Type Here to Get Search Results !

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর


▪️সপ্তম শ্রেণি
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস 
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় 
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর 
▪️Class Seven 3rd chapter
▪️সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় pdf download 


প্রশ্ন :- ভারতের সামন্ত ব্যবস্থার ছবি আঁকতে গেলে কেন তা একখানা ত্রিভূজের মতো দেখায় ? এই ব্যবস্থায় সামন্তরা কীভাবে জীবিকানির্বাহ করত ?
উত্তর :- ভারতের সামন্ত ব্যবস্থার ছবি আঁকতে গেলে তা একখানা ত্রিভূজের  মত দেখায় কারণ - এই সামন্ত ব্যবস্থায় সবার ওপরে থাকে রাজা। সবার নীচে থাকে সাধারণ জনগণ বা খেটে খাাওয়া মানুষজন। আর তাদের ওপর বেশ কিছু সামন্ত বা মাঝারি শাসক এবং তাদের ওপরে থাকে অল্প কিছু মহাসামন্ত। ফলে এই ব্যবস্থার ছবি ত্রিভূজের মাথাা থেকেে নীচ অবধি ক্রমশ চওড়া হয়ে গেছে বলে ত্রিভূজের  মত দেখায়। রাজা থেকে জনগণ অবধি রাজস্ব ও শাসনের এই স্তরে স্তরে ভাগ হয়েে যাওয়াকে সামন্ত ব্যবস্থা বলে।
             সামন্ত ব্যবস্থায় সামন্ত ও মহাসামন্তদের মধ্যে সবসময় যুদ্ধ-ঝগড়া লেগেই থাকত। সবাই নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ব্যস্ত ছিল। অনেকসময় তারা একসঙ্গে জোট বেঁধে রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত। রাজার ক্ষমতাকে তারা অনেকসময় অস্বীকার করত, মানতে চাইত না। এর ফলে সেইসময় রাজশক্তির ক্ষমতাকে তার প্রভাব পড়ত। সামন্ত নেতাদের অত্যাচারে গ্রামের স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা নষ্ট হয়েছিল।

প্রশ্ন :- পাল ও সেন যুগের বাংলার বাণিজ্য ও কৃষির মধ্যে তুলনা করো।
উত্তর :- পাল ও সেন যুগের বাংলার অর্থনৈতিক জীবনের মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। প্রতি  গ্রাম  বাস্তু, কৃষিজমি ও গোচারণ এই তিনভাগে বিভক্ত ছিল। গ্রাম্যপথ, পুকুর সর্বত্রই ছিল। গ্রামবাসীর প্রয়োজনীয় প্রায়  যাবতীয় জিনিসপত্রই গ্রামে তৈরি হত। শহর, নগরেরও সেই যুগে অভাব ছিল না। সেই যুগে বাংলার অর্থনীতিতে বাণিজ্যের গুরুত্ব ক্রমশই  কমে এসেছিল। আরব বণিকদের অত্যাচারে বাংলার বণিকরাা পিছু হটেছিল। সেই যুগে বাণিজ্যের  অবনতির সঙ্গে  সঙ্গে সোনারূপার ব্যবহার কমে যায়। তার ফলে কড়ি হয়ে গিয়েছিল বেচাকেনার প্রধান মাধ্যম।
            পালযুগে ও সেন যুগে পাল রাজারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ভূমি দান করতেন এবং সেন রাজারা ব্রাহ্মণদের ভূমি দান করতেন। জমিতে মূল অধিকার ছিল রাষ্ট্রের বা রাজাদের তবে কৃষকদের সেই আমলে অবহেলা করা হত না। রাজারা উৎপন্ন ফসলের ৬ ভাগের ১ ভাগ কৃষকদের কাছ থেকে কর নিতেন। নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহারের জন্য ফুল, ফল, কাঠ কৃষকদের কাছ থেকে নিতেন। বণিকরাও বাদ ছিলনা, তারাও রাজাকে কর দিত। প্রজারা আত্মরক্ষার তাগিদে রাজাকে কর দিত।

প্রশ্ন :- পাল আমলের বাংলার শিল্প ও স্থাপত্যের কী পরিচয় পাওয়া যায় তা লেখো।
উত্তর :- পালযুগে বাংলার শিল্প ও স্থাপত্যের এক অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছিল। পালরাজাগণের সাহায্যেই ওদন্তপুরী, বিক্রমশীল ও সোমপুরী মহাবিহারগুলি নির্মিত হয়েছিল। বিক্রমশীল মহাবিহারে মোট ১০৭ টি মন্দির এবং  ৬  টি মহাবিদ্যালয় ছিল। পালযুগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। মন্দিরের গায়ে পাথরের ফলক থাকত। এই সকল মঠের নির্মাণ পদ্ধতি সে যুগের স্থাপত্য কৌশলের পরিচায়ক। সোমপুরী মহাবিহারের ভগ্নাবশেষ রাজশাহি জেলায় আবিষ্কৃত হয়েছে। পালযুগে স্তূপ, মঠ, মন্দিরের নির্মাণকৌশল ছিল বিভিন্ন ধরনের। এই যুগে নির্মিত কয়েকটি মূর্তি পাওয়াা গিয়েছেে। এগুলির গড়ন দেখলে পালযুগের ভাস্কর্য শিল্পের উন্নতির কথা জানা যায়। ধীমান ও তাঁর পুত্র বীতপাল ছিলেন সে যুগের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর, চিত্রশিল্পী  ও  ধাতুমূর্তি শিল্পী। ভাস্কর্যের মধ্যে পোড়ামাটির শিল্পসামগ্রীী ছিল। এগুলিি ছিল শিল্পের প্রতীক। এগুলিতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, সমাজজীবন, ধর্মবিশ্বাসের  ছবি ফুটে উঠেছে।

