▪️সপ্তম শ্রেণি
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর download pdf
▪️Class seven 3rd chapter
প্রশ্ন :- হিউয়েন সাঙের বিবরণী থেকে ভারতের সামাজিক, আর্থিক, রাজনৈতিক অবস্থার পরিচয় দাও।
উত্তর :- হিউয়েন সাঙের বিবরণী থেকে ভারতের সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক অবস্থার যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা হল :
সামাজিক জীবন : হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে পুরোহিত সম্প্রদায় ও অভিজাাতরা আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করত। পক্ষান্তরে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের জীবন ছিল সাধারণ মানের। অস্পৃশ্যরূপে 'শূদ্র' রা গণ্য হত। শূদ্ররা সে যুগে এমনই অস্পৃশ্য ছিল যে শহরে প্রবেশের আগে কোন শব্দ বা চিৎকার করে জানিয়ে দেওয়া হত যাতেে কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি তাদের স্পর্শ না করে। তখন নারী স্বাধীনতা ছিল না। বিধবাবিবাহ ছিল না। সতীদাহপ্রথা ছিল। কারণ তাদের স্পর্শ করলে সমাজে সেই ব্যক্তির জাতিভ্রষ্ট হওয়ার ভয় ছিল।
আর্থিক জীবন : ভারতের অর্থনীতি মোটামুটি সচ্ছল ছিল। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ ছিল কৃষিজীবি। জনসাধারণের ওপর কর ভাব বেশি ছিলনা। জনসাধারণকে খুব সামান্যই কর দিতে হত। দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজার চেষ্টার কোন ত্রুটি দেখাা যেত নাা।
রাজনৈতিক জীবন : ভারতের রাজনৈতিক কাঠামো বেশ ভালোই ছিল। রাজা দেশের প্রকৃত অবস্থার স্বরূপ জানার জন্য নিজের রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতেন। রাজার সভায় জৈন, বৌদ্ধ, ব্রাহ্মণ পন্ডিতেেরা যাতায়াত করতেন।
প্রশ্ন :- নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া সম্বন্ধে দশটি বাক্য লেখো।
উত্তর :- নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া সম্বন্ধে দশটি বাক্য :
(১) নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষের প্রসিদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। (২) এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষায়তন ছিল। (৩) গুপ্তযুগের সম্রাটেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। (৪) এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দশ হাজার ছাত্র পড়াশোনা করত। (৫) এখানে একজন সন্ন্যাসী শিক্ষক ছিলেন। (৬) এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধ দর্শন, হিন্দু ধর্মশাস্ত্র, সাংখ্য, ব্যাকরণ, সাহিত্য, গণিত ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হত। (৭) এখানে শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। (৮) বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য ছাত্রদের যোগ্যতার কঠোর পরিচয় দিতে হত। (৯) হিউয়েন সাঙ নিজে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেছিলেন। (১০) ছাত্রদের কঠোর নিয়ম পালন করতে হত।
প্রশ্ন :- দাক্ষিণাত্যের চালুক্যদের রাজনৈতিক, শিল্প ও স্থাপত্য বিষয়ে আলোচনা করো।
উত্তর :- দাক্ষিণাত্যের চালুক্যদের রাজনৈতিক ইতিহাস : দক্ষিণ ভারতের একটিি শক্তিশালী বংশ হল বাদামির চালুক্য বংশ। ষষ্ঠ শতাব্দীর গোড়ার দিকে চালুক্য রাজাগণ দাক্ষিণাত্যের কর্ণাটেে রাজ্য স্থাপন করেন।
