে খাদ্যশস্য ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে পারে তাই সুলতানরা সবসময় তা তাদের কাছে মজুত রাখতেন। তাদের সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিস জোগান দিতে সুলতান খুবই দায়িত্বশীল ছিলেন। আমি মনে করি, সুলতান ঠিকভাবেই বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করতেন।
প্রশ্ন :- বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির মধ্যে সংঘর্ষকে তুমি কি একটি ধর্মীয় লড়াই বলবে ? তোমার যুক্তি দাও।
উত্তর :- বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির মধ্যে সংঘর্ষ্ একটি ধর্মীয় লড়াই বলে আমি মনে করি না। কারণ ধর্ম নিয়ে লড়াই সুলতানি রাজাদের সঙ্গে বিজয়নগর রাজাদের হয়নি। দাক্ষিণাত্য অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি মালিক কাফুর। লোদি সুলতানদের শাসনকালে সুলতানদের ক্ষমতাা কিছুটা বেড়েছিল। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ছিলেন মধ্যযুগের বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। বিজয়নগরের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন কৃষ্ণদেব রায়। তাঁর রাজত্বকালেে বিজয়নগরের গৌরব চূরান্ত শিখরে উঠেছিল। কৃষ্ণদেব রায়ের মৃত্যুর পর তুলুভ বংশের রাজত্বকালেই বিজয়নগরের সঙ্গে সুলতানদের বিরোধ বাধেে। এই যুদ্ধে বিজয়নগর পরাজিত হয়।
বিজয়নগর ও সুলতানি রাজ্যগুলি প্রথম থেকেই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বীতা একটানা লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রধানত রাজনৈতিক, সামরিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানের জন্যই এই লড়াই হয়েছিল।
▪️File Name :- সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় ৫
▪️Language :- বাংলা
▪️Size :- 112 kb
▪️Download Link :-
💐💐💐💐
উত্তরমুছুন