প্রশ্ন :- পাল ও সেন যুগে সমাজ ও ধর্মের পরিচয় দাও।
উত্তর :- পাল ও সেন যুগে বাংলায় সমাজের সর্বাপেক্ষা উল্লেেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল বিভিন্ন জাতির উদ্ভব। পালরাজারা ব্রাহ্মণ ছিলেন না, তাঁরা  ছিলেন বৌদ্ধধর্মেে বিশ্বাসী। সমাজে সাধারণ মানুষরা মোটামুটি সচ্ছল ছিল। ভূমিহীন ব্যক্তি ও শ্রমিকের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। একাদশ শতকের শেষদিকে উত্তরবঙ্গে যে কৈবর্ত  বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল তা নিঃসন্দেহে নিম্নশ্রেণির মধ্যে  সামাজিক প্রতিবাদের দিকচিহ্ন হিসেবে আজও স্মরণীয়।
          সেনরাজারা কিন্তু ব্রাহ্মণ ধর্মকেই প্রাধান্য দিতেন। ব্রাহ্মণ্যধর্মের মধ্যে বৈদিক ধর্ম ও পৌরাণিক ধর্মের মিশ্রণ ছিল। স্ত্রীলোকেরা নানারকম ব্রত, উপবাস পালন করত। ইন্দ্র, অগ্নি, কুবের সূর্য, গঙ্গা, যমুনা, শিব, দুর্গা, কালী পুজো করা হত। ব্রাহ্মণরা অন্যান্য সবার কাজ করতে পারতেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ ছাড়া তাঁদের কাজ কেউ করতে পারত না। ব্রাহ্মণরা সমাজের সমস্ত সুবিধা ভোগ করতেন। সেনযুগে সমাজে আদিবাসী উপজাতি মানুষদের কথাও জানা যায়।
           সেনরাজাদের আমলে গ্রাম্য শাসনব্যবস্থার অবনতি ঘটেছিল। সেইসময় রাষ্ট্র অসংখ্য ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত ছিল। সেইসময় সমাজ চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যথা - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।

প্রশ্ন :- নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ দাও।
উত্তর :- বর্তমানে বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনা জেলার অন্তর্গত বড়গাঁও গ্রামে (রাজগিরের কাছে) নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল। এশিয়ার বৃহত্তম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষায়তন হিসেবে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ছিল দেশবিদেশে। চিন, কোরিয়া প্রভৃতি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বহু ছাত্র শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে এখানে আসত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দশ হাজার ছাত্র  লেখাপড়া করত। শোনা যায় যে, এই মঠটি ছিল ছয়তলা এবং এর মধ্যে তিনটি পাঠাগার ছিল। ছাত্রদের অধ্যাপনার জন্য ১০০ টি কক্ষ ছিল। শীলভদ্র নামে এক বা‌ঙালী পন্ডিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন। পড়াশোনার জন্য এখানে ছাত্রদের কোন ব্যয়ভার গ্রহণ করতেে হত না। অধ্যয়নরত ছাত্রদের জামাকাপড়, বিছানাপত্র, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব হত না, কারণ চাইবার আগেই তারা তা পেয়ে যেত। হিউয়েন সাঙ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দু-বছর পঠনপাঠন করেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যাচর্চা   ও গ্রন্থাগারগুলিতে পুঁথির সংগ্রহ দেখে বিস্মিত হন। তাঁকে অনুসরণ করে চিন ও কোরিয়া থেকে প্রায় এগারো জন পন্ডিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করতে এসেছিলেন।

প্রশ্ন :- ভারতীয় সভ্যতা প্রসারে অতীশ দীপঙ্করের ভূমিকা কেমন ছিল ?
উত্তর :- একাদশ শতাব্দীতে তিব্বতের রাজার আমন্ত্রণ পেয়ে ভারতীয় বৌদ্ধ পন্ডিত শ্রীঅতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে যান। বৌদ্ধধর্ম প্রচার  করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। তিনিই ছিলেন সে যুগের ভারতের বিক্রমশীল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ। দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান তিব্বতে 'অতীশ দীপঙ্কর' নামে পরিচিত হন। তিনি তিব্বতের নানা স্থানে হীনযান বৌদ্ধধর্ম প্রচার  করেন। তাঁর চেষ্টাতেই ধর্মের পাশাপাশি ভারতীয় সভ্যতাা-সংস্কৃতিও তিব্বতে প্রভাব বিস্তার করেছিল।
          তিনি প্রায় দুশোটি বৌদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর চেষ্টায় অনেকগুলি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ তিব্বতী ভাষায় রচিত হয়। দীপ‌ঙ্করের গ্রন্থগুলির মধ্যে 'ত্যাঙ্গুর' ও 'ক্যাঙ্গুর' গ্রন্থ দুটি সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। জীবনের শেষ দিনেও তিনি ধর্মগ্রন্থ রচনা করে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। তিব্বতে তেরো বছর কাটাবার পর তিনি সেখানে দেহরক্ষা করেছিলেন। তাঁকে সমাধি দেওয়া হয় তিব্বতের রাজধানী লাসার অনতিদূরে। সেখানে তিব্বতবাসী তাঁকে এখনও বুদ্ধের অবতাররূপে পূজা করে।

********************************
▪️File Name  :- সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয়                                          অধ্যায় ৫
▪️Language  :- বাংলা
▪️Size  :- 95 kb
▪️Download Link  :-

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