আনুমানিক ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পুলকেশী চালুক্য রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর পুত্র কীর্তিবর্মনের আমলে চালুক্য রাজ্যের বিস্তৃতি যথেষ্ট ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতা মঙ্গলেশ রাজা হন। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত যোদ্ধা কিন্তু তাঁকে হত্যা করে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র দ্বিতীয় পুলকেশী সিংহাসন লাভ করেছিলেন। এই বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন কীর্তিবর্মনের পুত্র দ্বিতীয় পুলকেশী। হর্ষবর্ধনকে পরাজিত করে তিনি পরমেশ্বর উপাধি গ্রহণ করেন। হিউয়েন সাঙের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, তিনি একজন সুশাসক ও প্রজারঞ্জক শাসক ছিলেন। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে কেবল তাঁর যোগাযোগ ছিল তাই নয়, ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। দ্বিতীয় পুলকেশীর মৃত্যুর পর চালুক্যদের ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব হয়ে যায়। তাঁর উত্তরাধীকারিরা ৭৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
চালুক্যদের শিল্প ও স্থাপত্য : চালুক্য রাজারাা জাতিতে হিন্দু ছিলেন। তাই তাঁদের আমলে সাহিত্য ও শিল্পকলা বেশ উন্নতি লাভ করেছিল। চালুক্য রাজারা পট্টডকল, বাদামি প্রভৃতি স্থানে বহু মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিখ্যাত অজন্তা গুহার দেয়ালে তাঁরা কয়েকটি উৎকৃষ্ট মানের চিত্র অঙ্কন করিয়েছিলেন।
প্রশ্ন :- ভারতে সামন্তব্যবস্থার পরিচয় দাও।
উত্তর :- ভারতে সামন্তব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল মধ্যযুগে। ভারত ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হল সামন্তপ্রথা। তবেে মনে রাখা ভালো ইউরোপের সামন্ততন্ত্র ও ভারতের সামন্ততন্ত্রের মধ্যে সময় ও চরিত্র বা বৈশিষ্টগত পার্থক্য ছিল অনেক। ড. রামশরণ শর্মার মতে ভারতে সামন্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে গুপ্ত যুগে। অধ্যাপক যাদব, ডি. এন. ঝা, এস. গোপাল এই মতকে সমর্থন করেছেন। ভারতে সামন্ততন্ত্রের সূচনাকাল হিসাবে চিহ্নিত করা হয় আনুমানিক ৩০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ। পরবর্তী তিনশো বছর অর্থাৎ ৬০০ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দকে বলা হয় সামন্ততন্ত্রের বিকাশকাল। আর সামন্ততন্ত্রের চরম বিকাশ ঘটেছিল ৯০০ খ্রিস্টাব্দ এবং ধ্বংস হয় প্রায় ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। অবশ্য ড. নুরুল হাসান বলেন, মোগল যুগেও ভারতে সামন্তততন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল। প্রাপ্ত বিভিন্ন লেখ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে মন্দির ও বৌদ্ধমঠগুলিকে রাজারা ভূমিদান করতেন। অনেক ব্রাহ্মণও দান হিসাবেে বিশাল সম্পত্তি লাভ করতেন। সেখান থেকে ভারতে সামন্ততন্ত্রের সূচনা পর্ব ধরা যায়। প্রথমে ব্রাহ্মনদের ভূমিদান করা হত, পরে যোদ্ধা ও উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদেরও ভূমিদান শুরু হয়। এই সময় ভূমির অধিকারীরা কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন, একে সামন্ততান্ত্রিক খাাজনা বলা হত। ভারতে মৌর্যোত্তর যুগে ও গুপ্তযুগের সূচনায় 'অগ্রহার' ব্যবস্থা প্রসার লাভ করে। এই ব্যবস্থায় ধর্মস্থান ও পুরোহিত সম্প্রদায়কে নিষ্কর ভূমিদান করা হত। প্রচুর ভূমির মালিক হওয়ায় ব্রাহ্মণ ও ধর্মপ্রতিষ্ঠানগুলির হাতেে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাা কেন্দ্রীভূত হয়। ফলে তাঁরা ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। সপ্তম শতকে যখন শাসকদের পক্ষে রাজস্ব্ আদায় করা কষ্টকর হয়ে ওঠে তখন তাঁরা ভূস্বামীদের হাতেে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব তুলে দেন। এর ফলে সামন্ততন্ত্রের ভিত্তি হয় আরও দৃঢ়। অন্যদিকে রাজার ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে পড়ে। একাদশ শতকে বাংলার রামপাল কৈবর্তদের দমনের জন্য যেভাবে সামন্তশ্রেণির উপর নির্ভর করেন তাতে সামন্তদের প্রতিপত্তিি ভয়ংকর বেড়ে ওঠে। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, এই সময় বাণিজ্যের সংকোচন, নগরের গুরুত্ব হ্রাস, অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ সামন্ততন্ত্রেের আবির্ভাবের কারণ ছিল। ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে মেলান যায় নাা। (১) ভারতের কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব করতে পারত। (২) এখানে ভূমিদাসত্ব প্রথা ছিল না। (৩) সামন্ততন্ত্রের অন্যতম শর্ত 'চুক্তি' ব্যবস্থা ভারতে ছিল না। (৪) বহু ক্ষেত্রে অগ্রহার দানের ফলে অনাবাদিি জমি আবাদি উর্বর জমিতে পরিণত হয়। যা কৃষি অর্থনীতিকে মজবুত করেছিল। যদিও অগ্রহার জমি প্রদানের ফলে নিষ্কর জমির পরিমাণ কমে আসে এবং রাজকোশে ঘাটতি দেখা যায়। বাণভট্ট লিখিত হর্ষচরিতে সামন্তদের দায়িত্বের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। অবশ্য রোমিলা থাপারের মতে - 'কৃষকদের জীবনে কোন আশার আলো ছিল না।' তাই তারা বাঁচার জন্য্ অনেক সময় দস্যুবৃত্তি গ্রহণ করত ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করত। মধ্যযুগে ভারতের সামন্তব্যবস্থায় রাজাা তাঁর রাজ্যের ভূমি নির্দিষ্ট রাজস্ব বিনিময়ের শর্তে কয়েকজন অধস্তন ব্যক্তিকে ভাগ করেে দিতেন। অধস্তন ব্যক্তি ছিলেন ছোট সামন্ত । ছোট সামন্ত তার এলাকার জমি কয়েকজন অধস্তন ব্যক্তিকে ভাগ করেে দিতেন। অধস্তন ব্যক্তি ছিলেন ছোট সামন্ত। ছোট সামন্ত তার এলাকার জমি কয়েকজন অধস্তন ব্যক্তিকে ভাগ করেে দিতেন, কৃষক ও রাজার মাঝে কয়েকটি স্তরে জমি বিতরণ করে রাজস্ব আদায় ও শাসন পরিচালনার ব্যবস্থাকে বলেে 'সামন্ত ব্যবস্থা।' তাই ভারতের সামন্ত ব্যবস্থার পরিচয় দিতে গেলে একখানা ত্রিভূজের মত ছবি দেখাতে হয়। কারণ - (ক) এর সর্বোচ্চ আসনে থাকেন একজন রাজা। (খ) তার পরবর্তী স্তরে থাকেন তাঁদের অধস্তন সামন্তরা। (গ) তাঁর নীচের স্তরে থাকেন তাঁদের অধস্তন সামন্তরা এবং (ঘ) একেবারে শেষের স্তরে থাকেে সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটেে খাওয়া কৃষকরা।
ভারতবর্ষে সামন্তদের জীবিকা : সামন্তব্যবস্থায় সামন্তরা কেউ শারীরিক পরিশ্রম করে জমিতে ফসল উৎপাদন করত না। অন্যের শ্রমে তারা উৎপন্ন দ্রব্য বা রাজস্ব থেকে নিজেদের জীবিকা নির্বাাহ করত। খেটে খাওয়া কৃষকদের কাছ থেকে ছোট সামন্ত যত রাজস্ব আদায় করত সে তার কিছু অংশ নিজের জন্য রেখে বাকি অংশ ওপরের সামন্তকে দিত। ওপরের মাঝারিি সামন্তরাও তাদের নিজের নিজের অংশ রেখে বাকি অংশ রাজাকে দিত। তাই কৃষক ও রাজার মাঝে এই সামন্তদের মধ্যস্বত্বভোগী বলা হত।
▪️File Name :- সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ৮
▪️Language :- বাংলা
▪️Size :- 108 kb
▪️Download Link :-